৫১ বছর বয়সেও দাপটের সঙ্গে বিচরণ করছেন হলিউডে। অস্কার জয়ের পর থেকে আত্মবিশ্বাস যেন বহুগুণ বেড়েছে তাঁর। অভিনয়ে বৈচিত্র্য আর প্রভাবশালী পর্দা-উপস্থিতিই তাঁর সাফল্যের রহস্য। তিনি গ্র্যাভিটি, দ্য ব্লাইন্ড সাইট আর দ্য হিট ছবির অভিনেত্রী স্যান্ড্রা বুলক। আওয়ার ব্র্যান্ড ইজ ক্রাইসিস নামের নতুন ছবিটির মূল আকর্ষণ তিনি। হাস্যরস, নাটকীয়তা আর রাজনৈতিক উপাদানে ভরপুর এই চলচ্চিত্র যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাচ্ছে ৩০ অক্টোবর। এ ছবিতে স্যান্ড্রা অভিনয় করেছেন নির্বাচনী প্রচার কৌশল নির্ধারণকারী জেন বোডলিনের চরিত্রে। দায়িত্ব পালন করার জন্য তাঁকে যেতে হয় বলিভিয়ার লা পাজ শহরে।
পিটার স্ট্রগানের চিত্রনাট্য আর ডেভিড গর্ডন গ্রিনের পরিচালনায় ছবিতে হাস্যরস যেমন আছে, তেমনি বিশ্বরাজনীতির নানা বিষয়ের প্রতি রয়েছে সূক্ষ্ম বিদ্রূপ। লাতিন আমেরিকার একটি দেশের নাজুক অর্থনীতিকে বাঁচাতে নব্য উদারপন্থীরা কীভাবে বিশ্বায়ন আর বেসরকারীকরণের ফাঁদে পা রাখে, তাই দেখানো হয়েছে ছবিতে। বেসরকারি সংস্থার পরামর্শকেরা প্রার্থীকে জেতানোর জন্য নির্বাচনী প্রচার অভিযানে অনেক সময় কীভাবে কূট বাণিজ্যিক কৌশল বেছে নেন, সেসবও দেখা যায় এই ছবিতে। অন্য দেশের রাজনীতিতে মার্কিন হস্তক্ষেপের সমালোচনাও বলা যায় আওয়ার ব্র্যান্ড ইজ ক্রাইসিসকে।
একই নামে আগে একটা প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছিল। নতুন ছবিটির গল্পে সেই কাহিনির রেশ রয়েছে। সেটা ২০০২ সালে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়কার ঘটনা। তাতে প্রার্থী হয়েছিলেন গনজালো সানচেস দে লোসাদা। জেতার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করেন। জনমত জরিপে তাঁর অবস্থান ছিল নাজুক। বলিভিয়ার লোকজনের অভিযোগ, গনজালো বড্ড বেশিই মার্কিনঘেঁষা। তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে যেসব কৌশল শিখিয়ে দেয়, সেগুলো কাজে লাগিয়ে তিনি উতরে যান। স্বল্প ব্যবধানে জয়ী হয়ে ক্ষমতা নেন । কিন্তু তাঁর শাসনে দেশের পরিস্থিতির অবনতি হয়। একপর্যায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন গনজালো।
তবে নতুন ছবিতে সেই প্রামাণ্যচিত্রের কাহিনির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখানে মূল চরিত্র একজন ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী নারী, যিনি প্রচারণার লড়াইয়ে বৈরী প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে চারবার হেরে যাওয়ার পরও হাল ছাড়েন না। চূড়ান্তভাবে নিজের সামর্থ্য যাচাই করে দেখার জন্যই বলিভিয়ায় যান। সব মিলিয়ে এটা পরামর্শকদের পারস্পরিক লড়াইয়ের গল্প। কয়েকটি কৌতুককর দৃশ্যসংবলিত ছবিটিতে স্যান্ড্রা নিজেকে তুলে ধরেছেন একটি ছায়াময়ীর রূপে। বাইরে থেকে দেখে কী মনে হলো, তাতে তিনি মাথা ঘামান না। আর এই গুণের কারণেই তিনি পৌঁছে যান সাফল্যের দরজায়। নিপুণ দক্ষতায় মোকাবিলা করেন নানা সংকট।
রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের জন্য এমন সব পরামর্শক বা উপদেষ্টাকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যাঁরা আদতে রাজনীতির লোক নন, বরং করপোরেট ব্যবসা জগতের মানুষ। আওয়ার ব্র্যান্ড ইজ ক্রাইসিস ছবিতে দেখানো হয়েছে এ ধরনের পরামর্শকেরা কীভাবে গণতন্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা দেন, যাতে বিশ্বায়নের ছলে পশ্চিমা ক্ষমতাধর দেশের হস্তক্ষেপের সুযোগ অবারিত থাকে। এমনকি ওই পরামর্শকেরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসও করেন যে তাঁরা আরেকটি দেশে গিয়ে সেখানকার সমস্যা সমাধান করে দিতে পারবেন!
আওয়ার ব্র্যান্ড ইজ ক্রাইসিস ছবিতে স্যান্ড্রা যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তা আসলে একজন পুরুষ অভিনেতার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। স্যান্ড্রার অন্তরঙ্গ বন্ধু ও হলিউডের তারকা অভিনেতা-প্রযোজক জর্জ ক্লুনি নিজেই চরিত্রটি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ছবির কাজ নানা কারণে বিলম্বিত হওয়ায় সবকিছু বদলে যায়। স্যান্ড্রা তখন অভিনয়ের জন্য জুতসই চরিত্রের খোঁজ করছিলেন। একপর্যায়ে ক্লুনি ও তাঁর প্রযোজনা-অংশীদার গ্র্যান্ট হেসলভ ওই ছবির মূল চরিত্রটি কিছুটা বদলে দিয়ে নারীতে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন, স্যান্ড্রার জন্যই। তারপর নিজের কাজে তিনি কতটা সফল হয়েছেন, সময়ই বলে দেবে।
ভ্যানিটি ফেয়ার, হলিউড রিপোর্টার, ইনকুইজিটর ও পিপলস ওয়ার্ল্ড অবলম্বনে