আব্দুস ছামাদ। এলাকার মানুষ তাঁকে তিন নামে ডাকেন। কখনো মুক্তিযোদ্ধা, কখনো মিলিটারি আবার কখনো যাত্রার লেখক। শেষের পরিচয়টা ধরে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার কাচিহারা গ্রামের দিকে এগোই। তাঁর বাড়ির সামনে একটা খাল। তার ওপর ইট-পাথরের ঢালাই করা সেতু। সেটা ডিঙানোর আগে তিনিই আমাদের নিতে আসেন। খুবই সাধারণ। পরনে ফতুয়া আর লুঙ্গি। মাথায় টুপি। তাঁর বসার ঘরে বসতেই মেলে ধরেন তাঁর প্রতিভার কিছু নিদর্শন। যাত্রাপালার বই। একেকটা বইয়ের একেক নাম মানুষ কেন কাঁদে, অচল পৃথিবী, ডাইনির ফাঁসি, ধনীর দুনিয়া, এ সমাজ ভাঙল যারা, বেকার কেন কাঁদেসহ অসংখ্য বই। এসব যাত্রাপালা লিখেছেন আব্দুস ছামাদ। কখনো অবসরে, কখনো কাজ করতে করতে।
নিভৃতচারী এই মানুষটির গল্প শুনব আজ। শুরুতেই জানালেন এ পর্যন্ত তাঁর লেখা ৮৬টি যাত্রাপালার বই বেরিয়েছে। এখন তা নিয়মিত মঞ্চস্থ করে বিভিন্ন যাত্রাদল। এ ছাড়া এলাকাভিত্তিক অনুষ্ঠানেও মঞ্চস্থ হয় তাঁর লেখা যাত্রাপালা।
বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ও যাত্রা পালাকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ আগেই জানিয়েছিলেন, দেশে যে কজন যাত্রাপালা লেখক আছেন, তাঁদের মধ্যে আব্দুস ছামাদ অন্যতম। একসময় এমন ছিল, যাত্রার মাইকিং করার সময়ই লেখকের নাম বলতে গিয়ে বলা হতো, ‘ওপার বাংলার প্রখ্যাত নাট্যকার’। সময় বদলেছে। মজিদের ভাষায়, ‘আমরা নিজেরাই যাত্রাপালা লেখায় স্বাবলম্বী। এখন ওপার বাংলাতেই আমাদের লেখা যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়।’
কথা প্রসঙ্গে আরও একটি তথ্য দিলেন আব্দুস ছামাদ। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর চিঠি পেয়ে এরই মধ্যে সেখানে জমা দিয়েছেন নিজের লেখা ৪৯টি যাত্রাপালা।
আব্দুস ছামাদ ১৯৮৯ সালে প্রথম যাত্রা লেখেন। নাম ছিল রক্তের মিন্দি বা দস্যু পাঞ্জা। এটা লেখার পেছনে রয়েছে আরেকটি গল্প। একবার কাচিহারা গ্রামে যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়। কিন্তু ভালো না হওয়ায় দর্শক মঞ্চ ভাঙচুর করে। তখন আব্দুস ছামাদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি করতেন। ছুটিতে বাড়ি এসে এ ঘটনা শুনে লেখেন যাত্রাপালা রক্তের মিন্দি বা দস্যু পাঞ্জা। তারপর নিজে তাতে অভিনয় করেন। ওই বছর তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। যোগ দেন বিজেএমসি পাটকলে। সেখানে পার করেন জীবনের ২৬ বছর। তখন থেকেই নিয়মিত লিখছেন যাত্রাপালা।
তাঁর প্রথম বই অচল পৃথিবী। বইটি ছাপানোর জন্য ২৯ হাজার টাকা ঋণ করেন। অন্য প্রকাশনী তাঁকে চিঠি দিয়ে যাত্রাপালর বই দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
পারিবারিক জীবনে আব্দুস ছামাদের দুই ছেলে। তাঁদের কেউই অবশ্য বাবার পথ মাড়াননি। একজন চাকরি করেন ফায়ার সার্ভিসে, আরেকজন পড়াশোনা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সব শেষে জানালেন, বাস্তব ঘটনা নিয়ে একটা উপন্যাস লিখেছেন। তাঁর বিশ্বাস, তা বই আকারে বের হলে অনেকেই আব্দুস ছামাদকে নতুন করে চিনতে পারবে।