'গ্যাংগ্রুপ'-এর গল্প

আড্ড তাঁরা তিন বন্ধু: নওমি, ইমরান ও পূজা। ছবি: সৈকত ভদ্র
আড্ড তাঁরা তিন বন্ধু: নওমি, ইমরান ও পূজা। ছবি: সৈকত ভদ্র

‘ইশ্! এখানে দেখি আমাদের অনেক ভক্ত!’—বললেন নওমি। যখন হাতিরঝিলের রাস্তায় গানের জগতের তিন বন্ধু পূজা, নওমি ও ইমরান ক্যামেরাবন্দী হচ্ছেন, তখন জমেছে ভক্তদের ভিড়।
এদিকে ছবি তোলার ফাঁকে ইমরানের মুখে গান ‘মানে না মন...।’ ‘শুধু অকারণ দূরে গেলে বাড়ে জ্বালা...।’ ইমরানের মুখ থেকে গানের পরের লাইনটি যেন কেড়ে নিলেন পূজা। হঠাৎ এক ভক্ত ইমরানের সামনে এসে বললেন, ‘ভাই, আমি মানে না মন গানটি আপনাকে শোনাতে চাই।’ ইমরান কিছু বলার আগেই ‘শোনান শোনান,’ পূজা ও নওমির চিৎকার। এ ঘটনায়ই বোঝা যায়, ইমরান, পূজা ও নওমি হরিহর আত্মা।
গানের মানুষ হিসেবে এ প্রজন্মের এ তিনজনকে নতুন করে পরিচয় করানোর কিছু নেই। নিজেদের অ্যালবামের পাশাপাশি ইমরান-পূজার দূরে দূরে, মানে না মন এবং নওমির হূদয়ের সীমানা মিউজিক ভিডিও এখন দারুণ জনপ্রিয়। তবে গানের বাইরে এই তিন শিল্পী যে একে অপরের কাছেরও বন্ধু।
তিন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা শুরু হয়েছে পূজার বেইলী রোডের বাসায়। বিকেলের এক চিলতে রোদ সে সময় ঘরের ভেতর। সেই রোদের আভা তিনজনের মুখেই।
কে বেশি জনপ্রিয়? আড্ডার শুরুতে প্রশ্ন। একসঙ্গে ‘আমি আমি’ বলে চিৎকার। তিনজনই হাত তুললেন। একসময় পূজা বললেন, ‘আমরা তিনজনই গানের রাজা!’ এবার ‘হ্যাঁ হ্যাঁ’ বলে সায় দিলেন দুই বন্ধু ইমরান ও নওমি।
তিন বন্ধুর মধ্যে ইমরান আবার সংগীত পরিচালক। তিনি বললেন, ‘আমার স্টুডিওতে বসেই আমরা গানের চর্চা করি। বলতে পারেন, আমরা গানের বন্ধু, প্রাণের বন্ধু।’
এর সঙ্গে যোগ করলেন পূজা, ‘আমাদের যে কারও গান জনপ্রিয় হলে কিংবা গানের জন্য কেউ পুরস্কারের মনোনয়ন পেলে তিনজনেরই সমান খুশি লাগে।’
‘সম্পর্কটা এমনই, নতুন গানে কণ্ঠ দেওয়ার প্রস্তাব পেলে তিনজন পরামর্শ করেই গানে কণ্ঠ দিই।’ নওমি বললেন।
এই শিল্পীদের প্রত্যেকেরই একটি করে একক অ্যালবামের কাজ এখন শেষের পথে। চলচ্চিত্রেও কণ্ঠ দিচ্ছেন এ তিনজন ।
বর্তমান চলচ্চিত্রের গানের মান এবং পুরোনো দিনের চলচ্চিত্রের গানের মানের ফারাক আছে কি?
নওমি বললেন, ‘পুরোনো দিনের গান অসাধারণ। তবে বর্তমান সময়েও ভালো গান হচ্ছে।’ কথার মধ্যে পূজা ঢুকে বললেন, ‘এখনকার গানও হয়তো ২০ বছর পর কালজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।’
তাহলে অডিও শিল্পের এ অবস্থা কেন?
‘আমরা তো ভালো গানের জন্য যুদ্ধ করছি।’ ইমরানের কথা। তবে নওমির অভিযোগ, ‘পাইরেসির কারণেই অডিও শিল্প ধ্বংস হচ্ছে। এবং পাইরেসির সঙ্গে অডিও কারখানা জড়িত।’
তিনজনের বন্ধু হওয়ার গল্প বেশ লম্বা। ২০০৩ সালে নতুন কুঁড়ির প্রতিযোগিতার মঞ্চে তিনজনের প্রথম পরিচয়। ওই বছরই জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় আবার দেখা। এরপর টানা ২০০৫ পর্যন্ত গানে বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় পর্যায়ে তিনজনই একাধিক পুরস্কার জিতেছেন। এভাবে কাছাকাছি এলেন তিনজন।
পূজার নিজের মুখ থেকে বাকিটা শুনি, ‘মাঝের সময়টায় আমাদের খুব যোগাযোগ ছিল না। ২০০৮ সালে চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ ও ক্ষুদে গানরাজ প্রতিযোগিতায় আবার একসঙ্গে হই আমরা। এরপর থেকে বন্ধুত্বটা সুদৃঢ় হয়েছে।’
পূজা এরপর খুনসুটি করে ইমরানকে বললেন, ‘ফটোসেশনে তুমি দেরি করেছ। তোমাকে “গ্যাংগ্রুপ” থেকে বহিষ্কার করা হবে। শাস্তি হিসেবে “কোর্টমার্শাল” হবে।’ এ সময় যে তিনজনই একসঙ্গে হা হা হা... হাসির ফোয়ারা ছোটাবেন, এ তো জানা কথা। কিন্তু ‘গ্যাংগ্রুপ’? ‘কোর্টমার্শাল’? নাওমি জানালেন, এই গ্যাংগ্রুপ কোনো সন্ত্রাসী দল নয়! গান নিয়ে তিনজনের উত্তেজনা থাকে সব সময়ই। তাই তাঁদের এই দলকে গ্যাংগ্রুপ নাম দিয়েছেন তাঁরা। আর এ দলে কোনো সদস্যের কথার সঙ্গে কাজের গরমিল হলেই তাঁর ওপর ভর করে ‘কোর্ট মার্শাল’। মানে কেএফসিতে খাওয়া-দাওয়ার পুরো বিল পরিশোধ করতে হবে তাঁকে!