ব্যবহারকারীর জন্য ক্ষতিকারক জেনেও চুপ থেকেছে ফেসবুক

নিজেদের সেবাগুলো ব্যবহারকারীর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে জেনেও চুপ থেকেছে ফেসবুক
রয়টার্স

ফেসবুকের ফাঁস হওয়া নথির সূত্র ধরে চলতি সপ্তাহে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। প্রতিবেদনগুলোতে দেখা যায়, নিজেদের সেবাগুলো ব্যবহারকারীর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে, তা ভালো করেই জানত ফেসবুক। তবে জানলেও সমাধানে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনগুলোর উল্লেখ করে সিএনএন লিখেছে, প্রতিবেদনগুলো থেকে অনেক কিছুই বের করা সম্ভব। তবে যে বিষয়টি নজর কাড়ে তা হলো, কতটা নির্লজ্জভাবে ফেসবুকের সমস্যাগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে সচরাচর এমন ভাষা ব্যবহারের নজির মেলে না। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো থেকে কয়েকটি ইস্যু এখানে তুলে ধরা হলো।

তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইনস্টাগ্রামের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদনে ফেসবুকের নিজস্ব গবেষণার উল্লেখ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। ২০১৯ সালের ফেসবুকের গবেষণা প্রতিবেদনটিতে লেখা ছিল, ‘প্রতি তিন তরুণীর একজনকে নিজের শরীর সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরিতে সাহায্য করেছি আমরা।’

আরেক জায়গায় লেখা ছিল, মানসিক উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বাড়ানোর জন্য তরুণেরা ইনস্টাগ্রামকে দায়ী করেন। প্রায় সবার মধ্যে এমন প্রতিক্রিয়া ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। ফেসবুক প্রায়ই বাইরের গবেষণা প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলে থাকে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার এবং বিষণ্নতার মধ্যে সম্পর্ক বেশ কম। অথচ প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।

ইনস্টাগ্রামের হেড অব পাবলিক পলিসি কারিনা নিউটন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা হয়তো নেতিবাচক অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। তবে অ্যাপটি প্রান্তিক মানুষের মতপ্রকাশের এবং বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে। নিউটনের ভাষায়, ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনগুলো তরুণদের জটিল সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করার অঙ্গীকারই প্রকাশ করে।

ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ বারবার প্রকাশ্যে বলেছেন, কোটি কোটি ব্যবহারকারীকে সমান সুযোগ দিয়েছে ফেসবুক। তবে প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাকারবার্গের সে দাবি সত্য নয়। কারণ, প্ল্যাটফর্মটি রাজনীতিবিদ, তারকা এবং অন্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের বরাবরই বিশেষ সুবিধা দিয়ে এসেছে।

প্রতিবেদনটির এক জায়গায় লেখা ছিল, ‘প্রকাশ্যে আমরা যা বলছি, আদতে তা করছি না। আমাদের কমিউনিটির বাকি সদস্যদের তুলনায় এই মানুষদের (গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) নীতিমালা ভেঙেও কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না।’

ফেসবুক মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে তখন বলেন, এমন চর্চার সমালোচনা হতে পারে, তবে গুরুত্বপূর্ণ কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়া হয়।

আবার ২০১৮ সালে মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, বন্ধু-স্বজনদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে এবং নিউজফিডে প্রাতিষ্ঠানিক কনটেন্ট কমাতে ফেসবুকের অ্যালগরিদমে পরিবর্তন আনা হয়। তবে এতে ফল উল্টো হয়েছিল বলে জানানো হয় ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে। আর সে ব্যাপারে ফেসবুক কর্মীদের সতর্কও করা হয়েছিল।