২২তম জন্মদিনে গুগল

গুগলের জন্মদিনের ডুডল
ছবি: গুগলের সৌজন্যে

২২ বছর আগে আজকের দিনে অর্থাৎ, ২৭ সেপ্টেম্বর স্ট্যানফোর্ডের দুই পিএইচডির ছাত্র বড় আকারের সার্চ ইঞ্জিন তৈরির ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন। ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনের সেই ধারণা প্রকল্পই আজকের গুগল। এটিই বিশ্বের বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন এখন। আজ ২৭ সেপ্টেম্বর গুগল ২২ তম জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বিশ্বের বৃহত্তম ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ ডুডল তৈরি করে জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছে।

এবারের ডুডলটি তৈরি করা হয়েছে চলমান করোনা মহামারির থিম ধরেই। এ সময়ে যোগাযোগের জন্য ভিডিও কল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেকেই গুগলের সেবা ব্যবহার করে ভিডিও কল করছেন। ডুডলে বড় জি অক্ষরটির সামনে ল্যাপটপে সেই ভিডিও কল করতে দেখা যাচ্ছে। ভার্চ্যুয়াল জন্মদিনের বিষয়টি গুগল তাদের ২২ তম জন্মদিনের ডুডলে প্রদর্শন করছে।

১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জন্ম হয়েছিল গুগলের। কম্পিউটার বিজ্ঞানের দুই শিক্ষার্থী ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনের প্রকল্প হিসেবে শুরু করেছিল এ সার্চ ইঞ্জিন। এখন সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ও ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে গুগল। এই জুটি একটি বড় আকারের অনুসন্ধান ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করা নিয়ে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তাঁরা চেয়েছিলেন এমন একটা ওয়েবসাইট তৈরি করতে, যার মাধ্যমে অন্য ওয়েবপেজগুলোর একটা তুলনামূলক তালিকা করা যাবে। এর ভিত্তি হবে অন্য ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে কতগুলো তাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে ।

গুগল নামটি আসলে এসেছে গাণিতিক হিসাবের গোগল (googol) ভুল করে লেখার মাধ্যমে, যার মানে হলো ১ এর পর ১০০টি শূন্য। এ নিয়ে এখন গল্প প্রচলিত আছে যে, একজন প্রকৌশলী বা ছাত্র আসল নামের বদলে এই ভুল বানানটি লিখেছিলেন। সেই ভুল নামই পুরো দুনিয়ার সামনে চলে আসে। কেন এই নাম বেছে নিয়েছিলেন ল্যারি আর সের্গেই? তাদের ওয়েবসাইট যে বিপুল পরিমাণ উপাত্ত ঘাঁটাঘাঁটি, অনুসন্ধান করবে, সেটা এই নাম দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন তারা।

গুগল নিয়ে ২২ তথ্য


১. যখন গুগল প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন পেজ ও ব্রিন দুজনেই ছিলেন তরুণ। তখন পেজের বয়স ছিল মাত্র ২২ আর ব্রিনের ২১। শব্দের বানান ভুল থেকে গুগল নামের উৎপত্তি। গাণিতিক হিসাবের গোগল (googol)-এর অর্থ- একটি সংখ্যার পেছনে একশ শূন্য। একজন প্রকৌশলী আসল নামের বদলে এই ভুল বানানটি লিখেছিলেন। সেই ভুল নামই গুগল!

২. ১০০ টিরও বেশি ভাষা এবং প্রতিবছর কয়েক ট্রিলিয়ন সার্চের উত্তর দেয় এই গুগল। প্রায় দু দশক ধরে গুগল মাল্টিন্যাশানাল টেকনলোজি সংস্থা হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে।

৩. প্রথমটিতে হয়তো বিস্মিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। গুগল হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভিজিটেড ওয়েবসাইট, অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই এই ওয়েবসাইটটিতে অন্তত একবার ঘুরে গেছেন। এমনকি বিং সার্চ ইঞ্জিনে সবচেয়ে বেশি অনুসন্ধান করা হয় গুগলকে।

গুগল সার্চ এখন সারা বিশ্বের মানুষ ব্যবহার করছেন
ছবি: রয়টার্স

৪. গুগল নামটি আসলে এসেছে গাণিতিক হিসাবের গোগল (googol) ভুল করে লেখার মাধ্যমে, যার মানে হলো ১ এর পর ১০০টি শূন্য। এ নিয়ে এখন গল্প প্রচলিত আছে যে, একজন প্রকৌশলী বা ছাত্র আসল নামের বদলে এই ভুল বানানটি লিখেছিলেন। সেই ভুল নামই পুরো দুনিয়ার সামনে চলে আসে। কেন এই নাম বেছে নিয়েছিলেন ল্যারি আর সের্গেই? তাদের ওয়েবসাইট যে বিপুল উপাত্ত ঘাঁটাঘাঁটি, অনুসন্ধান করবে, সেটা এই নাম দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন তারা।

৫. প্রথম গুগল ডুডল অর্থাৎ গুগলের হোম পেজে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা দিনের স্মারক হিসেবে যে ছবি ব্যবহৃত হয়, তা তৈরি করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, বার্নিং ম্যান নামের একটি উৎসব উদযাপনের জন্য। গুগলের প্রতিষ্ঠাতারা ভেবেছিলেন, এর মাধ্যমে তাঁরা জানিয়ে দেবেন যে কেন তাঁরা অফিসে অনুপস্থিত।

