শুভ জন্মদিন হুমায়ুন ফরীদি

হুমায়ুন ফরীদি
হুমায়ুন ফরীদি

বাংলাদেশের অভিনয়-জগতের উজ্জ্বলতম শিল্পী ছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। তাঁর সময়ে নিজস্ব অভিনয়ের জৌলুসে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আজ তাঁর ৬৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭০ সালে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জৈব রসায়ন বিভাগে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্থগিত হয়ে যায় পড়াশোনা। স্বাধীনতার পর অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেধার স্বাক্ষর রাখেন প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলে। প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক সম্মান পরীক্ষা পাস করেন। এমন ফল নিয়ে যে কেউ বেছে নিতে পারেন নিশ্চিত জীবনের পেশা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা। কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছিলেন অভিনয়কে। তিনি লেখালেখি করলে হতে পারতেন কবি। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের এই শক্তিমান অভিনেতা মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শূন্যতা অপূরণীয়।

বাংলাদেশের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র দর্শকেরা তাঁকে বেশি চেনেন খলচরিত্রের একজন অসাধারণ অভিনেতা হিসেবে। তবে যেকোনো চরিত্রেই ছিলেন সপ্রতিভ। স্বাধীনতা-উত্তরকালে বাঙালির নিজস্ব অভিনয় আঙ্গিক নির্মাণে সেলিম আল দীন, নাসির উদ্দীন ইউসুফদের মতো নাট্যকার-পরিচালকদের পাশাপাশি তিনিও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনের সঙ্গে। সপ্রতিভ অভিনয়ের জন্য খ্যাতি রয়েছে মঞ্চনাটকে; দিয়েছেন নির্দেশনাও। আশির দশক থেকে শুরু করে আমৃত্যু অভিনয় করেছেন টেলিভিশনের অনেক নাটকে। অভিনয়ই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। ছাত্রজীবনে যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারে। অভিনয়ের নেশা ছিল বাচিক শিল্পের আরেক মাধ্যম আবৃত্তিতেও। জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
হুমায়ুন ফরিদীর ভক্ত ও প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য পুনঃপ্রকাশিত হলো তাঁর লেখা একটি কবিতা। নাম ‘ছায়া’। কবিতাটি মাসিক গণসাহিত্য পত্রিকার ১৩৮৫ সালের কার্তিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

.
.

ছায়া
হুয়ায়ুন ফরীদি

এই মাটি, মৃত্তিকার গান হঠাৎ হারিয়ে যায়
নিরাকার সন্ধ্যা বৃক্ষের ফোঁকড়ে বাঁধে বাসা
কুলবতী কালোবাউ নদীজলে ধুয়ে ফেরে বাসন-কোসন
হাওয়া কাঁপে হাওয়া, ঘাসের সান্নিধ্যে ঘুমোয়
বিন্দুজলে স্বচ্ছন্দে সংসার সুখ নীচে যত টুনীর পায়ের
একা একা কিশোরীর স্নেহ-ডোবা চোখে ভর করে
দুপুরের নির্জন ভীতি নিসহায় উনুনে পড়ে জল

আমার ঘরের পাশে লম্বিত সুপুরীর গাছ
তবুও অপেক্ষা ক’রে পাশে মেঘে মেঘে ভিজে যায় বেলা
এই নদী ভেজে কাক ঘাটে বাঁধা নৌকোর
সুশীল পাটাতন; উচ্ছিষ্ট কচুরীর ফুল।