সেদিন বিল গেটসকে মা সাহায্য করেছিলেন বলেই...

বিল গেটস ও তাঁর মা ম্যারি ম্যাক্সওয়েল গেটস
বিল গেটস/ইনস্টাগ্রাম

মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠার জন্য হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন বিল গেটস। এই প্রতিষ্ঠানটিই তাঁকে ৩১ বছর বয়সে বিলিয়নিয়ার বানিয়েছে, পৌঁছে দিয়েছে খ্যাতির চূড়ায়। তবে গেটস বলেছেন, মাইক্রোসফট ও তাঁর সাফল্যে বড় ভূমিকা রেখেছেন তাঁরা প্রয়াত মা ম্যারি ম্যাক্সওয়েল গেটস।

ম্যারি গেটস একজন সফল নির্বাহী ছিলেন। অনেক দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের কিং কাউন্টির অলাভজনক সংস্থা ইউনাইটেড ওয়ের পরিচালনা পর্ষদেরও সদস্য ছিলেন। ম্যারি সেখানে পরিচিত হন আইবিএমের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত জন ওপেলের সঙ্গে। ওপেলও ইউনাইটেড ওয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।

১৯৮০ সালে মাইক্রোসফটের বয়স ছিল কেবল পাঁচ। ছেলের ছোট্ট সফটওয়্যার তৈরির প্রতিষ্ঠানটিকে সাহায্য করার জন্য জন ওপেলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ম্যারি।

ম্যারি ম্যাক্সওয়েল গেটস একজন সফল নির্বাহী ছিলেন
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন

ওদিকে আইবিএম ৭০ বছরের পুরোনো আর সফলতম প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। সে সময় প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে সফটওয়্যার তৈরি করে নিতে চেয়েছিল আইবিএম। প্রতিষ্ঠানটির এক পার্সোনাল কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম তৈরির জন্য নিয়োগ দিতে চেয়েছিল সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

‘চেজ’ নামের প্রকল্পটির জন্য আগে থেকেই চুক্তিবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছিল মাইক্রোসফট। তবে একই প্রকল্পের জন্য আরও প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এদের মধ্যে ছিল মাইক্রোসফটের প্রতিদ্বন্দ্বী ডিজিটাল রিসার্চও।

ঘটনা জানার পর ওপেলের সঙ্গে মাইক্রোসফটের ব্যাপারে কথা বলেন ম্যারি। আর ওপেল বলেন আইবিএমের নির্বাহীদের সঙ্গে।

পরখ করে দেখার জন্য হলেও কাজটির জন্য মাইক্রোসফটকে নিয়োগ দেয় আইবিএম
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ম্যারি
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন

অবশ্য মাইক্রোসফটের ভাগ্যও বেশ ভালো ছিল। দ্য সিয়াটল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ডিজিটাল রিসার্চের সঙ্গে আইবিএমের আলোচনা কোনো কারণে ফলপ্রসূ হচ্ছিল না। ভিন্ন উপায়ের খোঁজে ওপেলের মাথায় আসে ম্যারি গেটসের ছেলে বিল গেটসের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের নাম।

পরখ করে দেখার জন্য হলেও কাজটির জন্য মাইক্রোসফটকে নিয়োগ দেয় আইবিএম। অবশ্য মাইক্রোসফটের পাশাপাশি ডিজিটাল রিসার্চ এবং সফটেক মাইক্রোসিস্টেমস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল আইবিএম।

মাইক্রোসফট যখন কাজটি পেল, তাদের হাতে নিজস্ব কোনো অপারেটিং সিস্টেম ছিল না। সিয়াটল কম্পিউটার প্রোডাক্টসের কাছ থেকে ১৯৮১ সালে ‘কিউডস’ নামের অপারেটিং সিস্টেম কিনে নেয় তারা। সেটির ওপর ভিত্তি করে মাইক্রোসফট ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম বা সংক্ষেপে ‘এমএস-ডস’ তৈরি করে মাইক্রোসফট। এরপর পার্সোনাল কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য এমএস-ডসের লাইসেন্স বিক্রি করে আইবিএমের কাছে।

১৯৯৪ সালের ১০ জুন ৬৪ বছর বয়সে মারা যান ম্যারি গেটস। মৃত্যুর আগে তিনি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।

লাইসেন্সে শর্ত ছিল, এমএস-ডস এককভাবে ব্যবহারের সুযোগ পাবে না আইবিএম। অর্থাৎ কেবল আইবিএম নয়, মাইক্রোসফট চাইলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছেও সেটি বিক্রি করতে পারবে। হয়েছিলও তা-ই। সে সময় বাজারের প্রায় সব পার্সোনাল কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমে পরিণত হয় এমএস-ডস। আর সেটাই মাইক্রোসফট এবং বিল গেটসের ভাগ্যের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

১৯৮৬ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে মাইক্রোসফট। সঙ্গে সঙ্গে মাল্টিমিলিয়নিয়ারে পরিণত হন গেটস। পরবর্তী মাত্র এক বছরের মধ্যে বিলিয়নিয়ারও হন তিনি।

বিল গেটস
রয়টার্স

২০০০ সাল পর্যন্ত মাইক্রোসফটের সিইও ছিলেন বিল গেটস। ২০০৮ সালে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকেও সরে দাঁড়ান। এরপর দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করেন বিল।

মাইক্রোসফট এখন ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলারের বিশাল এক প্রতিষ্ঠান।

সূত্র: সিএনবিসি