ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং | সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ২

কোনো একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থবাজারের ঋণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তাই ব্যাংকটি আর্থিক বাজার থেকে আগের তুলনায় বেশি পরিমাণে বেসরকারি বন্ড, সিকিউরিটিজ এবং বিভিন্ন দলিলপত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ঋণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সফলতা আসে।

প্রশ্ন

ক. নিকাশঘর কী?

খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রাবাজারের অভিভাবক বলা হয় কেন?

গ. উদ্দীপকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোন সংখ্যাত্মক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. ঋণ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা কতটুকু? উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. নিকাশঘর হলো ব্যাংকিং লেনদেন থেকে উদ্ভূত আন্ত: ব্যাংকিং দেনাপাওনার নিষ্পত্তিস্থল।

খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মুদ্রার মান বজায় রাখে বলে একে মুদ্রাবাজারের অভিভাবক বলা হয়।

দেশের প্রয়োজনীয় মুদ্রার প্রচলন, নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রাবাজার গঠন ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মুদ্রার পরিমাণ ও ঋণের যথার্থতা মূল্যায়নের মাধ্যমে মুদ্রা ও ঋণের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এতে দেশের মুদ্রাবাজার ও মূল্যস্তর স্থিতিশীল থাকে।

গ. উদ্দীপকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণে সংখ্যাত্মক পদ্ধতি হিসেবে খোলাবাজার নীতি গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন খোলাবাজারে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ কেনাবেচা করে থাকে, তখন তাকে খোলাবাজার নীতি বলে।

উদ্দীপকে উল্লিখিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি অর্থবাজারের ঋণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এ উদ্দেশ্যে ব্যাংকটি বাজার থেকে বেসরকারি বন্ড, সিকিউরিটিজ প্রভৃতি কেনার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। খোলাবাজার নীতিতেও একইভাবে বাজার থেকে বন্ড, সিকিউরিটিজ প্রভৃতি কেনাবেচার মাধ্যমে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সুতরাং উদ্দীপকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকঋণ নিয়ন্ত্রণের যে সংখ্যাত্মক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, তা খোলাবাজার নীতির বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে ঋণ নিয়ন্ত্রণে উক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতির প্রয়োজনে অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য ঋণের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা। উদ্দীপকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থবাজারে ঋণের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ লক্ষ্যে ব্যাংকটি ঋণ নিয়ন্ত্রণের সংখ্যাত্মক পদ্ধতি খোলাবাজার নীতি অনুসরণ করে। এ পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে ব্যাংকটি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সফল হয়। উদ্দীপকে উল্লিখিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি ঋণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে আর্থিক বাজার থেকে বেসরকারি বন্ড, সিকিউরিটিজ এবং বিভিন্ন দলিলপত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে খোলাবাজার নীতি প্রয়োগ করা হয়েছে, যা ঋণ নিয়ন্ত্রণপদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত। সধারণত অর্থবাজারে ঋণ সরবরাহ অপর্যাপ্ত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি বন্ড, সিকিউরিটিজ প্রভৃতি কেনার মাধ্যমে অর্থ সরবরাহ বাড়ায়। আবার বাজারে ঋণের আধিক্য দেখা দিলে ব্যাংকটি বেসরকারি বন্ড বা সিকিউরিটিজ বিক্রি করে। এতে বাজারে অর্থ তথা ঋণের সরবরাহ কমে।

সুতরাং কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি বাজার ঋণ সরবরাহের অপর্যাপ্ততা দূরীকরণে উল্লিখিত সিদ্ধান্ত নেয়, যা যৌক্তিক হয়েছে।