চশমা পরলে কি করোনা–ঝুঁকি কমে?

প্রতীকী ছবি

সাধারণত দেখা যায়, নাক ও মুখের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস বা এ ধরনের অন্য কিছু ভাইরাস সংক্রমণ ঘটায়। যে কারণে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা প্রভৃতিই করোনার প্রধান লক্ষণ হিসেবে আমরা জানি। কিন্তু চোখের মাধ্যমেও সংক্রমণ ঘটে। চোখ লাল হয়ে যায়, চোখ জ্বলে। করোনাভাইরাস আমাদের দেহে ঢুকে শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। আমরা মাস্ক পরে নাক–মুখ ঢাকি, যেন সংক্রমণ ঠেকানো যায়। তাহলে চোখের কী হবে? স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া হয় চশমা পরলে হয়তো চোখের মাধ্যমে সংক্রমণ আটকানো যাবে। তবে চশমার ব্যাপারটা একটু আলাদা। দেখা গেছে, চোখের মাধ্যমে সংক্রমণ সাধারণত কম।

সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় তারা পারকার–পোপ (Tara Parker-Pope, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০) এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। তাঁর কথা হলো, চশমা কিছুটা বাঁচায়, বিশেষভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ যদি সামনাসামনি হাঁচি–কাশি দেন, তাহলে চশমার কাচ সংক্রমণে কিছুটা বাধা দেয়। কিন্তু সেটা হয়তো যথেষ্ট নয়। হাসপাতালে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যেহেতু সব সময় রোগীদের কাছে থাকেন, তাই তাঁদের সুরক্ষা পোশাকের অংশ হিসেবে বিশেষ ধরনের চশমা পরতে হয়, যা চোখের চারপাশ আঁটোসাঁটোভাবে ঢেকে রাখে। কারণ, চিকিৎসার সময় নাক–মুখের সঙ্গে চোখও খুব বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।  

চীনের উহানে গত ডিসেম্বর ২০১৯ করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে একটি হাসপাতালে ২৭৬ জন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, খুব কম সংখ্যক রোগীর চোখে চশমা। অথচ চীনে প্রায় সব বয়সের মানুষই কম–বেশি চশমা পরে। এই ঘটনা থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় যে চশমা পরলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কম হতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখনই নিশ্চিত কোনো কিছু বলা যায় না। কারণ, সাধারণ চশমা তো পুরোপুরি সুরক্ষা দিচ্ছে না, চোখের চারপাশ তো খোলাই থাকে। আর তা ছাড়া চোখের ভেতরের কিছু উপাদান ভাইরাসকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। তাই এ বিষয়ে সুনিশ্চিত কিছু বলতে হলে আরও গবেষণা দরকার। অল্পসংখ্যক রোগীর বৈশিষ্ট্য দেখে কিছু বলা যায় না।

চশমা পরার একটা সুবিধা হলো, চোখে হাত কম যায়। কিন্তু অন্যদিকে চশমার কারণে গাল–নাক–মুখে হাতের স্পর্শ বেশি লাগে। তাই সুবিধা–অসুবিধা দুই–ই আছে।
অন্য একটি ব্যাপারও আছে। যাঁরা চশমা পরেন, তাঁদের অধিকাংশই অবস্থাপন্ন এবং তাঁরা ভিড় এড়িয়ে চলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা বেশি করতে পারেন। হয়তো এ কারণেও তাঁরা বেশি সংক্রমিত হন না। তাই চশমার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করার জন্য আরও গবেষণা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

ফল ও শাকসবজিতে কি করোনাভাইরাস থাকে?
আমরা প্রতিদিন শাকসবজি রান্না করি। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার কয়েক হাত ঘুরে শাকসবজি বা ফল আমাদের কাছে আসে। তাহলে তো স্পর্শের মাধ্যমে করোনাভাইরাস থাকতেই পারে। তবে সেটা তখনই হবে, যদি করোনায় সংক্রমিত কেউ সরাসরি ফলমূল বা শাকসবজির ওপর হাঁচি–কাশি দেন। তখন শাকসবজির বা ফলের গায়ে করোনাভাইরাস লেগে থাকতে পারে। এ ভাইরাসের আবরণে চর্বি–জাতীয় লিপিড থাকে। সাবান–পানি দিয়ে ধুয়ে একে ভাইরাসমুক্ত করা যায়। কিন্তু খাবারের শাকসবজি তো সাবান দিয়ে ধোয়া হয় না। তাই অন্য ব্যবস্থা করতে হয়। আমরা জানি, করোনাভাইরাস কোনো খোলা স্থানে দুই–তিন দিনের বেশি সক্রিয় থাকে না। বেশির ভাগ শাকসবজি কৃষকের কাছ থেকে আমাদের ঘরে আসতে কিছু সময় লাগে। এরপর আরও কিছু সময় রেখে রান্না করলে ভয় থাকে না। সাধারণত আমরা ভালো করে পানিতে ধুয়ে রান্না করি। এরপর বেশি সময় ধরে চুলায় রাখলে করোনাভাইরাসেরআর ভয় থাকে না। কারণ,এই ভাইরাস ৬৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, আমাদের দেহের সেল সংক্রমিত করার সক্ষমতা হারায়। শাকসবজি ধুয়ে কুটাকুটি করে রান্না শেষে আমাদের হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিলেই চলে।

আর ফলের বেলায় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, কেটে রাখার পর যেন কারও হাঁচি–কাশিতে সংক্রমিত না হয়। বেশির ভাগ ফলের খোসা ফেলে খাওয়া যায়। অথবা ফল বাসায় দুই–তিন দিন রেখে খাওয়া যায়।

এখানে আমরা মনে রাখতে পারি যে শাকসবজি ও ফলমূল থেকে আমরা সংক্রমিত হতে পারি শুধু এর বাইরের আবরণ স্পর্শের মাধ্যমে এবং স্পর্শ–সংক্রমণের আশঙ্কা খুব কম বলে সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
এখন বরং বেশি সতর্কতা দরকার

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের হিসাবে দখা যায়, সংক্রমণের হার প্রতিদিন অল্প অল্প করে কমছে। কিন্তু মৃত্যুহার ওঠা–নামার মধ্যে রয়েছে। হয়তো মৃত্যুহারও কমতে থাকবে। কিন্তু এতে আমাদের মধ্যে যেন এমন ভাব না আসে যে আর ভয় নেই। সতর্কতা বরং এখনই বেশি দরকার। কারণ, মুখে মাস্ক বাধ্যতামূলকভাবে না পরলে সংক্রমণের হার আবার বাড়তে থাকবে। তখন সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
তাই আমাদের সচেতন থাকতে হবে। মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]