মঙ্গল থেকে যেভাবে সেলফি পাঠাল চীনা রোবট জুরং

মঙ্গলের পৃষ্ঠে তিয়ানওয়েন-১ ল্যান্ডার এবং খানিক দক্ষিণে জুরং রোভার। ছবিটি নাসার স্যাটেলাইটে যুক্ত ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার হাইরাইজ ক্যামেরা দিয়ে তোলানাসা/জেপিএল/ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা
জুরং মানুষ হলে ফেসবুকে তার একটি অ্যাকাউন্ট থাকত। সকাল-বিকেল ছবি পোস্ট করত। আমরাও সে ছবি দেখে হালহকিকত জানতাম। লাভ, লাইক, মাঝেমধ্যে হাহা দিতাম।

কিন্তু না, জুরং একটি রোভার কিংবা রোবটযান, যে কিনা নিজে নিজে চলে। গত মে মাসে মঙ্গলে অবতরণ করেছে। এখন নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে মানুষের আশার বিশাল বোঝা বহন করে মঙ্গলপৃষ্ঠে চরে বেড়াচ্ছে জীবনের খোঁজে।

ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট নেই বলে খুব হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সুদূর মঙ্গল গ্রহ থেকে চীনের জুরং রোভার ঠিকই একগুচ্ছ নতুন ছবি পাঠিয়েছে। সেখানে একটি ‘সেলফি’ও আছে। তবে নাসার পার্সিভারেন্সের মতো জুরংয়ের দীর্ঘ বাহু তো নেই। সেলফি সে তোলে কী করে?

এই সেই সেলফি। বাঁয়ে জুরং, যেন ডানা মেলে দাঁড়িয়ে আছে। আর ডানে তিয়ানওয়েন-১ নভোযানের ল্যান্ডার
সিএনএসএ

বিবিসি লিখেছে, মঙ্গলের পাথুরে লাল মাটিতে তারহীন ক্যামেরা রেখে খানিক দূরে এসে দাঁড়ায় জুরং। এরপর ক্লিক ক্লিক। ছবিগুলো বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে পাঠায় রোভার।

জুরংকে যে নিঃসঙ্গ বলা হচ্ছে, তা কিন্তু পুরোপুরি ঠিক নয়। ছবিতে দেখুন, ঠিক ডানে ছয় চাকার রকেট ইঞ্জিনচালিত আরেকটি বাহন দেখা যাচ্ছে। চীনের তিয়ানওয়েন-১ নভোযানের ল্যান্ডার এটি। এতে চড়েই আলতোভাবে মঙ্গলে অবতরণ করে জুরং। দুটোর গায়েই চীনের লাল পতাকা সাঁটা।

শুধু বাহনটির আলাদা একটি ছবিও পাঠিয়েছে জুরং। সিঁড়িসদৃশ অংশটির সাহায্যেই যন্ত্রটির ভেতর থেকে মঙ্গলের মাটিতে নেমেছিল জুরং, চাকার দাগও রেখে গেছে।

ল্যান্ডারের সিঁড়িসদৃশ অংশটির সাহায্যেই মঙ্গলের মাটিতে নেমেছিল জুরং
সিএনএসএ

তৃতীয় ছবিতে অবতরণের জায়গা থেকে ফাঁকা প্রান্তর দেখা যাচ্ছে। যত দূর চোখ যায়, কেবলই লাল মাটি। মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের ওই অঞ্চলের নাম ইউটোপিয়া প্ল্যানিশিয়া।

রোভার অভিযানের সাফল্য উদযাপনে ছবিগুলো প্রকাশ করেছে চীনের মহাকাশ সংস্থা চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনএসএ)। বিজ্ঞানীদের আশা, লাল গ্রহে অন্তত ৯০ সোল বা মঙ্গলের দিন কাটাবে জুরং। এ সময় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে।

মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের অঞ্চলটির নাম ইউটোপিয়া প্ল্যানিশিয়া
সিএনএসএ

জুরং দেখতে অনেকটা ২০০০ সালের দিকে নাসার তৈরি স্পিরিট এবং অপরচুনিটি রোভারের মতো। এর ওজন ২৪০ কেজির আশপাশে। মাঝবরাবর খুঁটির মাথায় ছবি তোলার জন্য আছে ক্যামেরা, পথনির্দেশনার জন্যও ব্যবহার করে সেটি। আর গোটা পাঁচেক যন্ত্রপাতি মঙ্গলের পাথুরে ভূমির খনিজ উপাদান পরীক্ষা করে দেখবে, সে সঙ্গে আবহাওয়া এবং পরিবেশ সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করবে।

ল্যান্ডার থেকে বের হওয়ার আগে এবং পরে (ডানে), জুরং থেকে তোলা ছবি
সিএনএসএ

নাসার কিউরিসিটি ও পার্সিভারেন্স রোভারের মতো জুরংয়ের পাথরে আঘাত করার জন্য একটি লেজার টুল আছে। সেটি দিয়ে পাথুরে মাটির রসায়ন বুঝতে চেষ্টা করবে। আর ভূগর্ভে বরফ আছে কি না, জানার জন্য একটি রাডার আছে এতে।

গত বৃহস্পতিবার মঙ্গলের কক্ষপথ থেকে তোলা জুরংয়ের একটি রঙিন ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা। হাইরাইজ নামের ক্যামেরাটি মঙ্গলের কক্ষপথে আবর্তনরত নাসার মার্স রিকনোসেন্স অরবিটার উপগ্রহে যুক্ত। ছবিতে তিয়ানওয়েন-১ নভোযানের ল্যান্ডার অবতরণের রকেট ইঞ্জিনের ব্লাস্টের দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। দক্ষিণের বিন্দুটি জুরং রোভার।

মঙ্গলের পৃষ্ঠে তিয়ানওয়েন-১ ল্যান্ডার এবং খানিক দক্ষিণে জুরং রোভার
নাসা/জেপিএল/ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা