ডিসেম্বর মাসটা ডাইমব্যাগ ড্যারেলের ভক্তদের জন্য বেশ কষ্টের। কেননা ২০০৪ সালের ৮ ডিসেম্বর ডাইমব্যাগ ড্যারেল তাঁর সে সময়ের গানের দল ড্যামেজ প্ল্যানের সঙ্গে কনসার্টে গান পরিবেশনরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। সেই আততায়ী মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে গুজব রয়ে গেছে। ডাইমব্যাগ ড্যারেলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। আজ ‘আনন্দ’-এর পাঠকদের জন্য অত্যন্ত প্রতিভাবান গিটারিস্ট, যাঁর দ্বারা অগণিত ভক্ত-শ্রোতা ও সংগীতশিল্পী প্রভাবিত, তাঁর কিছু কথা তুলে ধরা হচ্ছে।
হেভি মেটাল, থ্রাশ মেটাল ও গ্রুভ মেটাল ভক্তদের কাছে ‘প্যান্টেরা’ নামের দলটি অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। ডাইমব্যাগ ড্যারেল ছিলেন প্যান্টেরার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও গিটারিস্ট। মঞ্চে যিনি ডাইমব্যাগ ড্যারেল হিসেবেই মূলত পরিচিত ছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম ড্যারেল ল্যান্স অ্যাবট। তিনি ডায়মন্ড ড্যারেল নামেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৯৬৬ সালের ২০ আগস্ট আমেরিকায়। বাবা জেরি অ্যাবট একজন লোকসংগীতশিল্পী ও সংগীত প্রযোজক ছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে ডাইমব্যাগ ড্যারেল গিটার হাতে তুলে নেন। তাঁর প্রথম গিটার ছিল হোন্ডো লেস পল। ছোট একটি অ্যাম্প্লিফায়ারের সঙ্গে সংযুক্ত করে সেই গিটারটা তিনি বাজাতেন। শুরু থেকেই গভীর মনোযোগ দিয়ে তিনি গিটার বাজানো শিখতে থাকেন। বাদ্যযন্ত্রটি বাজানো আয়ত্ত করার লক্ষ্যে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তাঁর পরিশ্রমের ফলাফল বাল্যকাল থেকে পেয়ে আসছেন তিনি।
তিনি সে সময় থেকেই বিভিন্ন স্থানীয় গিটারবাদন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডালাসের ‘দি অ্যাগোরা’ বলরুমের গিটার প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতায় তিনি পুরস্কার হিসেবে ডিন এমএল গিটার পেয়েছিলেন। গিটার ওয়ার্ল্ভ্র ম্যাগাজিনের সঙ্গে ডাইমব্যাগ ড্যারেলের কিছু সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায় যে তাঁকে একটা সময়ের পর থেকে আর গিটারবাদন প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হতো না। তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বলা যায়। এর কারণ ছিল একটাই—ডাইমব্যাগ ড্যারেল প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে অন্য কেউ কখনো জয়লাভ করতে পারত না। তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। যদিও তার আগেই তিনি অসংখ্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়লাভ করে পুরস্কৃত হয়েছেন। ডাইমব্যাগ ড্যারেল ১৯৮১ সালে প্যান্টেরা দলটি গঠন করেন। ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্যান্টেরার সঙ্গে যুক্ত থেকে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় ও বিশ্ববিখ্যাত মেটাল গান সৃষ্টি করেন। তাঁর গিটারবাদনে এক অনন্য স্বকীয়তা ছিল।
প্যান্টেরার শুরুর দিকের অ্যালবামগুলো ল্যাম মেটাল ধারার ছিল এবং অতটা শ্রোতাপ্রিয় নয়। তবে ১৯৯০ সালের অ্যালবাম কাউবয়েজ ফ্রম হেল-এ তাদের আমূল পরিবর্তন দেখা যায়। তখন থেকেই ডাইমব্যাগ ড্যারেলের স্বকীয় গিটার বাদনশৈলী ও গিটারের শব্দ নির্বাচন পরবর্তীকালে অগণিত গিটারিস্টের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলে। ড্যারেলের সেই প্রভাব আজ পর্যন্ত বিদ্যমান। ‘ড্যামেজ প্ল্যান’ নামের নতুন দলটির সঙ্গে অ্যালবাম প্রকাশের পর খুব বেশিদিন আর এই পৃথিবীতে গিটার বাজানোর সৌভাগ্য হয়নি তাঁর।
২০০৪ সালের ৮ ডিসেম্বর ড্যামেজ প্ল্যানের একটি কনসার্ট ছিল ওয়ায়োর কলম্বাসের অ্যালরোজা ভিলাতে। কনসার্ট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর নাথান গেইল নামক সাবেক এক মার্কিন নৌবাহিনীর সদস্য আচমকা মঞ্চে উঠে পড়েন এবং ডাইমব্যাগ ড্যারেলের মাথা লক্ষ্য করে কয়েকবার গুলি ছোড়েন। সেই আততায়ীর গুলিতে স্টেজেই প্রাণ হারান অসামান্য এই গিটারবাদক এবং আরও তিনজন। পরবর্তী সময়ে নানা রকম গুজব ও প্রচার থেকে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা পাওয়া যায় হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে। তবে সেই হত্যাকারীর পারিবারিক সূত্রেও জানা গিয়েছিল যে নাথান গেইল মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিলেন। ডাইমব্যাগ ড্যারেল অপ্রত্যাশিতভাবে এমন বর্বরতার শিকার হওয়ার কারণে আমরা আরও অনেক অসামান্য ডাইমব্যাগ কীর্তি দেখার সৌভাগ্য থেকে চিরতরে বঞ্চিত হলাম। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে। এখনও ডাইমব্যাগার অগণিত ভক্ত তাঁকে নিয়মিত স্মরণ করে এবং সব সময় করবে। মেটালপ্রেমী মাত্রই ডাইমব্যাগের প্রতি অনুরক্ত—একথা বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না।
প্যান্টেরার সঙ্গে ডাইমব্যাগ ড্যারেলের যেসব অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে
মেটাল ম্যাজিক (১৯৮৩)
প্রজেক্টস ইন দ্য জাঙ্গাল (১৯৮৪)
আই অ্যাম দ্য নাইট (১৯৮৫)
পাওয়ার মেটাল (১৯৮৮)
কাউবয়েজ ফ্রম হেল (১৯৯০)
ভালগার ডিসপ্লে অব পাওয়ার (১৯৯২)
ফার বিয়ন্ড ড্রিভেন (১৯৯৪)
দ্য গ্রেট সাউদার্ন ট্রেন্ডকিল (১৯৯৬)
রি-ইনভেন্টিং দ্য স্টিল (২০০০)
মনোয়ারুল হক