জীবন আমাকে অনেক রসদ দেয়

২০১৩ সালের মাঝামাঝিতেও গান নিয়ে পুরোদমে ব্যস্ত ছিলেন সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। সে বছরের শেষ দিকে হঠাৎ মায়ের মৃত্যুতে থমকে যায় জীবন। মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার পর কিছু প্রজেক্টের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বছরখানেক ধরে আবার নতুন অ্যালবামের কাজ শুরু করেছেন তিনি। ঈদ উপলক্ষে তিনটি গান নিয়ে তাঁর একটি ইপি অ্যালবাম প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। নাম কীবলো। এসব নিয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে কথা হয় তাঁর সঙ্গে
ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান
ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান

নতুন অ্যালবামটি নিয়ে বলুন

পুরোনো দুটি গান ‘রবীন্দ্র-নজরুল’ ও ‘মন আমার লজ্জা’ গানের পাশাপাশি নতুন একটি গান নিয়ে আমার এই নতুন অ্যালবাম। নতুন গানটি হলো ‘কিছু বলো’। এ গানের নামেই অ্যালবাম। শ্রোতাদের জন্য ‘কিছু বলো’ গানটি একেবারেই অন্য রকম। আমাকে সাধারণত প্রেমের গান গাইতে দেখা যায়নি। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল, আলাদা করে একটা প্রেমের গানের অ্যালবাম করব। সেভাবে কাজও শুরু করেছিলাম। ১০টি গান তৈরি করেছিলাম। সেখানকার ১০টি গানের মধ্যে এটি ছিল একটি।

 আপনার গানের কথা সাধারণত অন্য রকম প্রেমের গানে আপনি কী বলতে চেয়েছেন?

মানব-মানবীর সম্পর্কে প্রায় একটা ঘটনা ঘটে থাকে—তাদের মধ্যে একটা সময় কথা বন্ধ হয়ে যায়। তখন তারা মনে করে, তারা আর আগের মতো ভালোবাসে না। দুজন এত কাছের মানুষ, একই বাড়িতে থাকে; অথচ কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে না। নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেও নিজেদের কথাই বলা হয় না। আমার উপলব্ধি হচ্ছে, তারপর আবার প্রেম করতে হয়, বারবার প্রেম করতে হয়। এটাই আমি গানের মধ্যে বলতে চেয়েছি।

 ভালোবাসা অনুভূতিটাকে কীভাবে দেখেন?

পৃথিবীতে এসে আমার উপলব্ধি কী, তা যদি এক শব্দে বলি, আমি বলব—প্রেম। সেই প্রেম শুধু মানব-মানবীর প্রেম না। জীবন, মানুষ আর দেশকে ভালোবাসাও একেকটা প্রেম। একটা মানুষ নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য ও সৌরভ নিয়ে জগতে আসে। একটা গাছ, একটা পাখিও সেভাবে আসে। যে মানুষ যেমন, তাকে সেভাবেই ভালোবাসা, সম্মান করাটাই সর্বোচ্চ প্রেম। ‘তুমি আমার মতো করে চললে আমার সুবিধা হয়’, সেটা কখনোই প্রেম হতে পারে না।

 আপনার গানে সমাজের নানা অসংগতি উঠে আসে এর অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পান?

আমার চারপাশ। আমি যেভাবে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছি, সেখানে আমার চোখ এভাবে খুলেছে। আমার চারপাশের জীবনটাই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। ফুল ও পাখির গানও করেছি আমি। চারপাশের বাস্তবতা থেকে বিষয় খুঁজে নিই। আমি কিন্তু এমন কিছুই লিখছি বা গাইছি না, যাতে আমার চারপাশ নেই। জীবন আমাকে অনেক রসদ দেয়। আর সেসব নিয়ে আমি গান লিখি।

 এখন কী করছেন?

রাঙামাটির পাহাড়ে মানুষগুলো মরে যাচ্ছে। আমরা যারা শহরের বাঙালি, তাদের ওসব মানুষের কান্না খুব বেশি ছোঁয়নি। চাকমা, সাঁওতালদের যখন অনেক কষ্ট হয়, তখন রাজধানী কিন্তু জ্বলে ওঠে না। সেভাবে প্রতিবাদ হয় না। আজ যদি ঢাকা শহরে এমন একটা ঘটনা ঘটত, তাহলে এর প্রতিবাদ আরও অনেক কঠোর হতো। তাই আমি এখন লিখছি, ‘পাহাড়ি মানুষ আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। আমি সে রকমভাবে তোমাদের ভালোবাসতে পারিনি।’

সাক্ষাৎকার: মনজুর কাদের