সাহিত্য দিয়ে শুরু, গান দিয়ে শেষ

সকাল থেকে সন্ধ্যা। মাঝখানে সামান্য বিরতি। একনাগাড়ে অনুষ্ঠিত হয় সাহিত্যবিষয়ক চারটি অধিবেশন। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় গানের আসর। এভাবেই গতকাল শুক্রবার কাটল বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসবের তৃতীয় দিনটি।
সাহিত্য আর বাংলা গানের মেলবন্ধনে গতকাল নগরের মাছিমপুর এলাকার আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে আয়োজিত এই উৎসব হয়ে উঠেছিল প্রাণবন্ত ও বৈচিত্র্যময়। সকাল সাড়ে ১০টায় ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতিবিষয়ক মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম-এর উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। সম্মেলনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত।
উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন প্রাবন্ধিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এ পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, ভারতের প্রাবন্ধিক অমিয় দেব, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির সভাপতি শাঁওলী মিত্র ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। পরে ‘সমকালীন বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। কবি আসাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক মূল বক্তা ছিলেন। আলোচনা করেন কলকাতার লেখক অনিতা অগ্নিহোত্রী ও বাংলাদেশের অনুবাদক সুরেশরঞ্জন বসাক।
বেলা তিনটায় ‘সমাজবাস্তবতা ও বাংলাদেশের সাহিত্য’ শীর্ষক দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বের মূল বক্তা ছিলেন বেগম আকতার কামাল। ভারতের বিশিষ্ট সাহিত্যিক অমিয় দেবের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন গবেষক বিশ্বজিৎ ঘোষ ও কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল। এরপর ‘সাহিত্যে ঐতিহ্য চেতনা ও স্বরূপ সন্ধান’ শীর্ষক অধিবেশনে মূল বক্তা ছিলেন ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তাত্ত্বিক তপোধীর ভট্টাচার্য। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন প্রাবন্ধিক সনৎকুমার সাহা। আলোচনা করেন কবি-অনুবাদক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান ও ভারতের গবেষক সৌমেন ভারতীয়া।
প্রথম দিনের সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদ। ‘সাহিত্যে নারীজীবন’ শীর্ষক এ অধিবেশনের মূল বক্তা ছিলেন কবি রুবী রহমান। এ পর্বে আলোচক ছিলেন কলকাতার কবি মন্দাক্রান্তা সেন, লেখক অশোক মুখোপাধ্যায় ও বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক শাহীন আখতার। এসব অধিবেশনে বক্তারা বলেন, বাংলা সাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। তবে যথাযথভাবে অনুবাদ না হওয়ায় বাংলা সাহিত্য বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে পারছে না।
সাহিত্য সম্মেলনের পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হাসন রাজা মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
আলোচনা সভার পর শুরু হয় গানের অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাগাশ্রয়ী বাংলা গান পরিবেশন করছিলেন শিল্পী বর্ণালী চট্টোপাধ্যায়। এরপর নজরুলসংগীত ও সেকালের বাংলা গান পরিবেশন করার কথা রয়েছে বিশিষ্ট শিল্পী সুবীর নন্দী ও ঝুমা খন্দকারের। সবশেষে সংগীতশিল্পী কৃষ্ণকলি ও তাঁর দলের সদস্যদের জীবনমুখী বাংলা গান পরিবেশন করার কথা।
আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত চলবে ১০ দিনব্যাপী এ উৎসব।
আজকের পরিবেশনা
সকাল সাড়ে ১০টায় সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কালি ও কলম সাহিত্য সম্মেলন’ শুরু হবে। আজ মোট পাঁচটি অধিবেশন হবে। এগুলো হচ্ছে: ‘ষাটের দশক: তখনকার গল্প এখনকার স্মৃতি’, ‘কবিতার ভুবনে বিরোধাভাস’, ‘অন্য দেশে অন্য জীবন প্রবাস চিত্র’, ‘সাহিত্য থেকে মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে সংযোজন এবং পরিক্রমা’ ও ‘লোকসাহিত্য’।
এসব অধিবেশনে বাংলাদেশের লেখকদের মধ্যে শামসুজ্জামান খান, আসাদ চৌধুরী, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সুব্রত বড়ুয়া, আবুল মোমেন, আনিসুল হক, মামুনুর রশীদ, কায়সার হক, জাকির হোসেন রাজু, ফৌজিয়া খান, আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সাইমন জাকারিয়া ও সুমনকুমার দাশ; ভারতের লেখকদের মধ্যে অমিয় দেব, শাঁওলী মিত্র, গঙ্গাপ্রসাদ বিমল, মন্দাক্রান্তা সেন, আশিস সান্যাল, শতরূপা সান্যাল ও অংশুমান ভৌমিক এবং নেপালের সাহিত্য সমালোচক মহেশ পদওয়ালের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে থিয়েটার আর্ট ইউনিট মঞ্চনাটক আমিনা সুন্দরী মঞ্চায়ন করবে। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে হাসন রাজা মঞ্চে আতাউর রহমান মিন্টু ও তাঁর দল গম্ভীরা পরিবেশন করবে। এরপর ইফ্ফাত আরা দেওয়ান সেকালের বাংলা গান এবং খায়রুল আনাম শাকিল নজরুলসংগীত পরিবেশন করবেন। সবশেষে লোকসংগীত পরিবেশন করবেন লাবিক কামাল গৌরব, নবনীতা চৌধুরী ও বেবি দেওয়ান।