‘জেন-জেড’ তরুণদেরও করোনা কেন হয়?

প্রতীকী ছবি

প্রথম দিকে আমরা শুনেছি তরুণদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ তাদের শ্বাসতন্ত্রের দেহকোষে (সেল) এইস-২ রিসেপ্টার প্রোটিন কম থাকে। আর এর ফলে করোনার স্পাইক প্রোটিন সহজে এই সব সেলে ঢুকতে পারে না। এটা ঠিকই আছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে জেন-জেড বা জেনারেশন জেড, অর্থাৎ যারা উন্নত ও বিকাশমান প্রযুক্তির বর্তমান শীর্ষ পর্বে,  ১৯৯৭-২০১২/১৫ সময়কালে  জন্ম নিয়েছেন, যাদের বয়স এখন ৬-৭ থেকে ২৩-২৪, ওরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। হয়তো বেশি না, তাও কেন আক্রান্ত হবেন? আগে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় কিছু শিশু-তরুণ হয়তো আক্রান্ত হয়েছেন, হয়তো তাদের স্বাস্থ্যগত কিছু সমস্যা ছিল, কিন্তু এখন কেন বেশি? বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে জানার চেষ্টা করছেন। তবে ধারণা করা হয়, বয়স্ক ব্যক্তিরা আক্রান্ত হলে তরুণেরা হয়তো তাদের সেবাযত্নে বেশি হারে নিয়োজিত হচ্ছেন। ফলে একদিকে ওদের মাধ্যমে করোনা বেশি ছড়ায়, আবার নিজেরাও অনেক সময় আক্রান্ত হন। সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির (সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী  হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে এমন অর্ধেকের বেশি রোগীর বয়স ৬৫-এর কম এবং প্রতি পাঁচজনে একজনের বয়স ২০ থেকে ৪৪ বছর।

সুতরাং আমাদের তরুণদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এটা ভাবলে ভুল হবে যে, বয়স কম বলে তাদের করোনার আশঙ্কা নেই বা কম। তাদের সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাইরে চলাফেরায় সব সময় মাস্ক ব্যবহার এবং ভিড় এড়িয়ে চলায় অবহেলা করা যাবে না।

করোনাভাইরাসের অনেক কিছুই এখনো অজানা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করছেন। ভারতের রাজধানী দিল্লি, মুম্বাইসহ বেশ কিছু বড় শহরে আকস্মিকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ল কীভাবে সেটাও অনেক বিশেষজ্ঞ এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না। অবশ্য একটা বিষয় ঠিক যে, ভারতে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি জনসমাগম ঘটেছে। যেমন, কয়েকটি রাজ্যে একই সময়ে নির্বাচন, আবার দেশব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হলো, যেখানে অনেক বেশি জনসমাগম ঘটেছে। অনেক রাজ্যে টিকা দেওয়ার হারও কম। ফলে সহজে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে বিশেষ কোনো রূপান্তরিত করোনাভাইরাসের (ভ্যারিয়েন্ট) সংক্রমণ ঘটছে কি না, তা নিয়ে গবেষণা দরকার। তবে বিশ্বব্যাপী একটা কথা সবাই বলছেন, এই করোনাভাইরাসের বিষয়ে আরও অনেক কিছু জানাবোঝা দরকার। এ না হলে স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন।

লকডাউন শিথিল?

আমাদের দেশে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে লকডাউন চলছে। কিন্তু ঢিলেঢালা ভাব। তা সত্ত্বেও সংক্রমণের হার এখন কমের দিকে। কিন্তু আশঙ্কার দিকটি হলো লকডাউন আরও শিথিল অথবা তুলে দিলে কী হবে? সামনে ঈদ। মানুষের কেনাকাটার ধুম পড়বে। আবার ব্যবসা ও কেনাকাটার সময়ও এটা। ব্যবসায়ী-কর্মীদের রুটিরুজির প্রশ্ন আছে। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে সব দিকের সমন্বয় করতে হবে। কঠিন কাজ। কিন্তু মানুষের জীবনের সুরক্ষার বিষয়টিও তো কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং সবার ওপরে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ধারা অব্যাহত রাখতে না পারলে সামনে ঘোর বিপদ। কারণ দেশের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট দেখা দিতে পারে। ভারতের মতো এত বড় অর্থনীতির দেশেও আজ অক্সিজেন সংকটে মানুষকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। এ কথা আমাদের সবার মনে রাখতে হবে।

আরও সতর্কতা

এখন অন্তত দুটি কাজের ওপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার। প্রথমত, অন্তত ১৬ বা ১৮ বছর থেকে শুরু করে সবাইকে যত দ্রুত সম্ভব টিকা দিতে হবে। দুই ডোজ করে , অথবা এক ডোজের টিকা হলে নিয়ম অনুযায়ী এক ডোজ করে টিকা চাই। দেশের সব জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নে টিকার ব্যবস্থা যত দ্রুত করতে পারব, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের কাজটি তত সহজ হবে। আর দ্বিতীয়টি হলো, স্বাস্থ্যবিধি সবার মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অন্তত সবাই যদি ঘরের বাইরে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করেন এবং কারও সঙ্গে কথা বলার সময় অন্তত দুই হাত দূরে থাকেন, তাহলেও কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ আমরা অনেক কমিয়ে আনতে পারব। এখানে আমাদের কোনো ধরনের অবহেলা চলবে না। মাস্ক পরার নিয়ম মেনে চলাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। নাক ও মুখ যেন ঢাকা থাকে, সেটা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এখন করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি অন্যতম ফর্মুলা হলো-টিকা দাও, মাস্ক পরো। আমরা যদি সচেতন থাকি তাহলে করোনার দুর্যোগ হয়তো দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারব।

*আব্দুল কাইয়ুম: মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]