শিশুটি এখন রাতের আকাশে তারা দেখতে পারে

রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা সমস্যায় ভুগছিল স্যাম
ছবি : টুইটার থেকে

শৈশবে রাতের আকাশে তারা দেখার ইচ্ছা কাজ করে অনেকের। কিন্তু কানাডার ছোট্ট শিশু স্যামের জন্য রাতের আকাশের তারা দেখা কঠিন ছিল। কারণ, আট বছর বয়সী স্যাম বিরল রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা রোগে ভুগছিল। এটি অন্ধত্বের একটি রূপ, যা জিনগত। আরপিই ৬৫ জিনে পরিবর্তনের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

কানাডার সিক কিডস হাসপাতালের চিকিৎসক এলিস হিওন দেশটির সিটিভি নিউজকে বলেন, ‘রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা হলে আপনি আলো উপলব্ধির ক্ষমতা হারাতে পারেন। এটি ক্রমাগতভাবে আপনার দর্শনক্ষেত্র সংকুচিত করতে থাকে। এটি ধীরে ধীরে অন্ধ করে দিতে পারে।’

জিন থেরাপিতে এক সপ্তাহের মধ্যে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হতে দেখা গেছে
ছবি : রয়টার্স

স্যামের ক্ষেত্রেও দৃষ্টিশক্তি সীমিত হয়ে এসেছিল। রাতের বেলায় সে কিছুই দেখতে পেত না। রাতের আকাশের তারা, উড়োজাহাজ, এমনকি নিজের জুতা পর্যন্ত খুঁজে পেতে তার সমস্যা হতো। কিছুদিন আগপর্যন্ত এই সমস্যার কার্যকর কোনো সমাধান ছিল না।

গুড নিউজ নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন নতুন ধরনের জিন থেরাপি বা জিনগত চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন গবেষকেরা। এতে স্যামের মতো অনেক রোগী আশার আলো দেখছে। তাদের দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি দেখা গেছে। এই চিকিৎসার প্রটোকলের পেছনে যে বিজ্ঞান কাজ করছে, তা অসাধারণ।

এ পদ্ধতিতে জিনের স্বাস্থ্যকর অনুলিপি সংশোধনের পর একটি নিষ্ক্রিয় ভাইরাস সরাসরি রেটিনায় ইনজেকশন করা হয়। এরপর স্বাস্থ্যকর জিন কাজ শুরু করে। এটি কোষকে প্রোটিন তৈরিতে সক্ষম করে তোলে, যা আলোকে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তর করতে পারে। ফলে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয় এবং রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা প্রতিরোধ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা উদ্দিষ্ট জিন থেরাপির প্রোটোকল উদ্ভাবন করেছেন। সম্প্রতি এই পদ্ধতি কানাডাতেও ব্যবহারের জন্য ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছে।

তবে স্যামের চিকিৎসার জন্য গত বছর তার মা সারাহ ব্যানন ছেলেকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছিলেন।

জিন থেরাপি প্রয়োগের এক সপ্তাহের মধ্যেই সারাহ তাঁর ছেলে স্যামের দৃষ্টিশক্তির উন্নতি লক্ষ করেন। তিনি জানান, এক বছর ধরে স্যামের দৃষ্টিশক্তির আরও উন্নতি হয়েছে। এতে স্যামের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। কারও সাহায্য ছাড়াই এখন সে পোশাক পরতে পারে। এমনকি সে অন্ধকারেও দেখতে পায়।

সিটিভিকে সারাহ বলেন, ‘স্যাম এখন স্বাভাবিক শিশুর মতোই চলতে-ফিরতে পারছে। এটা একটা আশার গল্প। এখন সে রাতের আকাশে তারা দেখতে পারে।’