জাহিদ হাসানের সিরাজগঞ্জপ্রীতি ব্যাপক

আলো ঝলমলে রঙিন পর্দার মানুষ তাঁরা। শুটিং, ডাবিং আর নানামুখী চাপে ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। কিন্তু তাঁদেরও আছে গ্রামের বাড়ি। ফুরসত পেলেই ছুটে যান মাটির কাছে, প্রিয় বাড়িতে। বিনোদন জগতের এমন কিছু তারকার গ্রামের বাড়ি ঘুরে এসে লিখেছেন প্রথম আলোর একদল প্রতিবেদক। ঈদ উপলক্ষে পাঠকের জন্য এবারের আনন্দের বিশেষ আয়োজন।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের নিভৃত একটি গ্রাম চাঁদ পাল। ওই গ্রামেই জন্ম টেলিভিশন তারকা জাহিদ হাসানের। তবে তিনি এলাকায় পুলক নামেই বেশি পরিচিত। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের বাহিরগোলা সড়কে তাঁর বসবাস। জাহিদ হাসানের ব্যক্তিজীবন ও স্মৃতির কথা বর্ণনা করলেন তাঁর দুই বাল্যবন্ধু সাইদুর রহমান আর ভবেশ চন্দ্র কর্মকার।

তাঁরা জানান, জাহিদ ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, ঘুড়ি ওড়ানো, পাখি শিকার, ফুটবল খেলা, নাট্যাভিনয়, স্কাউটিং ও মার্শাল আর্ট নিয়ে তাঁর ব্যস্ত সময় পার হতো। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনাদর্শকে ঘিরে লেখা ভাই ভাসানী নাটকে অভিনয় করে এলাকায় ঝড় তোলেন। বাবা মরহুম ইলিয়াছ উদ্দিন তালুকদার ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। মা রত্নগর্ভা হামিদা খাতুন। পাঁচ ভাই, তিন বোনের সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং সরকারি চাকরিজীবী। চক্ষুবিশেষজ্ঞ এক ভাই ছাড়া সবাই বাইরে বসবাস করছেন। জাহিদের নিভৃত পল্লিতে জন্ম হলেও শিশুকাল থেকে শহরেই বড় হয়েছেন। শহরের জ্ঞানদায়িনী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি আর সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকায় চলে যান।

জাহিদ হাসান, অভিনেতা
ডাক নাম: পুলক
গ্রামের বাড়ি: বাহিরগোলা সড়ক, সিরাজগঞ্জ পৌরসভা
জেলা: সিরাজগঞ্জ

জাহিদের বাল্যবন্ধু সাইদুর রহমান জানালেন, ছোটবেলা থেকেই জাহিদ দুষ্টু ও ডানপিটে ছিলেন। তিনি ছিলেন মিশুক এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী, ধার্মিক, সামাজিক। খেলাধুলা ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া পছন্দ করতেন। ফুটবলের পাশাপাশি চাকতি নিক্ষেপ খেলাটি খেলতেন। তিনি সিরাজগঞ্জের দ্য সেন্টার টাইগার বয়েস ক্লাবের সদস্য হয়ে নিয়মিত ফুটবল খেলতেন। স্কুলে পড়া অবস্থায় ১৯৭৮ সালে সিরাজগঞ্জ সদর থানার মাঠে অনুষ্ঠিত ফুটবল প্রতিযোগিতার খরচ জোগাতে ওই সময় নিজের হাতঘড়িটি ২০০ টাকায় বন্ধক রেখেছিলেন। সাইদুর রহমান বলেন, ‘তাস খেলায় ভূরিভোজ করতে টাকা জোগাতে পরিবারের অগোচরে রাতে আমরা এক দোকানে ভুসির বস্তা পর্যন্ত টেনেছি। অনেক সময় স্কুল পালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সাইকেল চালিয়ে সালেহা ইসহাক সরকারি বালিকা বিদ্যালয় এলাকায় আড্ডা দিতাম। জাহিদের চেহারা সুন্দর হওয়ায় মেয়েরা তাকে বেশি পছন্দ করত। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর জাহিদ হাসান সিরাজগঞ্জের তরু সম্প্রদায় নামের নাট্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়। সে সময় জাহিদ হাসান অভিনীত বিচ্ছু নাটক খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। রক্ষণশীল পরিবারের সদস্য হওয়ায় অনেকেই তাকে নাটকে অভিনয় করতে নিরুৎসাহিত করত। একবার নাটকে অন্য নারীকে মা বলায় তার মা হামিদা খাতুন তার ওপর খুব মন খারাপ করেছিলেন। কারণ, মা তাকে খুব ভালো বাসতেন।

জাহিদ হাসান
জাহিদ হাসান

ছোটবেলা থেকেই জাহিদ হাসান ছিল বন্ধুপ্রিয় মানুষ। সে আমার জীবনকাহিনি নিয়ে বাচ্চু ভাই নামে একটি নাটক তৈরি করেছে। নাটকটি টেলিভিশনে প্রচারও করা হয়। তা ছাড়া, সিরাজগঞ্জের প্রতি তার রয়েছে অপরিসীম ভালোবাসা। তার বেশির ভাগ নাটকই সিরাজগঞ্জ ঘিরে লেখা। অধিকাংশ নাটকের সংলাপে সে সিরাজগঞ্জের স্থানীয় ভাষা ব্যবহার করেছে। নাটকের মাধ্যমে সে সিরাজগঞ্জকে দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।’
শহরের বাহিরগোলা সড়কের দোতলা ভবনের বাড়ির উত্তর পাশে লোহার ব্যবসা করেন জাহিদের অপর বন্ধু ভবেশ চন্দ্র কর্মকার। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জাহিদের বাড়ি দেখিয়ে বলেন, ‘জাহিদ যখনই সিরাজগঞ্জে আসুক না কেন, পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে কথা না বলে বাড়িতে ঢোকে না। সে ছোটবড় সব বন্ধুবান্ধবকে একনজরে দেখে। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় বলে, “তোরা বাড়িটি দেখে রাখিস, তোদের ওপরই ভরসা আমার।” বাড়ির দেয়ালের সামনে তার পাঁচ ভাইয়ের নাম ও পরিচয় লেখা রয়েছে। সর্বডানে রয়েছে রত্নগর্ভা মায়ের নাম। শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও সে প্রতি মাসে একবার সিরাজগঞ্জে আসে। প্রতিটি ঈদ বাড়িতে করলেও দুই বছর ধরে মা মারা যাওয়ার পর ঈদের পরদিন সে সিরাজগঞ্জে আসে। মূলত বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর সময় কাটাতেই তার সিরাজগঞ্জ আসা।’