থিয়েটারওয়ালা রেপার্টরি ২০১০ সালে মঞ্চে এনেছিল শাইলক অ্যান্ড সিকোফ্যান্টস। মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের। নতুন নাটক আনতে আনতে কেটে গেছে সাতটি বছর। ২০১৭ সালে মঞ্চে আসছে তাদের নতুন নাটক আন্তন চেখভের দ্য বিয়ার। নামটি অবশ্য জবর আজব ভালোবাসা।
রমজানের একবিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে যখন পৌঁছাই, তখন সুনসান চারদিক। মহড়াকক্ষে অভিনয়শিল্পীরা বিশ্রাম নিচ্ছেন। খানিক পরে আবার শুরু হলো মহড়া।
স্বামীর মৃত্যুশোকে স্তব্ধ স্ত্রী প্রভা। চার দেয়ালেই বন্দী করে রাখবে নিজেকে, এই তার পণ। কিন্তু এ সইতে পারে না বাড়ির কেয়ারটেকার সবুর। সে তাকে বাইরে ঘুরতে যেতে বলে। হাতিরঝিলের সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়। আন্তন চেখভের নাটকে ঢাকার হাতিরঝিল! এরই মধ্যে দরজায় ঠক ঠক! খুলতেই বাড়িতে ঢুকে পড়ে এক পাওনাদার। নাভিদ খান টাকা পায় প্রভার স্বামীর কাছে। টাকা না নিয়ে সে যাবে না। কিন্তু প্রভার কাছেও টাকা নেই।
ঝগড়া তুঙ্গে। নাভিদ চিৎকার করে বলে, মেয়েদের সে চেনে। বলতে থাকে, ‘ভালোবেসে আমি দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে। অবহেলা করে দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে।’ কথার ফাঁকে ঢুকে পড়ে সবুর মিয়া, ‘শুধু বিবাহ করিয়া দেখেন নাই বোধ হয় মেয়ে মানুষেরে।’ চমকিত নাভিদ বলে ওঠে, ‘বুঝলেন কেমনে?’ সবুর সগর্বে বলে, ‘বয়স তো লাফ দিয়া বাড়ে নাই।’ এমন কথা আর ঝগড়া চলতে থাকে তিনজনের। এর মধ্যে নাভিদ বুঝতে পারে প্রভাকে ভালোবেসে ফেলেছে সে। প্রভাও নাভিদকে। মাঝেমধ্যে গান বেজে ওঠে। দুজন একটু-আধটু নেচেও ওঠে।
হঠাৎ থমকে গেল দুজন। কী ব্যাপার? কেউ নড়ছে না কেন? ও, নাটক শেষ।
আলাপ চালাই নির্দেশক সাইফ সুমনের সঙ্গে। কী বলতে চান নাটকে? সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘এই শহরের চারদিকে সব যখন খড়খড়ে, তখন সবাইকে একটু নির্মল বিনোদন দিতে চাই। আর কিছু না।’ কথায় কথায় বলেন, নাটকটি তিনি সাজিয়েছেন নিজেদের মতো করে। তাই তো চেখভের নাটকেও হাতিরঝিল, কাঁটাবন ঢুকে পড়ে।
এই ছোট পরিসরে নাটকটি করার কারণ হলো—শুধু শিল্পকলায় নয়, ধানমন্ডি, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চায়িত হবে এটি। নাটকের সাজসজ্জাও তাই অনাড়ম্বর। প্রাঙ্গণেমোরের রামিজ রাজু, থিয়েটার আর্ট ইউনিটের রিয়াজ হোসেন ও নাট্যকেন্দ্রের সংগীতা চৌধুরী—এ তিনজনই প্রযোজনাটির সবেধন নীলমণি। উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে আগামী ৫ জুলাই সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে।