মেয়েদের জন্য প্রোগ্রামিং

মেয়েদের জন্য প্রোগ্রামিং কর্মশালায় প্রোগ্রাম নিয়ে মগ্ন একজন ছাত্রী
মেয়েদের জন্য প্রোগ্রামিং কর্মশালায় প্রোগ্রাম নিয়ে মগ্ন একজন ছাত্রী

কম্পিউটার ল্যাবে স্কুল-কলেজের একঝাঁক শিক্ষার্থী। প্রত্যেকের সামনে একটি করে কম্পিউটার। সেসব কম্পিউটারে তারা কী কী সব সংকেত লিখে চলেছে। মাঝেমধ্যে আটকে যাচ্ছে। কখনো নিজেরা আলাপ করে আর কখনো বা শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করে বাধা পেরিয়ে যাচ্ছে। ক্লাস রুমে আবার একজন নয়, চারজন শিক্ষক! শিক্ষার্থীরা পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষায় সংকেত বা কোড লেখার ফাঁকে ফাঁকে লিনাক্সের টার্মিনালে বিভিন্ন কমান্ড দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে অনেকের মধ্যে আবার হ্যাকার হ্যাকার ভাবও চলে এসেছে। যেসব জিনিস হলিউডি সিনেমায় দেখেছে, অনেকটা ও রকম কাজ নিজেরা করতে পেরে তারা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা দিন কাটিয়ে দেয় ওরা। চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সবাই কিন্তু মেয়ে! কারণ, এই প্রোগ্রামিং কর্মশালাটি আয়োজন করেছিল কোড ইট গার্ল নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। পৃষ্ঠপোষক ছিল হাফিযা খাতুন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। কর্মশালার পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিল দ্বিমিক কম্পিউটিং। আয়োজনের সঙ্গে আরও ছিল মাসিক কিশোর আলো, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)। কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে।

কোড ইট গার্লের তিন উদ্যোক্তা (বাঁ​ থেকে) রিজভী বিন ইসলাম, আফরীন হোসেন ও মিরফাত শারমিন
কোড ইট গার্লের তিন উদ্যোক্তা (বাঁ​ থেকে) রিজভী বিন ইসলাম, আফরীন হোসেন ও মিরফাত শারমিন

এ উদ্যোগ শুধু মেয়েদের জন্যই কেন? জবাব দেন কোড ইট গার্লের অন্যতম উদ্যোক্তা আফরীন হোসেন বলেন, ‘যেকোনো ক্ষেত্রে সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখতে নারী-পুরুষ সবারই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কিন্তু আমরা যদি আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দিকে তাকাই, তবে দেখা যায়, খুব কমসংখ্যক মেয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ে এবং তার মধ্যেও একটা খুব ছোট অংশ তথ্যপ্রযুক্তিশিল্প খাতে কাজ করতে আসে। এর একটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে মেয়েদেরকে ছোট থেকেই প্রোগ্রামিং শিখতে সাহায্য করা এবং উৎসাহিত করা। পাশাপাশি এ দক্ষতার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন পেশা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা। তাই আমরা তৈরি করি কোড ইট গার্ল।’
কোড ইট গার্লের কাজ কী হবে? প্রশ্নটি রাখি আরেক উদ্যোক্তা মিরফাত শারমিনের কাছে। মিরফাত বলেন, ‘আমরা মূলত একটি অনলাইন নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করছি, যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়েরা যুক্ত হবে। আমাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে আমরা কাজ চালিয়ে যাব। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন টিউটোরিয়াল, ব্লগ, বই, তথ্য এবং প্রশ্নের উত্তর দিয়ে মেয়েদের প্রোগ্রামিং শিখতে সাহায্য করব। এ ছাড়া বছরে কয়েকটি প্রোগ্রামিং কর্মশালা, প্রোগ্রামিং আড্ডা ও ওয়েবভিত্তিক সেমিনারের আয়োজন করার পরিকল্পনা আছে। দেশ ও দেশের বাইরে যেসব নারী কম্পিউটার বিজ্ঞান বা সফটওয়্যার তৈরির সঙ্গে জড়িত, তাঁদেরও এ জায়গায় আমরা নিয়ে আসছি। যাতে নতুন প্রজন্মের মেয়েরা তাঁদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পায়।’
কোড ইট গার্লের উদ্যোক্তারা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে এর ফেসবুক পেজে সাড়ে তিন হাজার ও গ্রুপে প্রায় ৩৫০ সদস্য যুক্ত হয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
‘আসলে সবাই চাইছে মেয়েরা কম্পিউটার বিজ্ঞানে এগিয়ে আসুক। শিখতে হয়তো আমরা উদ্বুদ্ধ করব এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে সাহায্য করব। কিন্তু আসল শেখার কাজটা মেয়েদেরই করতে হবে।’ এমনই মনে করেন কোড ইট গার্লের আরেক উদ্যোক্তা রিজভী বিন ইসলাম।

কোড ইট গার্লে যুক্ত হওয়ার ঠিকানা: http://codeitgirl.ogr, www.facebook.com/groups/292738210923130,  www.facebook.com/codeitgirl