টোকিও চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা হলো কসোভোর ছবি
পূর্ব ইউরোপের সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র ঐতিহ্যের ধারা থেকে কসোভো যে খুব বেশি পিছিয়ে নেই, তারই প্রমাণ দিলেন যেন কাৎরিনা ক্রাসনিচি। ৩৪তম টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গ্রাঁ প্রি’ জিতে নিয়েছে কসোভোর এই নারী পরিচালকের ছবি ‘ভেরা সমুদ্রের স্বপ্ন দেখে’। পাশাপাশি টোকিও গভর্নরের পুরস্কারও জিতে নিয়েছে ছবিটি। ৮ নভেম্বর ঘোষণা করা হয় এই পুরস্কার।
ছবির মূল চরিত্র ভেরা প্রচলিত অর্থে আকর্ষণীয় চেহারার কোনো নায়িকা নয়। পড়ন্ত বয়সে স্বামীর মৃত্যু তাকে কঠিন বাস্তবতার মুখে ঠেলে দেয়। প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একা সংগ্রাম করে সে পরাজিত। এই ছবির মধ্যে দিয়ে পূর্ব ইউরোপের সদ্য স্বাধীন দেশগুলোর অবক্ষয় আর রূঢ় বাস্তবতা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক ক্রাসনিচি। আর এই বস্তুনিষ্ঠ প্রতিফলনই তাঁকে এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
এটি তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র। ছবিটি বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনে নতুন এক তারকা পরিচালকের আবির্ভাবের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের জন্য পাঠানো ভিডিও বার্তায় ক্রাসনিচি বলেছেন, দুটি বিশেষ কারণে এই পুরস্কার তাঁকে অভিভূত করেছে। এটা তাঁর প্রথম কাহিনিছবি আর টোকিও চলচ্চিত্র উৎসবে কসোভোর অংশগ্রহণও এবারই প্রথম।
গত ৩০ অক্টোবর শুরু হওয়া এবারের উৎসবের থিম ছিল ‘ক্রসিং বর্ডারস’ বা সীমান্ত অতিক্রম। এই সীমান্ত শুধু ভৌগোলিক সীমান্তই নয়, একই সঙ্গে ভাষা, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ ও অন্যান্য বৈষম্যের বাধা অতিক্রম করে বৈচিত্র্যের সমন্বয়। মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের জন্য বাছাই করা ১৫টি ছবি এই বৈচিত্র্যেরই প্রতিফলন বলে সমাপনী অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেছেন বিচারকমণ্ডলীর প্রধান, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফরাসি অভিনেত্রী ইসাবেল ইয়ুপের।
করোনার কারণে এবারের উৎসব ছিল হাইব্রিড। সরাসরি উপস্থিতির পাশাপাশি অনলাইনেও অংশ নিয়েছেন অনেক অতিথি ও দর্শক। বিশেষ করে বিদেশি অতিথিদের অনেকেই অনলাইনে উৎসবে যোগ দেন। পুরস্কার বিজয়ীরাও তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করেন ভিডিও বার্তায়।
মূল প্রতিযোগিতার বাইরে এশিয়ান ফিউচার বিভাগটি ছিল প্রধানত এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশের নবীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত প্রতিযোগিতা। এই বিভাগে যোগ দেওয়ার একটি আবশ্যকীয় পূর্বশর্ত হলো, পরিচালকের তিনটির বেশি ছবি থাকা চলবে না। এই বিভাগে প্রতিযোগিতার জন্য নেওয়া হয়েছিল মোট দশটি ছবি।
এর মধ্যে সেরা হয়েছে ইরানের পরিচালক হুসেইন তেহরানির ছবি ‘জাহান, নিওকরে শোমালি’ বা ‘ওয়ার্ল্ড, নর্দার্ন হেমিস্ফেয়ার’।
মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে সেরা ছবি ছাড়া ছিল সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী, সেরা শৈল্পিক নির্দেশনা, বিশেষ জুরি পুরস্কার, দর্শক ভোটে সেরা ছবি এবং সম্মানসূচক পুরস্কার। শেষের দুটি পুরস্কারই জিতেছে জাপানি পরিচালক মাৎসুই দাইগোর ছবি ‘জাস্ট রিমেম্বারিং’। ‘পয়েট’ ছবির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন কাজাখস্থানের দারেঝান অমিরবায়েভ।
টোকিও চলচ্চিত্র উৎসবে এবার জমা পড়েছে ১৫৩৩টি ছবি, অংশগ্রহণকারী দেশ ও ভূখণ্ডের সংখ্যা ছিল ১১৩। করোনার মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এতটা সারা পাওয়াকে আয়োজকেরা সাফল্য বলে মনে করছেন।