
১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক টেলিছবি ‘খসরু ভাই ও কয়েকটি নীলপদ্ম’। পরিচালনা করেছেন শামীম আহমেদ এবং অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, মাজনুন মিজান, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, সোহানা সাবা প্রমুখ। টেলিছবির গল্পটি হলো মামুনুর রশীদ স্থানীয় এমপি। ক্ষমতার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি বজায় রাখার জন্য তিনি প্রকাশ্যে জনদরদি সেজে থাকলেও আড়ালে বিস্তার করে রাখেন নানা চক্রান্তের জাল। তাঁর এলাকায় কেউ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেই শুরু হয় তাকে দমনের নানা ষড়যন্ত্র। মাজনুন মিজান এলাকার বেকার যুবক। ন্যায়পরায়ণ ও প্রতিবাদী। আদর্শ শিক্ষক জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের সন্তান। সারা দিন সে এলাকায় মস্তানি করে বেড়ায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় আর ভালোবাসে এমপির মেয়ে সোহানা সাবাকে। তার গায়েপড়া আচরণে ও উপকারে সাবা বিরক্ত। আর এমপি ব্যস্ত, তাকে কী করে তাঁর পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়, সেই চক্রান্তে। শেষ পর্যন্ত এমপি মিজানের সহকারী রাজুকে গোপনে ক্ষমতা ও টাকার লোভ দেখিয়ে দলে টানেন এবং তাকে দিয়ে খুন করান এলাকার জনপ্রিয় ও সমাজসেবী মিজানের শুভানুধ্যায়ী চাচাকে। এরপর মিজানের ওপরই সেই খুনের দায় চাপায় এবং পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় মিজানকে। এককথায় বলা যায়, টেলিছবির গল্পটি সিনেমাটিক, সুপরিচিত ও গতানুগতিক মনে হলেও ছিল বেশ উপভোগ্য। চিত্রনাট্যটিও ছিল বেশ আকর্ষণীয়। চিত্রনাট্য অনুযায়ী সংলাপ, স্থান নির্বাচন ও চিত্রধারণ সবই ছিল প্রসংশনীয়। যে কারণে সাদামাটা ও গতানুগতিক গল্পটিও শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এদিক থেকে বিচার করলে বলতেই হয়, কাহিনিতে অভিনবত্ব তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু চিত্রনাট্য, সংলাপ ও অভিনয় ছিল আকর্ষণীয়। সেই আকর্ষণের কারণেই দর্শক ছবিটি উপভোগ করেছেন বলা যায়। তবু বলব, গণমাধ্যমের জন্য নির্মিত টেলিছবিতে দর্শক শুভশক্তির বিজয় প্রত্যাশা করেন। সেটি বাস্তবে সমর্থন না করলেও নির্মাতা কৌশলে ছবির শেষে শুভশক্তির বিজয়ের আভাসটি দিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু এ টেলিছবিটিতে নির্মাতা তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। করলে ভালো হতো।
১৯ জুলাই রাত ১০টা ৫ মিনিটে চ্যানেল আইয়ে জামাল রেজার পরিচালনায় প্রচারিত হলো সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘সাময়িকী’। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন আবদুর রহমান। এবারের অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন খ্যাতনামা চিত্রনায়িকা কবরী। চ্যানেল আই দীর্ঘদিন ধরে ‘সাময়িকী’ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে আসছে। এবারের অতিথির গুণে অনুষ্ঠানটি বেশ আলোকিত হয়েছিল বলা যায়। অনুষ্ঠানের স্বল্প পরিসরে আমরা একে একে জানতে পারলাম চিত্রনায়িকা কবরীর চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ও অগ্রযাত্রার নানা ঘটনাপ্রবাহ। বিভিন্ন অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালকের সঙ্গে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা এবং সংক্ষেপে জীবনের নানা চড়াই-উতরাইয়ের কথাও। তাঁর এসব স্মৃতিচারণার মাঝে কথার সূত্র ধরে পর্দায় দেখানো হচ্ছিল চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য ও গান। চিত্রনায়িকা কবরী যে কেবল একজন দক্ষ অভিনেত্রীই নন, চৌকস কথকও, দর্শক এ অনুষ্ঠানটি দেখে, তা যথার্থই অনুধাবন করতে পেরেছেন।
তবে একটি কথা না বললেই নয় তা হলো, অনুষ্ঠানটির পরিসর। চিত্রনায়িকা কবরীর কথকতায় অনুষ্ঠানটি যখন মাত্র জমে উঠেছে, ঠিক তখনই অনুষ্ঠানের যবনিকা টেনে দিলেন উপস্থাপক। বিজ্ঞাপন, পরিচিতি—সব মিলিয়ে আধা ঘণ্টাও নয়, মাত্র ২৫ মিনিট। এ ধরনের ব্যক্তিত্বকে নিয়ে এত সুন্দর আয়োজন এত স্বল্পসময়ে সফলভাবে তুলে ধরা সম্ভব নয়। যে কারণে অনুষ্ঠানটি দেখার পর কিছুটা বিকলাঙ্গই মনে হয়েছে। আর উপস্থাপনা সম্পর্কে বলব, আরও গতিশীল ও প্রাণবন্ত হলে দর্শকের কাছে অনুষ্ঠানটি আরও হৃদয়গ্রাহী হবে বলে আশা করা যায়।
এবার আমরা আলোচনা শেষ করব এনটিভিতে সরাসরি প্রচারিত একটি গানের অনুষ্ঠান দিয়ে। ২০ জুলাই শুক্রবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে দেবলীনা সুরের উপস্থাপনায় এনটিভিতে সরাসরি প্রচারিত হলো সংগীতানুষ্ঠান ‘ছুটির দিনের গান’। এদিন শিল্পী ছিলেন জিনাত রেহানা। তিনি প্রায় পাঁচ দশক ধরে আমাদের সংগীতাঙ্গনের একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তাঁর মিষ্টি ও সুরেলা কণ্ঠ একদা আমাদের প্রবীণ প্রজন্মের কাছে ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কালের পরিক্রমায় আজ সেই কণ্ঠের সুর হয়তো কিছুটা মলিন হয়েছে, দমে হয়তো কিছুটা কমতি হয়েছে, কিন্তু কণ্ঠের লালিত্য রয়েছে অনেকটা আগের মতোই। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য শিক্ষণীয় দিকটি ছিল এই যে তিনি এখনো শ্রোতা-হৃদয়ে জেগে আছেন তাঁর নিজের গান দিয়েই। তাঁর বিখ্যাত সেই গানগুলো তিনি একে একে পরিবেশন করেছেন ‘তুমি কাঁকন দিয়ে ডেকেছিলে’, ‘এই চোখেতে কাজল আর আঁকবো না’, ‘সাগরের তীর থেকে মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে’ ইত্যাদি। তিনি এই বয়সেও একটানা প্রায় দুই ঘণ্টা গান করেছেন এ অনুষ্ঠানে, এটি নিঃসন্দেহে দর্শকশ্রোতার জন্য অত্যন্ত আকর্ষণের। শেষে বলব, শুধু হারানো দিনের গান নয়, চ্যানেলগুলো যদি এভাবে সে সময়ের শিল্পীদেরও মাঝে মাঝে বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরে, তাহলে সেটাই হবে গণমাধ্যমের প্রকৃত দায়িত্ব পালন। এনটিভিকে ধন্যবাদ এমন একটি মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য।