মঙ্গলের বুকে যে কম্পিউটার চলে

শিল্পীর চোখে মঙ্গলের বুকে পারসেভারেন্স রোভার। এখন অবশ্য সত্যিই সেখানে চরে বেড়াচ্ছে
নাসা

নতুন ক্যামেরা কিনলে যা হয়, দিনরাত ক্লিক ক্লিক। নাসার পারসেভারেন্স রোভারের ঠিক সেই দশা। মঙ্গলে অবতরণ করেছে ১০ দিনও পেরোয়নি। এরই মধ্যে লাল গ্রহের হাজার ছয়েক ছবি তুলে পাঠিয়েছে পৃথিবীতে।

রোবটযানটির অবশ্য কোনো দোষ নেই। কারণ, মঙ্গলে কখনো জীবনের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা জানতেই পারসেভারেন্সের মঙ্গল-অভিযান। সেই সঙ্গে মঙ্গলের নুড়ি ও মাটি সংগ্রহ করতে হবে। আর প্রতিটি ধাপের ছবি তুলে পাঠাতে হবে পৃথিবীতে। এখন নিজের কাজটা যদি ঠিকঠাক না করে তো এত এত টাকা খরচ করে পাঠিয়ে লাভ কী হলো!

পারসেভারেন্সের ‘মস্তিষ্ক’

পারসেভারেন্স থেকে তোলা ছবি নাসা যে ওয়েবসাইটে দিচ্ছে, সেখানে একটি মজার তথ্য দেওয়া আছে। আর তা হলো বাক্সে আবদ্ধ পারসেভারেন্সের মস্তিষ্ক। রোভারের তো আর মানুষের মতো মস্তিষ্ক হয় না। রোভারের মস্তিষ্ক হলো কম্পিউটার। সেই কম্পিউটার মডিউলকে বলা হয় রোভার কম্পিউট এলিমেন্ট (আরসিই)। পারসেভারেন্সে একই ধরনের দুটি আরসিই আছে। এক মস্তিষ্ক বিকল হলে যেন অতিরিক্ত মস্তিষ্ক থেকে কাজ চালিয়ে নিতে পারে।

নাসার মঙ্গল ২০২০ অভিযানের ওয়েবসাইটে পারসেভারেন্সের ‘মস্তিষ্ক’
নাসা

পারসেভারেন্সের মস্তিষ্ক কিন্তু বেশ পুরোনো প্রযুক্তির। রোভারটি চলে ২৫৬ মেগাবাইট র‍্যাম, ২ গিগাবাইট ডেটা স্টোরেজ এবং ২০০ মেগাহার্টজ গতির প্রসেসরে। ১৯৯৮ সালে বাজারে যে আইম্যাক কম্পিউটার ছেড়েছিল অ্যাপল, তাতে এ ধরনের প্রসেসর ব্যবহার করা হতো। এখন যেকোনো স্মার্টফোনে, এমনকি ভালো ব্র্যান্ডের স্মার্টওয়াচেও এর চেয়ে ঢের বেশি গতির প্রসেসর আর র‍্যাম ব্যবহার করা হয়।

এত টাকা খরচ করে এমন পুরোনো প্রযুক্তির কম্পিউটার কেন মঙ্গলে পাঠানো হলো, তা নিয়ে ঈদের পর আন্দোলন হবে কি না, জানি না। আপাতত চলুন কারণ খুঁজে দেখি।

নাসার রোভারে এমন পুরোনো কম্পিউটার কেন

ওয়েব ঘেঁটে এর দুটি কারণ পাওয়া যায়। প্রথমত, মহাকাশ নিয়ে যে প্রকৌশলীদের কারবার, তাঁরা সাধারণত দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য সুপরিচিত (এবং পরীক্ষিত) কম্পিউটার যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভর করতে চান। নতুন মডেলের কোনো প্রসেসর পাঠিয়ে বছর দুয়েক পর বিকল হয়ে গেলে বড় বিপদ। তখন পুরো বিনিয়োগই জলে গেল। এর চেয়ে পুরোনো প্রসেসর দিয়েই বছরের পর বছর চললে বরং লাভ।

তা ছাড়া রোভারে বসে এলিয়েনরা তো আর জয়স্টিক নাড়িয়ে ভিডিও গেম খেলবে না। প্রসেসরের কাজ বলতে গোটা কয়েক ক্যামেরায় ছবি তোলা, দিক ঠিক করে চলাচল করা, কলকবজার নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ, পৃথিবীতে যোগাযোগ, আর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এর জন্য সাম্প্রতিক মডেলের প্রসেসরের প্রয়োজনও তো নেই।

সব মিলিয়ে ২৩টি ক্যামেরা থাকছে পারসেভারেন্সে। এর মধ্যে ১৯টি মূল রোভারে যুক্ত
নাসা

দ্বিতীয় কারণটি বোধ হয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষার জন্য প্রসেসরগুলোয় আলাদা সুরক্ষার ব্যবস্থা করেই পাঠায় নাসা। পুরোনো প্রসেসরগুলোর তুলনায় নতুন সিমোস (কমপ্লিমেন্টারি মেটাল-অক্সাইড-সেমিকন্ডাক্টর) প্রযুক্তির প্রসেসরগুলোর স্থায়িত্ব কম। আরেক গ্রহে পাঠানো রোভারে কেন তেমন প্রসেসর পাঠাবেন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা! পারসেভারেন্সের প্রসেসর আর গত মঙ্গল-অভিযানের কিউরিওসিটি রোভারের প্রসেসর একই ধরনের।