
ঘটনা এক. পরিবারের সবাই মিলে ১২ জুলাই গ্রামের বাড়ি বরিশালে বেড়াতে যান মোসা. আসমা। বাড়িতে গিয়ে প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় চোখ রাখেন তিনি। একদিন প্রথম আলোর বিনোদন পাতায় ছাপা হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে শুটিং শেষে দেশে ফিরেছেন অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। ওই দিনেই বেড়ানো বাদ দিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা।
ঘটনা দুই. প্রিয় অভিনেত্রীর মমর সঙ্গে ২১ জুলাই শনিবার বিকেল ৫টায় দেখা করার সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আসমা পরিবার নিয়ে বেলা ৩টার মধ্যে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের নির্দিষ্ট শুটিং হাউসে গিয়ে হাজির।
দুটো ঘটনার মাঝের গল্পটুকু তাহলে এবার বলে নেওয়া যাক। আনন্দ কুইজ ৩ বিজয়ী হয়ে প্রিয় তারকা জাকিয়া বারী মমর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান রাজধানী মিরপুরের বাসিন্দা মোসা. আসমা। প্রিয় তারকাকে নিজের চোখে দেখার তর সইছিল না তাঁর। আগ্রহের গোড়ায় আরও জল ঢেলেছিল তাঁর মেয়ে ও স্বামী। মমর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আসমা বললেন, ‘কুইজে বিজয়ী হয়েছি, এটা শোনার পর থেকেই আমরা সবাই মিলে অপেক্ষায় ছিলাম। নির্ধারিত দিন সকাল থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। কোন পোশাক পরব, কীভাবে যাব, কয়টার সময় রওনা দেব—এসব।’
তবে আসমা জানালেন, শুধু তা-ই নয়, প্রিয় তারকার কাছে কোন কোন বিষয় জানতে চাইবেন, তা নিয়েও সবাই মিলে আলাপ করে নেন কয়েক দফা। তারপর দুপুরে খেয়েই রওনা উত্তরার দিকে। দিনটা শনিবার হওয়ায় রাস্তায় খুব একটা যানজট ছিল না। তাই খুব অল্প সময়েই পৌঁছে যান উত্তরার নির্দিষ্ট শুটিং বাড়িতে। আগে থেকেই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বলা ছিল। ঠিকানাও দেওয়া ছিল। মমও জানতেন আজ এক ভক্ত আসবেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।
আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আসমা পুরো পরিবারসমেত হাজির হন শুটিং বাড়িতে। ওই সময় চলছিল দুপুরের খাবারের বিরতি। তাই বন্ধ শুটিং। ততক্ষণে দেখা করতে আসা ভক্তের খবর পৌঁছে গেছে মমর কাছে। খানিক পরে হাজির হন মম। তাঁকে দেখেই আনন্দিত হয়ে ওঠেন আসমা। আসমার ভাষায়, ‘উনি যতক্ষণ আমাদের সঙ্গে ছিলেন, পুরো সময় খুব ভালো লেগেছে। আমার কাছে এটা মনে হয়েছে “মমময়” সময়।’ খাওয়াদাওয়া শেষ করে চা নিয়ে আড্ডায় বসেন মম। অতিথিদেরও চা দেওয়া হয়। আসমা, তাঁর স্বামী ও মেয়ে। আসমা প্রশ্নের ঝাঁপি নিয়ে বসেন যেন; মমর কাছে জানতে চান, ঢাকার কোথায় থাকেন? আগামীতে কী সিনেমা করবেন? ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার কারণ কী?
নতুন সিনেমায় কোন নায়কের সঙ্গে জুটি বাঁধছেন, এ রকম হাজার প্রশ্ন। রীতিমতো পাঁড় সাংবাদিকের মতো একের পর এক প্রশ্ন করছেন আসমা। আনন্দের সঙ্গেই উত্তর দিতে থাকেন মম। তবে একটি প্রশ্নে মম বেশ খুশি হয়ে ওঠেন। পড়াশোনার বিষয় আর কাজের মাধ্যম তো একই, এর ফলেই কি অভিনয়ে এত ভালো করছেন? এ প্রশ্নটিতে খুব খুশি হন জাকিয়া বারী মম। উত্তর দেন বেশ গুছিয়ে। ‘আসলে আমি অভিনয়টাকে ভালোবাসি। এ কারণে পড়াশোনা ও নিজের ক্যারিয়ার একই মাধ্যম হয়েছে। তবে আমার মূল ভালোবাসার জায়গা আমার দর্শক। তাঁদের জন্যই অভিনয় করি। দোয়া করবেন আমার জন্য।’
জাকিয়া বারী মমর মুগ্ধতায় ৩০ মিনিট কেটে যায় নিমেষেই। ততক্ষণে দুপুরের খাওয়ার সময় শেষ হয়ে যায় সবারই। শুটিং শুরু হবে। মমর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে যান আসমা। আসমা বলেন, ‘এত বড় মানুষ অথচ কী সুন্দর করে আমাদের কাছে জানতে চাইলেন, কোথায় থাকি, মেয়ে কোন স্কুলে পড়ে, গ্রামের বাড়ি কোথায়, বর কী করেন।’ শুধু কি খোঁজ নেওয়া, বিদায় নেওয়ার সময় মেয়ে অনন্যাকে প্রিয় সব খাবার কিনে দিয়েছেন মম। আসমার কাছে এই আন্তরিকতা ভোলার নয়। পাশাপাশি আসমার স্বামীও খুশি হয়েছেন। জানালেন, তাঁরও প্রিয় তারকা মম। স্ত্রীর কুইজ বিজয়ে তাঁরও দেখা হয়ে গেল প্রিয় তারকার সঙ্গে।
এবার বিদায়ের পালা। কুইজ বিজয়ী আসমার সঙ্গে ছবি তোলার জন্য দাঁড়াতেই ছবি তোলা বন্ধ করতে বলেন মম। কারণটা পরিষ্কার, শুধু আসমা নন, তাঁর মেয়ের সঙ্গে ছবি তোলার অনুরোধ করেন মম। তা-ই হয়। মেয়ে-মা-মম মিলেই ফেম্রবন্দী হন সেদিন।
>আনন্দ কুইজ ৩-এর উত্তর
১. জাকিয়া বারী মম কত সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার নির্বাচিত হন?
উত্তর: ২০০৬ সালে।
২. মম অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ও পরিচালকের নাম কী?
উত্তর: দারুচিনি দ্বীপ, পরিচালক তৌকীর আহমেদ।
৩. তিনি কোন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান?
উত্তর: ছুঁয়ে দিল মন।
৪. মম অভিনীত সবশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের নাম কী?
উত্তর: আলতা বানু।
৫. তিনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কী বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন?
উত্তর: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নাট্য ও নাট্যতত্ত্ব বিষয়।
বিজয়ী
মোসা. আসমা, মিরপুর, ঢাকা।