
১৯৬৪ সালে ওপার বাংলা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। চেষ্টা-পরিশ্রম আর নিজের প্রতিভার গুণে হয়ে অল্প দিনেই হয়ে ওঠেন ঢাকার সিনেমার ‘সুপারস্টার’। গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের কিংবদন্তি অভিনেতা রাজ্জাক একসময় হয়ে ওঠেন ‘নায়করাজ’।
‘নায়করাজ’ই তো! গত ৫০ বছরে অজস্র কালজয়ী ছবিতে কাজ করেছেন রাজ্জাক। ‘এতটুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘নাচের পুতুল’, ‘পিচঢালা পথ’, ‘আবির্ভাব’, ‘দ্বীপ নেভে নাই’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘রংবাজ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘শুভদা’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’–এর মতো ছবিগুলো তাঁকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের ‘রাজা’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের রাজাকে চিনেছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক-চিত্রনাট্যকার আহমদ জামান চৌধুরী। যিনি ছবির জগতে ‘খোকা ভাই’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। আশির দশকে রাজ্জাককে তিনি ‘নায়করাজ’ উপাধি দিয়েছিলেন। রাজ্জাক উপাধিটি পেয়েছিলেন এমন একটা সময়, যখন অভিনয় দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করছিলেন। পত্রিকায় ক্রমাগত লিখতে লিখতে নামটির প্রচলন হয়ে যায়।
আহমদ জামান চৌধুরী নিজ গুণেই এ দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটা বড় জায়গা পাবেন। সিনে-পত্রিকা ‘চিত্রালী’তে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। চলচ্চিত্র নিয়ে লেখার পাশাপাশি তিনি চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘পিচঢালা পথ’, ‘নতুন নামে ডাকো’, ‘নাচের পুতুল’, ‘বাদী থেকে বেগম’, ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’, ‘শ্বশুরবাড়ি’, ‘মিস লংকা’, ‘দূরদেশে’র মতো অনেক বিখ্যাত ছবির।
রাজ্জাক জীবদ্দশাতেই বারবার স্বীকার করতেন তাঁর প্রিয় ‘খোকা ভাই’য়ের অবদান। তাঁর ‘নায়করাজ’ হয়ে ওঠার পেছনে আহমদ জামান চৌধুরীর অবদান তিনি ভোলেননি আমৃত্যু।
আজ চলে গেলেন রাজ্জাক। মৃত্যু অমোঘ। কিন্তু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই প্রবাদপুরুষ ‘নায়করাজ’ হয়েই বেঁচে থাকবেন আগামী দিনগুলোতে; আর যে নামের কারণে বারবার আসবে ‘খোকা ভাই’-এর নাম। ২০১৩ সালের মার্চে মারা যান আহমদ জামান চৌধুরী।