রোবট লিখছে, এখন তবে লেখকদের কী হবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরও উন্নত হচ্ছে
ছবি: রয়টার্স

‘তুমি কি ভয় পাচ্ছ, মানুষ?’ শিরোনামে ৮ সেপ্টেম্বর উপসম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’। নিবন্ধটি লিখেছে একটি রোবট। কী লিখতে হবে, কীভাবে লিখতে হবে, কত শব্দে লিখতে হবে—এসব বিষয়ে মানুষের নির্দেশনা তো ছিলই। তবু এমন চমৎকার নিবন্ধ লিখে বিশ্বকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে রোবটটি । এরপরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তবে কী মানব লেখকদের দিন ফুরিয়ে এল?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। বেশ কবছর ধরেই তারা মানুষের ভাষা নকল করার প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছে। ২০১৮ সালে জিপিটি-১ নামের একটি মডেল প্রকাশ করে তারা। গত বছর এসেছে জিপিটি-২। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর নিবন্ধটি লিখেছে জিপিটি-৩ নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল। এটি ছাড়া হয় গত জুলাইয়ে। এরপর অনেকেই মডেলটি পরীক্ষা করে দেখেছেন। আলোচনায় এসেছে বারবার। খবরের শিরোনাম হয়েছে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর নিবন্ধটি আলোচনার নতুন খোরাক জুগিয়েছে।

ঠিক জলবৎ তরলং না হলেও জিপিটি-৩ জটিল কোনো প্রোগ্রাম নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বশেষ প্রযুক্তিও এতে ব্যবহার করা হয়নি। ইন্টারনেট থেকে খবর, উইকিপিডিয়ার লেখা, ফোরাম পোস্টসহ বহু নিবন্ধ ইনপুট দেওয়া হয়েছে এতে।
যেভাবে কাজ করে জিপিটি-৩

জিপিটি-৩-এর কাজের ধরন বুঝতে হলে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির দুটি সাধারণ ধারণা সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো। এর একটি হলো সুপারভাইজড লার্নিং, অপরটি আনসুপারভাইজড লার্নিং।

সুপারভাইজড লার্নিং পদ্ধতিতে ইনপুট দেওয়ার আগে তথ্যগুলোকে নির্দিষ্ট শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এরপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমে কতটুকু ইনপুট দেওয়া হবে, আউটপুট কী হবে—সেসব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমকে শেখানো হয়, ইনপুট দেওয়া তথ্য থেকে কীভাবে ফলাফল বের করে আনতে হবে।

এই পদ্ধতিতে পাওয়া ফলাফল ভালোই বলতে হবে। অনেকটা মানুষের মতো করেই বাক্য, অনুচ্ছেদ, নিবন্ধ লিখতে পারে। তবে সমস্যা হলো, এতে বিশাল তথ্যভান্ডার তৈরি করতে হয়। এরপর সেগুলোকে নির্দিষ্ট শ্রেণিতে ভাগ করতে হয়। বেশ কষ্টসাধ্য কাজ।
তবে মানুষ কিন্তু সুপারভাইজড লার্নিং পদ্ধতিতে জ্ঞান আহরণ করে না। আমরা হাজারো মানুষের সঙ্গে দেখা করি, হাজারো বিষয়ে আলোচনা করি, দেখি-জানি-বুঝি। এরপর প্রয়োজন বুঝে যে জ্ঞান কাজে লাগবে, তা প্রয়োগ করি। অন্যভাবে বললে, আমরা বেশির ভাগ সময় আনসুপারভাইজড পদ্ধতিতে শিখি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে হলে আনসুপারভাইজড লার্নিং পদ্ধতিতে এগোতে হবে বলে মনে করেন অনেকে। এ পদ্ধতিতে আই প্রযুক্তিতে প্রচুর তথ্য ইনপুট দিতে হয়। তবে বাছবিচারের কাজটা করবে যন্ত্র নিজেই। যত তথ্য ইনপুট দেওয়া হবে, যন্ত্র তত শিখবে। এর সবই যে কাজে লাগবে, তা না-ও হতে পারে। তবে যন্ত্র ঠিক করবে কোন কাজে কোন তথ্য ব্যবহার করা হবে। এতে একই এআই সিস্টেমকে একাধিক কাজে লাগানো যাবে।

জিপিটি-৩ শেখে আনসুপারভাইজড পদ্ধতিতে। ভাষা সম্পর্কে যা পায়, তা-ই গ্রহণ করে। ওপেনএআইয়ের গবেষকেরা ইন্টারনেটে পাওয়া বেশির ভাগ লেখাই ইনপুট দিয়েছেন। তা থেকে সাধারণ একটি কাজ করে জিপিটি-৩। আর তা হলো, এক শব্দের পর কোন শব্দটি বেশি যুক্তিযুক্ত, তা নির্ধারণ করা। এআই সিস্টেমটিকে শুধু বলে দিতে হয়, কী লিখতে হবে। চাইলে দু-চার বাক্য দিয়ে শুরুও করিয়ে দিতে পারেন। বাকিটা যন্ত্র নিজেই করে নেবে।

জিপিটি-৩ যা করতে পারে

জিপিটি-৩ নানা ধরনের কাজই করতে পারে। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারে। পারে প্রোগ্রামিং কোড লিখতে। চলচ্চিত্রের কাহিনি সংক্ষেপ করতে পারে। জটিল লেখাকে সরল করে লিখতে পারে। আবার এর উল্টোটাও পারে। এমনকি কবিতাও লিখেছে জিপিটি-৩।

জিপিটি-৩-এর এমন অগ্রগতি সত্ত্বেও অনেক বিশেষজ্ঞ ভিন্নমত পোষণ করেন। বিশেষ করে প্রোগ্রামটি হয়তো ভুল তথ্য প্রচার করবে, প্রশ্নের ভুল উত্তর দেবে, খারাপ ভাষা ব্যবহার করবে, এমন আশঙ্কা করছেন তাঁরা।