মাইক্রোসফটের ওপর নাখোশ ইলন মাস্ক

ইলন মাস্ক
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের নানা বিষয় নিয়ে নিজের মতামত দিয়ে আসছেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর প্রতিষ্ঠান ‘ওপেনএআই’ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিলেন। সম্প্রতি তাঁর ওই প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি করতে যাচ্ছে।

এ চুক্তির আওতায় ‘জিপিটি-৩’ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল নিয়ে কাজ করবে ওপেনএআই। টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক বিষয়টি ভালোভাবে দেখছেন না। সম্প্রতি একজন টুইটার ব্যবহারকারী ইলন মাস্ককে টুইটারে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর জবাবে টেসলার প্রধান নির্বাহী বলেন, ওপেনএআই যা করেছে, তা তাদের কাজের বিপরীত। আসলে ওপেনএআইকে গ্রাস করেছে মাইক্রোসফট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। বেশ কয়েক বছর ধরেই তারা মানুষের ভাষা নকল করার প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছে। ২০১৮ সালে জিপিটি-১ নামের একটি মডেল প্রকাশ করে তারা। গত বছর এসেছে জিপিটি-২।

সম্প্রতি ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ একটি নিবন্ধ লিখে আলোচনায় আসে জিপিটি-৩ নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল। এটি ছাড়া হয় গত জুলাইয়ে। এরপর অনেকেই মডেলটি পরীক্ষা করে দেখেছেন। আলোচনায় এসেছে বারবার। খবরের শিরোনাম হয়েছে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর নিবন্ধটি আলোচনার নতুন খোরাক জুগিয়েছে। ‘তুমি কি ভয় পাচ্ছ, মানুষ?’ শিরোনামে ৮ সেপ্টেম্বর উপসম্পাদকীয় প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’।

২০১৫ সালে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠার সময় উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন ইলন। এতে অবশ্য মাইক্রোসফটও যুক্ত ছিল। ২০১৮ সালে ওপেনএআই বোর্ড থেকে সরে দাঁড়ান টেসলা প্রধান। ওই সময় ওপেনএআইয়ের পক্ষ থেকে ইলন মাস্কের বোর্ড থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হয়, ইলন মাস্ক আর বোর্ডে থাকছেন না, তবে তিনি এখানে দান ও পরামর্শের কাজ চালিয়ে যাবেন। যেহেতু টেসলা এআই বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, তাই ভবিষ্যতে সংঘাত এড়ানো যাবে।’

আরও পড়ুন

ওপেনএআইয়ের সঙ্গে ইলন যুক্ত থাকলেও অধিকাংশ সময় তাদের সমালোচনা করেছেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাস্ক বলেন, ওপেনএআইয়ের আরও উন্মুক্ত হওয়া উচিত। প্রতিষ্ঠানটিতে তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এবং এর কার্যক্রম সম্পর্কে খুব কম জানতে পারেন তিনি। মাস্ক প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক ডারিও আমোদির কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন।

ওপেনএআইয়ের সঙ্গে অংশীদারত্ব প্রসঙ্গে মাইক্রোসফট এক ব্লগ পোস্টে বলেছে, জিপিটি-৩–এর বিশেষ লাইসেন্সের জন্য তাঁরা ওপেনএআইয়ের সঙ্গে জোট বাঁধছে। এতে কারিগরী উদ্ভাবনের পাশাপাশি গ্রাহকদের উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসেবা দেওয়া যাবে। এ ছাড়া নতুন সেবা ও উন্নত ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরিতে কাজ করা সম্ভব হবে।
ইলন মাস্ক বরাবরই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। ব্যবসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী, মাস্ক সতর্ক করে বলেছিলেন, পারমাণবিক যুদ্ধের চেয়েও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিপজ্জনক হতে পারে। তাঁর অন্যতম উদ্বেগ হচ্ছে, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবকর্মীর জায়গা নিয়ে নেবে। এ ছাড়া স্কাই নেটের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একসময় সিদ্ধান্ত নেবে, মানুষের আর কোনো প্রয়োজন নেই।

বিজনেস ইনসাইডারকে মাস্ক বলেছেন, ‘এক দশক ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপদের কথা বলে যাচ্ছি।’

বিল গেটস ও ইলন মাস্ক
ছবি: রয়টার্স

বিজনেস ইনসাইডারকে মাস্ক বলেছেন, ‘এআই কোথায় যাচ্ছে, সে সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ জানানো উচিত। যারা বেশি স্মার্ট তাদেরই এআই নিয়ে বেশি ভুল করতে দেখি। কারণ, তারা ভাবতে পারে না, তাদের চেয়ে কম্পিউটারের বুদ্ধি বেশি হতে পারে। তাদের যুক্তির এখানেই বড় ত্রুটি। তারা নিজেদের যতটাই স্মার্ট ভাবে, আসলে তারা তার চেয়ে বোকা বেশি।’

এর আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে মাস্কের সঙ্গে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের বাদানুবাদও হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ইলন মাস্ক আর মার্ক জাকারবার্গের অবস্থান বরাবরই বিপরীতমুখী।

ফেসবুক লাইভে এক ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে মার্ক বলেন, যাঁরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তাঁরা আসলে দায়িত্বজ্ঞানহীন। নাম উল্লেখ না করলেও তাঁর এ বক্তব্য সরাসরি ইলন মাস্কের বিরুদ্ধেই যায়। অন্যদিকে কোনোরকম রাখঢাক ছাড়াই টুইটারে মাস্ক পাল্টা লেখেন, এ বিষয়ে (এআই) মার্ক জাকারবার্গের জ্ঞান খুবই সীমিত।

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই ইলনের। বৈদ্যুতিক গাড়ি, টিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরস্পরকে সমালোচনা করে আসছেন তাঁরা।