আক্ষরিক অর্থেই কপিক্যাট

ইবিসু নামের বিড়ালকে কাজের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ফুমি হিগাকি
ছবি: গবেষণাপত্র থেকে সংগৃহীত

বিড়াল যে স্টকিংয়েও পারদর্শী, তা কি জানা ছিল? লুকিয়ে লুকিয়ে মনিবের ওপর নজর তো রাখেই, মনিবকে নাকি নকলও করতে পারে। ‘কপিক্যাট’ বটে।

নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ দিলে মানুষের অঙ্গভঙ্গি মোটামুটি নিখুঁতভাবেই অনুকরণ করতে পারে বিড়াল। গবেষণাপত্রটি অ্যানিমেল কগনিশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে কুকুর, ওরাংওটাং ও ইঁদুরের ওপর একই ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছেন গবেষকেরা। দেখতে চেয়েছেন সেগুলো মানুষকে নকল করতে পারে কি না।

বিড়ালের সামাজিক আদাবকেতা নিয়ে এত দিন যত গবেষণা হয়েছে, তার বেশির ভাগই খাবারকেন্দ্রিক। তবে পোষা প্রাণী হিসেবে মানুষের খুব কাছে থাকে বলে সহজেই সামাজিক দক্ষতা অর্জন করতে পারে বিড়াল। তবে এমনটা অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে সচরাচর দেখা যায় না বলে উল্লেখ করেছেন ওই গবেষকেরা।

গবেষণাপত্রটির মূল লেখক এবং হাঙ্গেরির ইয়তভস লোরান্দ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্লডিয়া ফুগাৎজা এক জাপানি কুকুর প্রশিক্ষকের সঙ্গে কাজ করেছেন। ফুমি হিগাকি নামের ওই প্রশিক্ষক কুকুরের ওপর ‘ডু অ্যাজ আই টোল্ড’ প্রশিক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখেন।

এ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষক কোনো প্রাণীকে শুরুতে বলেন, ‘ডু অ্যাজ আই টোল্ড’। বাংলায় বললে, ‘আমি যা বলি, তা-ই করে দেখাও।’ এরপর কোনো কিছু করে দেখিয়ে বলেন, এবার করো।

গবেষকদের তত্ত্বাবধানে ‘ডু অ্যাজ আই টোল্ড’ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেন ফুমি হিগাকি। ওপরে দুটি এবং নিচের দুটি ছবিতে দেখুন, প্রশিক্ষকের দেখানো উপায়ে কাজ করে দেখাচ্ছে বিড়ালটি
ছবি: গবেষণাপত্র থেকে সংগৃহীত

ইবিসু নামের ১১ বছরের বিড়ালকে ৩৬০ ডিগ্রি পাক খাওয়া, পেছনের দুই পায়ে ভর করে দাঁড়ানো কিংবা ড্রয়ার খোলার মতো কাজের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন হিগাকি। বিড়ালটিও তা সফলভাবে করে দেখিয়েছে। বাক্সের ওপর মুখ রাখা, মানুষকে দেখে একই হাত ব্যবহার করে কোনো কিছু ধরার মতো কাজগুলোও বিড়ালকে দিয়ে করিয়েছেন হিগাকি। অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে বিড়াল তার শরীরের অঙ্গগুলো মেলাতে পারছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিটি কলেজের ক্রিস্টিন ভিটেল কাজ করেন বিড়ালের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। সায়েন্স সাময়িকীকে তিনি বলে, ‘বিড়াল যে আমাদের দেখে শিখছে, এই গবেষণা তা-ই প্রমাণ করে। এটা বেশ আনন্দের খবর।’

অবশ্য সবাই ক্রিস্টিনের মতো আশাবাদী হতে পারেননি। ক্লডিয়ো টেনি নামের ইউনিভার্সিটি অব টুবিগেনের ইথোলজিস্ট বলেছেন, ‘বিড়ালের মানুষকে নকল করতে পারা সহজাত নাকি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হয়েছে, তা জানার কোনো উপায় নেই। আমরা ভালুককে মোটরসাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে পারি। তার মানে এই নয় যে ভালুক মোটরসাইকেল চালায়।’

বিড়ালের ওপর আরও গবেষণা চালানোর পরিকল্পনা আছে ওই গবেষক দলটির। সূত্র: ফক্স নিউজ