আব্বাসউদ্দীনের জন্মদিনের মেলা দেবীগঞ্জে
দেবীগঞ্জ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রান্তিক গ্রাম। করতোয়ার তীরে, যেখান থেকে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা, সেখানে বসেছিল এক অভূতপূর্ব মেলা। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভুপবাহাদুর ছিলেন কোচবিহারের মহারাজা। আর লোকসংগীতের প্রথম পুরুষ আব্বাসউদ্দীন ছিলেন সেই কোচবিহারের মানুষ। মহারাজারা কেউ নেই, নেই তাঁদের রাজত্ব। কিন্তু সুরের ভুবনে যাঁদের রাজত্ব বিস্তৃত, তাঁরা বিস্মৃত নন। এই মাঠেই সমাগম লাখো মানুষের, যারা রাজাকে স্মরণ করতে এসেছিল আরেক মহারাজার জন্মদিবসে। আব্বাসউদ্দীন আহমদের ১০৮তম জন্মদিন। দোতরা-খঞ্জনি হাতে ভাওয়াইয়ার শত শিল্পী উপস্থিত এই মাঠে। হেমন্তের নরম রোদ্দুরে আসন পেতেছে সকাল থেকে গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে আসা উত্তরাঞ্চলের সংগীত-ক্ষুধার্থ মানুষ, তাদের প্রিয় শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসীর গান শুনবে বলে। তাঁকে তারা কখনো চোখে দেখেনি, গান শুনেছে। এদিকে টেলিভিশন কারও কাছে নেই। শুনেছে তাঁর গান, শুনেছে রেডিওতে বহু বছর। শুনেছে তাঁর বাবার রেখে যাওয়া শত শত গান গ্রামোফোন রেকর্ডের মাধ্যমে। আবার নতুন করে শ্মশ্রুধারী মুস্তাফা জামান আব্বাসী তাদের শোনালেন ভাওয়াইয়া, চটকা, দেহতত্ত্ব বিচ্ছেদী। দেবীগঞ্জের মহারাজার ক্লাবের সদস্যরা তাঁকে সংবর্ধনা দিলেন ক্লাবে, শিল্পী দিলেন তাঁর বাবার ছবি, বই ইত্যাদি। গাছের চারা রোপণ করলেন ক্লাব প্রাঙ্গণে।আব্বাসউদ্দীনের জন্মদিন এর আগে এত ব্যাপকভাবে আয়োজিত হয়েছে বলে জানা যায়নি, বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। এটি আয়োজন করেছিলেন পঞ্চগড়ের ডেপুটি কমিশনার বনমালী ভৌমিক ও তাঁর স্ত্রী রাখি ভৌমিক। দেবীগঞ্জের শত বিদ্যোত্সাহী ব্যক্তি, বিশেষ করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিক্ষকেরা এ আয়োজনের মাধ্যমে একটি অভিনব অনুষ্ঠান রাত ১২টা পর্যন্ত গ্রামবাসীকে উপহার দেন। কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট ও ডোমার থেকে কয়েক শ শিল্পী সংগীতের মাধ্যমে আব্বাসউদ্দীনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।