যে মাটির বাড়ি আমরা হাতে বানাই, তা ওরা তৈরি করে থ্রিডি প্রিন্টারে

কাঁচামাল এবং নকশায় পূর্বপুরুষদের তৈরি বাড়ির সঙ্গে মিল আছেওয়াস্প

গত বছরের জুলাইয়ের ঘটনা। ইতালির ছোট্ট শহর মাসা লোমবার্দায় ভূমি থেকে ক্রমেই অদ্ভুত আকৃতি জেগে উঠতে থাকে। বড় বড় যন্ত্রপাতির সঙ্গে যুক্ত বিশেষায়িত নজল থেকে স্তরে স্তরে কাদামাটি সাজিয়ে কাঠামোগুলো গঠন করা হয়। আর কাদামাটি আনা হয় নিকটবর্তী নদী থেকে।

পুরো কাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে সেটি চমৎকার গম্বুজের আকৃতি পায়। আদতে সেগুলো হলো থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি বিশ্বের প্রথম মাটির বাড়ি। মূল কাজ ২০০ ঘণ্টার হলেও, থেমে থেমে কয়েক মাস ধরে তা করা হয়।

ভেতরটায় জায়গা একদম কম নয়, এটা বসার ঘর
ওয়াস্প

নির্মাণশিল্পে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির সম্ভাবনার বাস্তবায়ন বলা যেতে পারে ‘টেকলা’ নামের প্রকল্পটিকে। সম্ভাবনা থাকলেও এত দিন থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি খুব বেশি নির্মাণ প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়নি।

নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে একটি সেতু এবং ফ্রান্সের নান্তে একটি বাড়ি বানানো হয়েছিল প্রযুক্তিটির সাহায্যে। তবে টেকলা প্রকল্পে কাঁচামাল হিসেবে পুরোপুরি নির্ভর করা হয় মাটির ওপর। অর্থাৎ যেখানে ইচ্ছা, সেখানে প্রিন্টার পৌঁছানো সম্ভব হলে স্থানীয় মাটি ব্যবহার করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব। বাড়তি কিছুর প্রয়োজন নেই। কাঁচামালের খরচও তুলনামূলক কম।

নিজেদের তৈরি মাটির বাড়ির ভেতরে ওয়াস্পের সিইও মাসিমো মরেত্তি এবং স্থপতি মারিও কুচিনেলা
ওয়াস্প

ইতালীয় থ্রিডি প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান ওয়াস্প এবং স্থপতি মারিও কুচিনেলার যৌথ প্রকল্প এটি। তাঁরা পুরোনো নির্মাণসামগ্রীর সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মিশেল চেয়েছিলেন। মানুষ হাজার বছর ধরে ঘর তৈরিতে মাটি ব্যবহার করে আসছে। মারিও কুচিনেলা বলেছেন, ‘পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় পাওয়া যায় এমন উপাদানের সঙ্গে প্রযুক্তির বিবর্তনের মিশ্রণ এটি।’

বড় বড় যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত বিশেষায়িত নজল থেকে থরে থরে কাদামাটি সাজিয়ে তৈরি হয় বাড়ি
ওয়াস্প

বাড়িটির আয়তন সব মিলিয়ে ৬০ বর্গমিটার। সে বাড়িতে রান্নাঘরসহ একটি ‘লিভিং জোন’ এবং একটি ‘নাইট জোন’ আছে। কিছু আসবাবও স্থানীয় মাটি থেকে বানানো হয়েছে কিংবা অন্য কাঠামোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজের মাথায় প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের জন্য কাচ (স্কাইলাইট) থাকছে। তবে ঋতু বুঝে তাতে পরিবর্তন আনার সুযোগ আছে।

কুচিনেলা বলেছেন, প্রকল্পটির পেছনে বড় কারণ ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকানো। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বৈশ্বিক মোট কার্বন নিঃসরণে নির্মাণশিল্পের ভূমিকা ছিল ৩৮ শতাংশ।

স্তরের পর স্তর সাজিয়ে গড়ে তোলা হয় পুরো কাঠামো
ওয়াস্প

প্রকল্পটির পরবর্তী ধাপ হলো, বহুতল ভবন তৈরি কিংবা স্থানীয় অন্যান্য প্রাকৃতিক কাঁচামালের ব্যবহার যুক্ত করা, যেমন কাঠের মেঝে বা বিম থাকতে পারে।

আর কুচিনেলার জন্য প্রকল্পটি মূলত ‘পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সেতুবন্ধ গড়ার।’ তিনি কেবল পূর্বপুরুষদের আবাসনের কাঁচামালই ব্যবহার করেননি, নকশাতেও মিল রেখেছেন।

সবমিলিয়ে ঘরগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন
ওয়াস্প