অর্থনীতি | সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ২

নিচের ছক দুটি লক্ষ করো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।


ছক–১ ছক–২

দক্ষ ব্যবস্থাপনা সুন্দরবন

শারীরিক সক্ষমতা পাহাড়

বক্তৃতার দক্ষতা ভূ–গর্ভস্থ পানি


প্রশ্ন

ক. উৎপাদিত সম্পদ কী

খ. অবাধলভ্য ও অর্থনৈতিক দ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো।

গ. ছক–১ কোন ধরনের সম্পদকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ছক–২–এ নির্দেশিত সম্পদের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে যে সম্পদ সৃষ্টি হয়, তাকে উৎপাদিত সম্পদ বলা হয়। যেমন যন্ত্রপাতি, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।

খ. যেসব দ্রব্য প্রকৃতিতে অবাধে ও বিনা মূল্যে পাওয়া যায়, তাকে অবাধলভ্য দ্রব্য বলে।

সাধারণত এসব দ্রব্য প্রকৃতিতে অবাধলভ্য এবং অঢেল পরিমাণে পাওয়া যায়। অবাধলভ্য দ্রব্যের যোগান প্রকৃতিতে মূলত সীমাহীন। যেমন সূর্যের আলো, বাতাস, নদীর পানি ইত্যাদি। অন্যদিকে যেসব দ্রব্য পাওয়ার জন্য মানুষকে আর্থিক মূল্য প্রদান করতে হয়, সেগুলোকে অর্থনৈতিক দ্রব্য বলা হয়। অর্থনৈতিক দ্রব্যের যোগান সীমাবদ্ধ। যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বই, চেয়ার, গাড়ি ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকের ছক–১–এ উল্লেখ করা গুণাবলি মানবিক সম্পদকে নির্দেশ করে।

ব্যক্তির মানবীয় গুণাবলিকে মানবিক সম্পদ বলা হয়। যেমন শারীরিক যোগ্যতা, প্রতিভা, উদ্যোগ, দক্ষতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা ইত্যাদি মানবিক সম্পদ। তবে অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলোকে সম্পদ বলা যায় না। কারণ, এগুলোতে সম্পদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হস্তান্তরযোগ্যতা ও বাহ্যিকতা নেই।

উদ্দীপকের ছক–১–এ উল্লিখিত দক্ষ ব্যবস্থাপনা, শারীরিক সক্ষমতা ও বক্তৃতার দক্ষতা মানবসম্পদ হলেও অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে সম্পদ নয়। কারণ, সম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি হস্তান্তরযোগ্য হতে হবে। কিন্তু মানবিক সম্পদ হস্তান্তরযোগ্য নয়। সম্পদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো বাহ্যিকতা।

মানুষের গুণাবলি—দক্ষতা, প্রতিভা, বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষমতা এগুলো বাহ্যিক বিষয় নয়। যেমন কোনো ব্যক্তি সুন্দর গান গাইতে পারে, এটি তার প্রতিভা। আবার কেউ যন্ত্রপাতি মেরামত করতে পারে, এটি তার দক্ষতা। কিন্তু এ দক্ষতাগুলোর বাহ্যিক অস্তিত্ব নেই। তাই এগুলোকে অর্থনৈতিক সম্পদ বলা যাবে না। অতএব ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকের ছক–১–এর উপাদানগুলো নিতান্তই মানবিক সম্পদ।

ঘ. উদ্দীপকের ছক–২–এর সুন্দরবন, পাহাড়, ভূ–গর্ভস্থ পানি—এ তিন প্রাকৃতিক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই সম্পদগুলোর গুরুত্ব নিচে বিশ্লেষণ করা হলো।

সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বন। এ বনে সুন্দরী, গরান, গেওয়া, বাইন, গোলপাতা প্রভৃতি প্রয়োজনীয় গাছ বিপুলসংখ্যায় জন্মায়। এ বনজ সম্পদ আসবাবপত্র, জ্বালানী কাঠ, কাগজ উৎপাদনসহ বিভিন্ন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন পশুপাখি এ দেশের প্রাণিজ সম্পদ এবং পর্যটনশিল্পকে সমৃদ্ধ করে। এ বন ও সংলগ্ন খাল থেকে মধু, মোম, মাছ, পোনা ইত্যাদি সংগ্রহ করে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই সুন্দরবন প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। এ ছাড়া বনের গাছের বেষ্টনি উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় থেকেও সুরক্ষা দেয়।

পাহাড়–পর্বত শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, পরিবেশের ভারসাম্য এবং প্রাণিকুলের জীবন রক্ষার জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড়ের বনজ সম্পদ আমাদের শিল্পসহ বহু ক্ষেত্রের প্রয়োজন মেটায়। কিছু কৃষিজাত দ্রব্য পাহাড়েই ভালো হয়। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে পাহাড়ি অঞ্চলের গুরুত্ব অনেক। দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটিও পাহাড়ি অঞ্চলেই অবস্থিত। অন্যদিকে, বাংলাদেশের কৃষিকাজ অনেকটাই নির্ভর করে সেচের ওপর। শীতকালে গভীর/অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ–গর্ভস্থ পানি তুলে ফসল ফলানো সম্ভব হয়। এতে কৃষি উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া শহরাঞ্চলে ভূ–গর্ভস্থ পানি এখন পানীয় জল সরবরাহের অন্যতম প্রধান উৎস।

ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুন্দরবন, পাহাড় ও ভূ–গর্ভস্থ পানি—এ তিন প্রাকৃতিক সম্পদেরই গুরুত্ব অপরিসীম।