রকেট নিয়ে কাজ করছেন ময়মনসিংহের একদল তরুণ
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বসে রকেট নিয়ে কাজ করছেন একদল তরুণ। প্রায় পাঁচ বছর পরিশ্রমের পর তাঁরা একটা রকেট তৈরি করতে পেরেছেন। শেষ পর্যন্ত রকেটটি আকাশে উড়ুক বা না উড়ুক, এই তরুণদের স্বপ্ন কিন্তু আকাশছোঁয়া।
সাবমেরিন তৈরি করে ২০০৮ সালে জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় পুরস্কার পেয়েছিলেন নাহিয়ান আল রহমান। সেটাকেই জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলে মানেন। এই পুরস্কারই তো তাঁর মনে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল। বিজ্ঞানের মজাটা টের পেতে শুরু করেছিলেন পুরোদমে। একটু একটু করে তাঁর স্বপ্নটা বড় হয়েছে। এতই বড় যে স্কুলজীবনেই রকেট নিয়ে কাজ করার কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু শুরুটা কীভাবে হবে? কীভাবে হবে জোগাড়যন্ত্র? সহায়তা করবে কে? সব প্রশ্নের উত্তর মিলে গেল ২০১২ সালে। সে বছরই ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান এই তরুণ। বন্ধুদের কাছে নিজের ইচ্ছার কথা জানান, তাঁরাও রাজি হন। চ্যালেঞ্জটা নিয়েই দেখা যাক। কিন্তু বিপত্তি অন্যখানে। রকেট নিয়ে কাজ করার মতো তথ্য–উপাত্ত, সরঞ্জাম, তেমন কিছুই পাচ্ছিলেন না নাহিয়ান ও তাঁর বন্ধুরা। এবার তাঁরা কলেজের শিক্ষকদের শরণাপন্ন হন। ছাত্রদের আগ্রহ দেখে এগিয়ে আসেন শিক্ষকেরাও। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বই সংগ্রহ করে দেন তাঁরা। নাহিয়ান ও তাঁর বন্ধুরা মিলে রকেট–সংক্রান্ত পড়ালেখা শুরু করেন।
কিন্তু শুধু পড়াশোনা করলেই তো হবে না। হাতেকলমে পরীক্ষা–নিরীক্ষাও তো করা চাই। তত্ত্বীয় জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে এই তরুণেরা নিজেরাই গড়ে তোলেন আলফা সায়েন্স ক্লাব নামে একটি বিজ্ঞানপ্রেমীদের সংগঠন। এই ক্লাবের মাধ্যমেই তাঁরা বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেন। দিনভর চলে রোবটিকসসহ বিজ্ঞানভিত্তিক নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট। এই ল্যাব থেকে গবেষণা করেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছেন ক্লাবের সদস্যরা।
কিন্তু কিছু সীমাবদ্ধতা তো ছিলই। একসময় বন্ধ হয়ে যায় রকেট নিয়ে কাজ। কিন্তু দমে যাননি নাহিয়ান ও তাঁর বন্ধুরা। ২০১৭ সালে স্নাতক শেষ করার পর ভাবলেন, ব্যবসা করবেন বলে যে টাকা সংগ্রহ করেছিলেন, সেটাই না হয় স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগানো যাক। ২০ জন মিলে প্রায় ৫ বছর কাজ করার পর অবশেষে সম্প্রতি তাঁদের রকেট একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে।
নাহিয়ানদের তৈরি রকেটের ছবি নিয়ে এখন আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বাহবা দিচ্ছেন অনেকেই। নাহিয়ান জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে তাঁরা রকেট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রকেটটা উড়বে তো? প্রশ্নের উত্তর দিলেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তড়িৎ কৌশল বিভাগের শিক্ষক সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘কাজটি করতে গিয়ে আসলে তত্ত্বীয় জ্ঞান থেকে পাওয়া সব ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। সে হিসেবে না ওড়ার কোনো কারণ নেই। তবে কোনো কারণে যদি ব্যর্থ হয়, সেই ভাবনা থেকেই আমরা রকেটটির আরও তিনটি প্রোটোটাইপ তৈরি করে রেখেছি। সে ক্ষেত্রে প্রথমটির ভুল শুধরে পরেরগুলো ওড়ানোর সুযোগ থাকবে।’
নাহিয়ান আল রহমানের স্বপ্ন অবশ্য আরও বড়। বলছিলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ন্যানো স্যাটেলাইটের একটা বড় বাজার আছে। আমরা যদি ঠিকঠাকমতো সহযোগিতা পাই, তাহলে হয়তো আগামী এক দশকের মধ্যে এই বাজারটা ধরতে পারব। আমি চাই, আমাদের দেশেই এমন একটা কোম্পানি গড়ে তুলতে, যেটা স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করবে।’