৬. গুগলের সবচেয়ে স্মরণীয় ডুডলগুলোর অন্যতম হচ্ছে চাঁদে পানির আবিষ্কার এবং জন লেননের ৭০তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য। জন লেননের ডুডলটি আবার ছিল প্রথম ভিডিও ডুডল।

৭. প্রথম গুগল সার্ভার রাখা হয়েছিল লেগো দিয়ে তৈরি একটি কাস্টম কেসে।

৮. গুগলের হেডকোয়ার্টার পরিচিত গুগলপ্লেক্স নামে এবং এটি অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে।

৯. গুগলপ্লেক্সে টি-রেক্স জাতীয় ডাইনোসরের একটি বিশাল মূর্তি আছে, যার ওপর প্রায়ই অসংখ্য প্লাস্টিকের তৈরি গোলাপি ফ্ল্যামিঙ্গো বসে থাকতে দেখা যায়। গুজব রয়েছে যে এটা হচ্ছে কর্মচারীদের প্রতি এক সতর্কবার্তা, যেন তাঁরা কখনো গুগলকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে না দেন।

১০. গুগলের হেডকোয়ার্টারটি বিশাল এবং এর ভেতরে অনেক সবুজ জায়গা আছে। এখানে ঘাস কাটার জন্য লন-মোয়ার মেশিন ব্যবহার করা হয় না। এ জন্য গুগল বাইরে থেকে ছাগল ভাড়া করে নিয়ে আসে।

ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন
ছবি: রয়টার্স

১১. গুগল হচ্ছে প্রথম বড় প্রযুক্তি কোম্পানি, যারা তাদের কর্মচারীদের বিনা মূল্যে খাবার পরিবেশন করে। তা ছাড়া কর্মচারীদের তাঁদের পোষা কুকুর অফিসে নিয়ে আসতে দেওয়া হয়।

১২. ২০০১ সালে চালু করা হয় গুগল ইমেজ সার্চ, যার অনুপ্রেরণা ছিল ২০০০ সালের গ্র্যামি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে জেনিফার লোপেজের পরা সবুজ পোশাক। এটি গুগলের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চে পরিণত হয়েছিল।

১৩. গুগলের নিজস্ব ই–মেইল সেবা জি–মেইলের কথা ঘোষণা করা হয় ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল বা এপ্রিল ফুলস ডে-তে। অনেকেই ভেবেছিলেন যে এটা আসলে একটা রসিকতা।

১৪. গুগলকে একটি ক্রিয়াপদ হিসেবে (গুগল করা অর্থে) প্রথম অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ২০০৬ সালে। মিরিয়াম-ওয়েবস্টার অভিধান লিখেছিল, গুগল করা মানে হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব থেকে কোনো তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা’।

১৫. ইউটিউব গুগল পরিবারের সদস্য হয় ২০০৬ সালে। দেড় শ কোটি ডলারের বেশি দামে ইউটিউবকে কিনে নেয় গুগল।

১৬. গুগলের একজন ইঞ্জিনিয়ার ২০০৯ সালে একবার ইন্টারনেট ব্যবস্থা ‘ধসিয়ে দিয়েছিলেন’ । তিনি দুর্ঘটনাবশত গুগলের ব্লকড ওয়েবসাইটের রেজিস্ট্রিতে ফরোয়ার্ড স্ল্যাশ চিহ্নটি যোগ করে ফেলেছিলেন। যেহেতু প্রায় প্রতিটি ওয়েবসাইটেই চিহ্নটি আছে, তাই সে সময় অনলাইনে কোনো ওয়েবসাইটেই ঢোকা যাচ্ছিল না।

১৭. গুগল সার্চে ১৫ শতাংশ অনুসন্ধানই হচ্ছে একেবারে নতুন, যা আগে কখনো সার্চ করা হয়নি।

১৮. গুগল ২০১৮ সালের এপ্রিলে পরিণত হয় প্রথম কোম্পানিতে, যারা শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করছে। এর অর্থ হচ্ছে তারা প্রতি এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করার সঙ্গে সঙ্গে এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করছে।

১৯. গুগলের আসলে ৬টি জন্মদিন আছে। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে শুধু ২৭ সেপ্টেম্বরকেই তারা জন্মদিন হিসেবে পালন করবে।

২০. গুগলের হাতে নানা রকম কূটকৌশল আছে। যেমন আপনি যদি এস্কিউ (askew) শব্দটি ইংরেজিতে সার্চ করেন, তাহলে দেখবেন পুরো পেজই একদিকে কাত হয়ে গেছে।

২১. অ্যাপোলো–১১তে চড়ে চাঁদে মানুষ পাঠাতে যতটুকু কম্পিউটিং ক্ষমতা ব্যবহৃত হয়েছিল, এখন মাত্র একটি গুগল সার্চে প্রায় সেই পরিমাণ কম্পিউটিং ক্ষমতা কাজে লাগানো হয়।

২২. গুগল এখন শুধু একটি সার্চইঞ্জিন নয়, ভবিষ্যতে এখানে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্ট্রিমিং-ভিত্তিক গেম খেলার ব্যবস্থা, এমনকি চালকবিহীন গাড়ি। এ বছরে প্রথমবারের মতো এক লাখ কোটি (এক ট্রিলিয়ন) ডলার বাজারমূল্যের মাইলফলক ছুঁয়েছে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট। ২০১৮ সালে প্রথম অ্যাপল, এরপর মাইক্রোসফট ও আমাজন—চতুর্থ মার্কিন প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাইলফলকটি স্পর্শ করে অ্যালফাবেট।