রোদঝলমলে প্রভাতে গানের সুর, নাচের ছন্দে শরৎ উৎসব শুরু হলো আজ শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে। করোনা মহামারি প্রতিরোধে আরোপিত বিধিনিষেধের পর রাজধানীতে এই প্রথম কোনো বড় সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজিত হলো। আজ সারা দিন ধরেই উৎসব চলবে।
সকাল সাড়ে সাতটায় স্বপন সরকারের বাংলাঢোলের বোলে সূচনা হয়েছিল উৎসবের। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই আয়োজন করা হয়েছে। এবার নিয়ে ১৬ বছর হলো শরৎ উৎসবের। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
তিনি বলেন, ‘কাশফুল দেখলেই শরতের কথা মনে পড়ে। প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে আমাদের থাকতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করতে হলে প্রকৃতিকে তার নিজের মতো করে রাখতে হবে। ঋতুভিত্তিক এই উৎসবগুলো আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চাকে বিকশিত করার পাশাপাশি প্রকৃতির প্রতিও সচেতন করে তোলে। সে কারণে এ ধরনের উৎসব অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ তাঁর বক্তব্যে ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলোর মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ধর্মীয় উৎসবগুলোর একধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ সব ধর্মীয় উৎসবে অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু শরৎ উৎসব, বসন্ত উৎসব, নবান্ন বা বৈশাখী উৎসবের মতো ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো সব শ্রেণির মানুষকে একতাবদ্ধ করে তোলে। অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সব মানুষের এই ঐক্যবদ্ধতা খুবই জরুরি। সারা দেশেই ঐতিহ্যবাহী ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলোর চর্চা ও প্রসার বৃদ্ধিতে সরকারের আরও বেশি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী বলেন, এই উৎসব সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় বা গ্রন্থাগার চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু কারোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বন্ধ থাকায় উৎসব শিল্পকলা একাডেমি মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একই কারণে উৎসবের আয়োজনেও বিলম্ব হয়েছে। তবে আশার কথা, মহামারির দুঃসময় কাটিয়ে উঠে জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বিগত দিনগুলোর বিষাদ–বেদনা ঘুচিয়ে নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে শুভ্র শরতের এই উৎসব সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে বলেই তাঁদের প্রত্যাশা।
শরৎ বন্দনা করে একক ও দলীয় গান, নৃত্য ও আবৃত্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক’ গান দুটি সম্মিলিত কণ্ঠে পরিবেশন করেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। ‘অমল ধবল পালে’গানের সঙ্গে ছিল নৃত্যজনের শিল্পীদের সমবেত নৃত্য। ‘ওগো আমার আগমনীর আলো’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন স্পন্দনের শিল্পীরা। বহ্নিশিখার শিল্পীরা গেয়েছেন ‘শিশিরে শিশিরে শরতে ভোরের আগমনী’।
অনিমা রায় গেয়েছেন ‘দেখ শুকতারা আঁখি মেলে চায়।’ সজিব গেয়েছেন ‘আজি শারদপ্রাতে শিশিরে’। গানের পর আবার নাচ, ‘খর বায়ু বয় বেগে’ গানের সঙ্গে বুলবুল ললিতকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনা। নৃত্যমের শিল্পীরা নৃত্য করেছেন ‘শরৎ আমার স্নিগ্ধতা’ গানের সঙ্গে। সুরতীর্থের দলীয় সংগীত ছিল ‘আমার নয়ন ভোলানো এলে’। প্রিয়াংকা গোপ গেয়েছেন ‘ভোরের হাওয়ায় এলে ঘুম ভাঙাতে’। বিমান চন্দ্র গেয়েছেন ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি’। ‘ঐ মহাসিন্ধুর ওপার হতে গেয়েছেন’ মামুন জাহিদ খান। আরও ছিল কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়ের সমবেত নৃত্য, আহকাম উল্লাহ ও নায়লা তারান্নুম চৌধুরীর আবৃত্তি। সঞ্চালনা করেছেন মাহফুজা আক্তার ও নুসরাত ইয়াসমিন। বেলা ১১টায় প্রথম উৎসবে প্রথম পর্ব শেষ হয়।
শরৎ উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব এখানেই আবার শুরু হবে আজ বিকেল সাড়ে চারটায়। এ পর্বে থাকবে শিশু সংগঠনগুলোর পরিবেশনা। নবীন ও জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীদের একক গান, দলীয় সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি। উৎসবে যোগ দিতে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।