হুয়াওয়ের নিষেধাজ্ঞায় লাভ কার?

স্যামসাংয়ের নতুন স্মার্টফোন
ছবি : রয়টার্স

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে চীনা প্রযুক্তিপণ্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। এতে কপাল খুলে গেছে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস অর্থাৎ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে রেকর্ড আয় করেছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির আয় ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন বিক্রি থেকে আয় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। তাদের মাইক্রোচিপ থেকে আসা মুনাফা বেড়েছে ৮২ শতাংশ পর্যন্ত। স্যামসাং জানিয়েছে, তাদের তৃতীয় প্রান্তিকে মোট মুনাফা ৮৩০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৪৯ শতাংশ বেশি।

হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় স্যামসাং মোবাইল ও চিপ ব্যবসা আরও বেড়ে গেছে। এতে হুয়াওয়ের বাজার দখল করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত আগস্ট মাসে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ বলেছিল, কোনো কোম্পানি যদি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লাইসেন্স ছাড়া হুয়াওয়ের কাছে চিপ বিক্রি করে তবে তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে ট্রাম্প প্রশাসন একাধিক চীনা প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে স্যামসাংয়ের প্রিমিয়াম টিভির চাহিদাও বেড়ে গেছে।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, মাইক্রোচিপ শিল্পে ব্যাপক রদবদল সত্ত্বেও স্যামসাংয়ের প্রবৃদ্ধি লক্ষ করার মতো। সম্প্রতি মার্কিন চিপনির্মাতা এএমডি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী জিলিংক্সকে সাড়ে তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলারে কিনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এনভিডিয়াও ব্রিটিশ মোবাইল চিপনির্মাতা এআরএমকে চার হাজার কোটি ডলারে কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

করোনাকালে চিপনির্মাতারা সবাই লাভের মুখ দেখেছে। এ সময়ে অনেক ঘরে বসে কাজের চল শুরু হওয়ার নির্দিষ্ট চিপের আগ্রহ বেড়েছে। স্যামসাংয়ের পাশাপাশি এসকে হাইনিক্স দ্বিতীয় প্রান্তিকে লাভের কথা জানিয়েছে। মাইক্রন টেকনোলজিসের পক্ষ থেকেও প্রান্তিক আয়ের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অবশ্য চতুর্থ প্রান্তিকে কঠিন সময় আসছে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। সার্ভার গ্রাহকদের কাছ থেকে চিপের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিকস পণ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে।

স্যামসাংয়ের চেয়ারম্যান লি কুন-হিকে সমাধিস্থ করার পরের দিনই তৃতীয় প্রান্তিকের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। লি কুন-হি স্যামসাংকে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটি উত্তরাধিকার নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তাঁর উত্তরাধিকারীদের ব্যাপক সম্পত্তি বিক্রি করতে হবে। কারণ উত্তরাধিকার ট্যাক্স বিল পরিশোধ করতে হবে তাঁদের।

স্যামসাংয়ের উত্তরাধিকারী লি জে-ওংকে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তিনি ২০১৪ সাল থেকে অবশ্য স্যামসাংয়ের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি দুবার প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।