ডাবল মাস্ক কি ফ্যাশন না প্রয়োজন

ইউরোপ-আমেরিকায় আজকাল খুব সুন্দর রং ও ডিজাইনের মাস্ক পরতে দেখা যায়। করোনার প্রথম দিকে, আট-নয় মাস আগে মুখে মাস্ক দেখলে বিদঘুটে লাগত। কিন্তু এখন আমাদের চোখ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সুন্দর রংচঙা মাস্ক মুখে দেখলে বরং বেশ আধুনিক মনে হয়। এখন দেখা যাচ্ছে অনেকে ‘ডাবল মাস্ক’ ব্যবহার করেন। মানে, প্রথমে হয়তো উচ্চ মানের মেডিকেল গুণসম্পন্ন একটা মাস্ক, এর ওপর রঙিন ও সুন্দর ডিজাইনের অথবা কালো রঙের সুন্দর মাস্ক। অবশ্য আমাদের দেশে মাস্কের ব্যবহার বা এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা কম। কিন্তু ইউরোপে সবাই সচেতন। যুক্তরাষ্ট্রেও কম ছিল, কিন্তু এখন, বিশেষভাবে প্রসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানে সাড়া পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও মাস্কের ব্যবহার বাড়ছে। এখন আবার অনেকে ডাবল মাস্ক পরেন। এটা কি নতুন ফ্যাশন? না, তা নয়।

করোনাভাইরাসের মিউটেশনে সৃষ্ট নতুন একটি স্ট্রেইন যুক্তরাজ্য ও পরে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর ডাবল মাস্কের চল হয়েছে। ফ্যাশন নয়, অনেকটা প্রয়োজনের তাগিদেই। কারণ এই নতুন স্ট্রেইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটা দ্রুত ছড়ায়। দেখা গেছে একটি ঘরে নতুন স্ট্রেইনের করোনায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি আগের চেয়ে কমসংখ্যক ভাইরাস ছড়িয়ে ও কম সময়ে অন্য একজনকে সংক্রমিত করতে পারেন। তাই বেশি সতর্কতা দরকার। বিশেষভাবে ট্রেন, বাস বা প্লেনে দীর্ঘ সময় ভ্রমণে অথবা কোনো আলোচনা সভায় দীর্ঘ সময় থাকতে হলে ডাবল মাস্কের প্রয়োজন রয়েছে। মূল বিষয়টা হলো সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি হলে সতর্কতার মাত্রা বাড়ানো দরকার। আমাদের দেশে অবশ্য প্রথম থেকেই একটা বিষয় চালু হয়েছে। তিন পরত কাপড়ের মাস্ক পরা। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। তাই মাস্ক কমবেশি যাঁরা ব্যবহার করে আসছেন, তাঁদের অনেকেই দুটি মাস্কই পরেন। কারণ, এর ফলে অনেক বেশি নিরাপত্তা পাওয়া যায়। ইউরোপ-আমেরিকায় মানুষ সাধারণত মেডিকেল মাস্ক পরে, তাই আগে সেখানে এক মাস্কের চল ছিল, এখন অনেকে দুই মাস্ক ব্যবহার করছেন। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্ট বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে অনেক উঁচু অবস্থানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ডাবল মাস্ক পরতে দেখা গেছে। নিউনিয়র্ক টাইমস: ওয়েল ম্যাগাজিন (অনলাইন সংস্করণ, ২০ জানুয়ারি ২০২১) এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তৃত লিখেছে।

ঢিলেঢালা মাস্ক নয়

বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আরেকটি মজার দৃশ্য দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে (২০ জানুয়ারি ২০২১) জেমস গরম্যানের লেখায় তুলে ধরা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা গেল, গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার মাস্ক নাকের নিচে ঝুলে পড়েছে। অথচ পুরো নাক-মুখ ঢাকা না থাকলে সংক্রমণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা যায় না। আমাদের দেশে এটা নতুন কিছু নয়। জরিমানার ভয়ে অনেকেই মাস্ক একটা কানে ঝুলিয়ে রাখেন। অথবা মাস্ক থাকলেও সেটা থুতনির নিচে ঝুলে থাকে। কিন্তু মাস্ক পরতে হবে এমনভাবে যেন সেটা মুখের ত্বকের সঙ্গে একেবারে লেপ্টে থাকে। তাহলেই কেবল আমার মুখের শ্বাসপ্রশ্বাসে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমবে এবং একই সঙ্গে অন্যের শ্বাসপ্রশ্বাসে আমার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। ঢিলেঢালা মাস্ক পরে কোনো লাভ নেই।

টিকা নিয়ে সংশয়?

আমাদের দেশে ভারতের টিকা উপহার হিসেবে এসেছে। আরও বেশি ডোজ টিকা আসছে। শিগগিরই টিকা দেওয়া শুরু হবে। অনেকে বলছেন, ‘প্রথমে টিকা নেব না, আগে দেখি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী।’ মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কোনো সমস্যা নেই। তিনি নিজে প্রথমে টিকা নিতে আগ্রহী। মন্ত্রণালয় থেকে টিকার বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া হয়েছে। যদি সাধারণ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, সেটা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। গুরুতর কিছু হওয়ার আশঙ্কা প্রায় নেই। তারপরও সে রকম কিছু হলে পাশেই হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। আমরা আশা করি টিকা নিরাপদ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]