বর্তমান কমিটি কি পুরোনো পথেই হাঁটবে
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০১৭-১৮ মৌসুমের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত ২৪ মে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হয়। সে হিসেবে নির্বাচনের বাকি আছে আর ৯ দিন। অথচ এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি। তবে কি নির্বাচন পিছিয়ে যাচ্ছে? শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে এমন আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
সমিতির গঠনতন্ত্রের ৮ অনুচ্ছেদের (চ)-এ বলা আছে, পূর্ববর্তী কার্যকরী পরিষদের মেয়াদান্তে অতিরিক্ত ৯০ দিনের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে। সেই হিসেবে আগামী ২৪ আগস্টের মধ্যে ২০১৯-২০ মৌসুমের নির্বাচন করা বাধ্যতামূলক।
২০১৫-১৬ সালের নির্বাচিত কমিটি গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে প্রায় এক মাস পর নির্বাচন দিয়েছিল। সেই নির্বাচনে বিজয়ী কমিটি এখনো সমিতি পরিচালনা করছে। তবে কি পুরোনো কমিটির পথ ধরেই হাঁটবে বর্তমান কমিটি?
এ নিয়ে বর্তমান কমিটির প্রতিনিধিদের কেউ মুখ খুলছেন না। একটি বিশেষ সূত্র বলছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু আগস্ট শোকের মাস। তাই নির্বাচন হতে পারে সেপ্টেম্বর মাসে। তবে আগস্টে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বর্তমান কমিটির সহসভাপতি চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘শেষ মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আমরা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেব। গত মাসে এজিএমের তারিখও ঠিক করা হয়। কিন্তু এজিএম হয়নি। পরে জানতে পেরেছি, এজিএমের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন, কমিটির কে কে তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলে কমিটির সবার মতামত নিতে হবে। কিন্তু কমিটির দায়িত্বশীলেরা তা করেননি। এটি দুঃখজনক।’
সঠিক সময়ে নির্বাচন দিতে না পারায় ২০১৫-১৬ সালে নির্বাচিত কমিটির সমালোচনা করেছিলেন কেউ কেউ। পরে তাঁরাই নির্বাচিত হয়ে একই কাজ করছেন। ২০১৫-১৬-এর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও এবারের অন্যতম প্রার্থী অমিত হাসান প্রশ্ন রাখেন, ‘সেই সময়ে এক মাস পিছিয়ে নির্বাচন দেওয়ার কারণে আমাদের সমালোচিত হতে হয়েছিল। এখন সেই সমালোচকেরাই তো কমিটিতে। তাঁরা এতটাই সাধু, তাহলে সঠিক সময়ে নির্বাচন দিচ্ছেন না কেন?’
অমিত হাসান আরও বলেন, ‘তারপরও বলা হচ্ছে, সেপ্টেম্বরে নির্বাচন হবে। কিন্তু এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি। তফসিল ঘোষণার সাত দিন পর তো নির্বাচন হয় না। তার মানে এখনও যেহেতু তফসিল ঘোষণা হচ্ছে না, সুতরাং আগামী সেপ্টেম্বরেও নির্বাচন অনিশ্চিত। আমি একটি সূত্রে জানতে পেরেছি, সেপ্টেম্বর মাসেও নির্বাচন হবে না। প্রয়োজন হলে সাধারণ শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামব।’
সঠিক সময় তো দূরের কথা, নির্বাচন হবে কি না সেটা নিয়েই সন্দেহ পোষণ করেছেন ২০১৫-১৬ মৌসুমের কমিটির নির্বাচিত সহসভাপতি ও আগামী নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী চিত্রনায়ক ওমর সানী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁদের হাবভাব দেখে মনেই হচ্ছে না যে নির্বাচন দেবেন। তাঁদের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। নির্বাচনের কোনো আলামত বা কার্যক্রম দেখছি না। তাঁরা বলছেন শোকের মাস বলে নির্বাচন দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু নির্বাচন দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে জুন-জুলাই মাসেও দেওয়া যেত।’
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় এ নিয়ে কথা বলা যায়নি বর্তমান কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগরের সঙ্গে। তবে সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আরমান বলেছেন, ‘যেকোনো কারণেই হোক, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া যাচ্ছে না। তবে নির্বাচন হবে। আমি মনে করি, আরও আগেই তফসিল ঘোষণা করা উচিত ছিল।’
নায়ক অমিত হাসান জানিয়েছেন, সাধারণ শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে শিগগিরই বৈঠক করবেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রয়োজনে অনিয়মের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন তাঁরা।