অনম বিশ্বাস
অনম বিশ্বাস
>হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত চরিত্র মিসির আলি প্রথমবারের মতো পর্দায় আসছে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। দেবী মুক্তি পাচ্ছে ৭ সেপ্টেম্বর। হ‌ুমায়ূনের উপন্যাস দেবী থেকে চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক অনম বিশ্বাস। সম্প্রতি মুক্তি পেল মিসির আলি চরিত্রের টিজার। এর আগে রানু চরিত্রের টিজারটিও বেশ প্রশংসিত হয়। এসব নিয়েই কথা হলো তাঁর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রণব ভৌমিক।

দেবী’তে পরিচালক হলেন আপনি। প্রথম পরিচালনার অনুভূতি কেমন?
ছবিটা তো আসলে জয়া (আহসান) আপার প্রযোজনায় তৈরি হয়েছে। এ জন্য তিনি সরকারের কাছে অনুদান পেয়েছেন। আমার যুক্ত হওয়া অনেকটা একসিডেন্টাল। আরও অনেক গুণী পরিচালক তো ছিলেন। সবার সঙ্গেই তাঁর ভালো যোগাযোগ আছে। কিন্তু কোনোভাবে কেউ হয়তো আমার কথা তাঁকে বলেছিলেন। ঘটনাটা আমার জন্য খুব এক্সাইটিং ছিল। কারণ, হুমায়ূন আহমেদ আমার অনেক পছন্দের একজন লেখক। আমাদের যে প্রজন্ম, যারা আশি-নব্বইয়ের দশকে বেড়ে উঠেছি, এই সময়টায় তো অনেক কিছু ছিল না। আমাদের জন্য বই ছিল সময় কাটানোর, বিনোদনের একটা বড় উপাদান। আমাদের প্রেম, ঔদাসীন্য, দুষ্টুমি, ফাজলামো অনেক কিছু হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস দ্বারা প্রভাবিত। সোজা কথায় আমাদের জীবন থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া যাবে না। হুমায়ূন আহমেদের লেখা আমাদের কাছে শুধু সাহিত্য না বা বুদ্ধিবৃত্তিক কিছু না, এটা ভেতরের একটা জায়গা। আর দেবীও অনেক ছোটবেলায় পড়া অনেক পছন্দের একটা উপন্যাস।

ছবির টিজারগুলো প্রশংসিত হয়েছে বেশ...
অবশ্যই হুমায়ূন আহমেদ এখানে একটা বিশাল ব্যাপার। জয়া আহসান ও চঞ্চল চৌধুরীও একটা কারণ। রানু ও মিসির আলি, তাঁরা প্রধান চরিত্র। দুজনকেই মানুষ অসম্ভব পছন্দ করেন। টিজারে আমরা একটা রহস্য, একটা মিষ্টিক চরিত্র দিয়েছি, যেটা মিসির আলির বৈশিষ্ট্য। এখন পুরো ছবিতে সেটা কীভাবে দেখাতে পারব, সেটাই দেখার। আমরা অনেক দ্রুত শুটিং করেছি। গত বছরের মার্চে শুটিং শুরু হয়েছিল। দুই ঘণ্টার মতো এই ছবি ২৪ দিনে শুট করা।

অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় নির্মিত হয়েছে দেবী
অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় নির্মিত হয়েছে দেবী

 ‘দেবী’ ১৯৮৯ সালের একটি উপন্যাস। এর মধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে। বাংলাদেশের কোন রূপটা দর্শক দেখতে পাবেন এখানে?
আমি বাংলাদেশকে এখনকার জায়গা থেকে দেখাতে চেয়েছি। একদিকে আমাদের জীবনে অনেক উপাদান। আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার করি, পুরো জাতি দুর্দান্ত গতিতে দৌড়াচ্ছে টাকার জন্য। অনেক জটিল একটা সময়ের মধ্যে আমরা বাস করছি। আবার অন্যদিকে আমাদের এখানকার ভূমি সমতল, একটা সমুদ্র আছে, অসংখ্য নদী, বর্ষাটা অনেক লম্বা সময় ধরে হয়। সুতরাং আমরা একটা বিশেষ অনুভবের মধ্যে সারা বছর ধরে থাকি। আমাদের এখানে বাউল কেন? আমার ধারণা, এই ভূগোল আর আবহাওয়ার কারণেই। দেখবেন সব পরিবারেই একজন থাকে একটু বাউন্ডুলে প্রকৃতির। এই ঔদাসীন্য আসলে আমাদের জিনের ভেতরে। আবার আমাদের জীবনে অতিপ্রাকৃত ব্যাপারটা আছে। ইতিবাচক-নেতিবাচক দুভাবেই আছে। আমার মনে হয়েছে, এই জায়গাগুলোকে কিছুটা হলেও ধরার সুযোগ ছিল এই গল্পটাতে। আমি বাংলাদেশের এই অনুভবগুলোকেই ধরতে চেয়েছি।

 ‘আয়নাবাজি’র চিত্রনাট্যকার ছিলেন, ‘দেবী’র চিত্রনাট্যও আপনার। দুই চিত্রনাট্য লেখার অভিজ্ঞতায় কোনো তফাত ছিল?
আয়নাবাজির আইডিয়াটা প্রথম আলো থেকেই পেয়েছিলাম। একটা নিউজ পড়েছিলাম, একজন আরেকজনের হয়ে জেল খেটেছেন। তারপর গল্পটা বানাতে হয়েছে। আয়নাবাজি লেখাটা ছিল আমার আবিষ্কারের আনন্দের মতো। যেন পাহাড়ে ঘুরতে গেছি, একটু পা পিছলে যাচ্ছে, আবার উঠছি। আর দেবী ছিল সমস্যা সমাধানের মতো। গল্পটা লেখা আছে, কিন্তু এটাকে দেখাতে হবে। এমনভাবে দেখাতে হবে যেন হুমায়ূন আহমেদের মূল লেখাটার চেয়ে ভিন্ন কিছু না হয়ে যায়। পুরো গল্পটা রেখে আমি আমার ইন্টারপ্রিটেশন দিয়েছি। যেমন একটু আগে বলছিলেন, দেবী আশির দশকের গল্প। আমরা সময়টায় কিছু পরিবর্তন এনেছি। মনে হবে যেকোনো সময়েরই গল্প হতে পারে এটা, আবার এতে আশির দশকের স্বাদটাও থাকবে।

‘দেবী’ চলচ্চিত্র থেকে পাঠকেরা কী পাবেন?
আমি চাই সবাই জেনেবুঝেই আসুক, এটা কোনো ভূতের গল্প নয়। কোনো রহস্যগল্পও নয়। এটা একটা মেয়ের গল্প, যে অন্য জগতে থাকে। মনে হয় সে পাগল, কিন্তু আসলে পাগল না। তার মনস্তাত্ত্বিক যাত্রা। সে যাত্রায় যুক্ত হয় মিসির আলি। রানুর মনের ভেতর দিয়ে আমরা সবাই যাব। হুমায়ূন আহমেদ পড়েন, এমন সবার কাছে গল্পটাকে নিয়ে যেতে চাই আমি।

 আপনি কি মিসির আলির আরও অন্য গল্প নিয়ে ছবি বানাতে চান? কলকাতায় যেমন ফেলুদা, ব্যোমকেশ, শবরকে নিয়ে হয়...
সেটা তো অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। দেবী যদি দর্শক ভালোভাবে নেন, আর সবকিছু যদি ঠিকঠাক থাকে, তবে কেন নয়।