শিশুদের রোবট বানাতে শেখায় রোবোল্যাব

ধানমন্ডির একটি পুরোনো ভবনের নিচতলার পুরোটা নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘রোবোল্যাব’। গোটা প্রাঙ্গণে ধবধবে সাদা রঙের প্রাধান্য। ছোট্ট বারান্দার মাথায় শ্রেণিকক্ষ। সেই কক্ষে শিশু-কিশোরেরা ব্যস্ত নিজ নিজ প্রকল্প নিয়ে। তাদের সামনে কোনো বই নেই—আছে রোবট, ল্যাপটপ, ব্যাটারি, স্পিকার, বিভিন্ন ধরনের তার এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি। শিশুরা সবাই রোবট বানানো শিখছে। রোবোল্যাবে শিশুদের রোবোটিকস, ইলেকট্রনিকস, মেকানিকস ও প্রোগ্রামিং শেখানো হয়। নাসা আয়োজিত এ বছরের ‘নাসা হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ’-এর জন্য বাংলাদেশ থেকে ছয়জন মাধ্যমিক শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছে। তারা সবাই রোবোল্যাবের শিক্ষার্থী। এ বছরের ১৭ থেকে ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস স্পেস অ্যান্ড রকেট সেন্টারে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

শিশু-কিশোরদের শেখার সক্ষমতা বাড়াতে এবং তাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে উসকে দিতেই ২০১৯-এর গোড়ার দিকে রোবোল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়। গতকাল শনিবার কথা হলো রোবোল্যাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে হাতেকলমে উদ্ভাবনী শিক্ষা দেওয়া হয় না বললেই চলে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে শিক্ষার্থীরা বাড়তি কিছু শেখার সুযোগ হারাচ্ছে। এতে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশেই সমস্যা হচ্ছে তা নয়—ভবিষ্যতে প্রযুক্তিনির্ভর ক্যারিয়ার গড়তেও তারা পিছিয়ে পড়ছে। কিন্তু আমরা চাই, আমাদের ছেলে-মেয়েরাও এগিয়ে যাক। সেই লক্ষ্যে কাজ করছে রোবোল্যাব।’

রোবট তৈরিতে মগ্ন এক শিক্ষার্থী। ধানমন্ডি, ঢাকা, ৪ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
রোবট তৈরিতে মগ্ন এক শিক্ষার্থী। ধানমন্ডি, ঢাকা, ৪ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

শিশু-কিশোরদের বয়সের ভিত্তিতে রোবোল্যাবে তিনটি কোর্স রয়েছে। প্রতি কোর্সের মেয়াদ আট মাস। প্রতি কোর্সের ভর্তি এক হাজার টাকা এবং মাসিক বেতন তিন হাজার টাকা। ৬ থেকে ৮ বছরের শিশুরা প্রথম কোর্সে শেখে মেকানিকস ও ইলেকট্রনিকস। দ্বিতীয় কোর্সটি ৯ থেকে ১১ বছরের শিশুদের জন্য। এই কোর্সের বিষয়—মেকানিকস, ইলেকট্রনিকস, রোবোটিকস ও প্রোগ্রামিং। তৃতীয় কোর্সে ১২ থেকে ১৫ বছরের শিক্ষার্থীরা অ্যাডভান্স রোবোটিকস ও প্রোগ্রামিং শেখার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষা উপকরণ রোবোল্যাবই সরবরাহ করে থাকে। জান্নাত জানালেন, এই কোর্সগুলোর শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মেধাবী শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অধীনে প্রতি কোর্সে একেক শিক্ষার্থী ২৪ থেকে ২৬টি প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারে।

রোবোল্যাব ‘সিনপসিস এডুকেশন’-এর একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। সপ্তাহে এক দিন—শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রোবোল্যাবে পাঠদান করা হয়। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন সময় কর্মশালার আয়োজন করে থাকে রোবোল্যাব। জান্নাত আরও বলেন, ‘আমরা চাই, অভিভাবকেরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের উদ্ভাবনী শিক্ষার দিকে আরও বেশি গুরুত্ব দেন।’

কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে একটি প্রকল্পে কাজ করছে। ধানমন্ডি, ঢাকা, ৪ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে একটি প্রকল্পে কাজ করছে। ধানমন্ডি, ঢাকা, ৪ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

মনোয়ারা বেগমের ছেলে আট মাস ধরে রোবোল্যাবে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের প্রতি ভীষণ আগ্রহ। আমি দেখলাম, রোবোল্যাব ওর জন্য ভালো জায়গা। এখান থেকে আমার ছেলে হাতেকলমে শিক্ষা পাচ্ছে। ও ভীষণ খুশি। এখান থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশও নিতে পারছে। ওরা ওদের অবসর সময়টা উদ্ভাবনী শিক্ষা গ্রহণের কাজে লাগাতে পারছে।’