কতটা ভয়ংকর সুন্দর

ছবির নাম শুনলে অনেকেরই ভ্রু কুঁচকে যেতে পারে। সিনেমার নাম আবার এমন হয় নাকি? ভয়ংকর সুন্দর। কী করে হয়, সেটা কাল জানা যাবে। জানা যাবে ‘সুন্দর’ কেন ‘ভয়ংকর’ হলো। কাল মুক্তি পাচ্ছে অনিমেষ আইচের এ ছবি। আজ প্রিমিয়ার। তার আগে ছবির সাত-সতেরো জানার চেষ্টা করেছেন মাসুম আলী

ভাবনা ও পরমব্রত। ভয়ংকর সুন্দর ছবির দৃশ্য
ভাবনা ও পরমব্রত। ভয়ংকর সুন্দর ছবির দৃশ্য

আহা, বেচারা! ভয়ংকর সুন্দর ছবির পরিচালকসহ দলের সদস্যদের দেখলে আপনার মায়াই হবে। নাওয়া-খাওয়া নেই, ঘুম নেই। রাত-দিন একাকার। সবার ধ্যান-জ্ঞান, দৌড়ঝাঁপ একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে। আজ ৩ আগস্ট ছবির প্রিমিয়ার, কাল সারা দেশে মুক্তি।

সব চেয়ে বেশি টেনশনে যিনি আছেন, তিনি ভাবনা। বড় পর্দায় অভিষেক হতে যাচ্ছে তাঁর, সারা দিন কাটছে ব্যস্ততায়। যেন শুধু অভিনেত্রীই নন, আরও বেশি কিছু। যখন-তখন ছবির আপডেট দিচ্ছেন ফেসবুকে, করে যাচ্ছেন ক্লান্তিহীন গণসংযোগ। এই তো সোমবার মধ্যরাতেও তাঁকে ফেসবুকে সক্রিয় দেখে কে যেন বলেছিল, ঘুমান না? জবাবে ভাবনা লিখেছেন, ‘ঘুমাই না, মাঝে মাঝে ঝিমাই।’ আজ ৩ আগস্ট অভিনেত্রীর জন্মদিনও।

এক ঈদ শেষে আরেক ঈদ আসছে ঠিকই, তবে কিছুদিন বাকি এখনো। শ্রাবণ চলছে। হুটহাট বৃষ্টি হচ্ছে, পানি জমছে। বৃষ্টি না নামলে গরমে বুক ফেটে যেতে চাইছে। ছবি মুক্তির জন্য কেন এই সময়টাকেই বেছে নিলেন পরিচালক? প্রথমেই মনে এল এই প্রশ্ন। অনিমেষ আইচ উত্তর দিলেন, এখন অন্য ছবির দৌড়ঝাঁপ নেই, রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। এ সময়টাই আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে। তাই আগস্টের প্রথম সপ্তাহকে বেছে নিয়েছি।

অনিমেষের কাজের সঙ্গে পরিচয় আছে দর্শকদের। ছোট পর্দায় নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন তিনি। এটি তাঁর তৃতীয় ছবি। অবশ্য আলোর মুখ দেখেনি একটি। তাঁর আগের কাজগুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায়, কাজের ব্যাপারে অনিমেষ খুঁতখুঁতে। নতুন কাজ নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট, এমন প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে কিছু ভেবে নিলেন স্বল্পভাষী অনিমেষ। বললেন, ‘কাজটা ভালো হয়েছে। আমি আশাবাদী।’

ভয়ংকর সুন্দর ছবির শুটিংয়ে ভাবনা ও পরিচালক অনিমেষ আইচ
ভয়ংকর সুন্দর ছবির শুটিংয়ে ভাবনা ও পরিচালক অনিমেষ আইচ

একটি গল্পকে অবলম্বন করলেও ছবির চরিত্রগুলো নতুন করে সাজিয়েছেন পরিচালক। বললেন, ‘প্রেম ও সামাজিকতার গল্পের ভেতর দিয়ে পৃথিবীতে মিষ্টি পানির সংকটকে ছুঁয়ে যেতে চেয়েছি। ল্যাপটপ বা মোবাইলে ছবিটা দেখলে মজা পাওয়া যাবে না। বড় পর্দায় দেখতে হবে।’

মতি নন্দীর গল্প ‘জলের ঘূর্ণি ও বকবক শব্দ’ অবলম্বন করে ভয়ংকর সুন্দর ছবির কাহিনি। নারীকেন্দ্রিক সেই কাহিনির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন ভাবনা। সেখানে তাঁর চরিত্রের নাম ‘নয়নতারা’। সোমবার রাতে আলাপ করতে গিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে তাঁকে। ‘আমি এমন একটি ছবির জন্যই এত দিন অপেক্ষা করে ছিলাম। সেটি পেয়েও গিয়েছি’, কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন ভাবনা। তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশের বেশির ভাগ ছবিই নায়কশাসিত। কিন্তু “ভয়ংকর সুন্দর” এমনই একটি গল্প, যেখানে নায়ক বা নায়িকা নয়, বরং চরিত্রগুলো গুরুত্ব পেয়েছে।’ নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে বললেন, ‘নয়নতারা চরিত্রটা এতটাই লোভনীয় ছিল যে, শুটিংয়ের আগে-পরে দেড় বছর কোনো কাজ করিনি। পরিচালকের বারণ ছিল না। আমি নিজেই করিনি। প্রতিদিন একটু একটু করে নয়নতারা হয়ে উঠতে, তার মতো জীবনযাপন করতে বেশ লাগছিল।’

পরিচালক ও অভিনেত্রী ভাবনার কথা শুনে আর বুঝতে বাকি রইল না যে, প্রচলিত বাণিজ্যিক ঢাকাই ছবির মতো এ ছবিতে মুম্বাই বা কলকাতার আবহ কাট-কপি করা হয়নি।

পরমব্রত প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের নাতি, এ কথা অনেকেই জানেন। মা সুনেত্রা ঘটকও ছিলেন চলচ্চিত্রের মানুষ। তবে মা আর মাতামহের পরিচয়ে নয়, নিজ অভিনয়গুণেই পরমব্রত এখন পশ্চিমবঙ্গের শক্তিমান অভিনেতাদের একজন। সেই পরমব্রত বললেন, ‘গত দুই বছর এই বাংলার সঙ্গে যে নিবিড়ভাবে কাজ করছি, বিভিন্নভাবে সংযুক্ত হচ্ছি, সেটার শুরু এ ছবির মধ্য দিয়ে। এ ছবির হাত ধরে আমার বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়।’ এর আগেও ঢাকাই ছবিতে প্রস্তাব পেলেও করা হয়নি। অন্যদের ফিরিয়ে দিয়ে অনিমেষকেই হ্যাঁ বললেন কেন? পরমব্রত বলেন, ‘অনিমেষকে আমার পাগলাটে, খ্যাপাটে মনে হয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, সে যা বানাবে খুব যত্ন নিয়ে বানাবে। আর সব পরিচালকের মতো সে নানা রকম গাণিতিক হিসাব-নিকাশের গল্প আমার কাছে পাড়েনি।’

তিনি বলেন, আমি সার্বিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সিনেমার গল্পের সঠিক চিত্রায়ণ। চরিত্রের ব্যাপ্তি নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো চরিত্রের গুরুত্ব। প্রায় দেখা যাচ্ছে, চিত্রনাট্যের সঙ্গে সিনেমার কোনো মিলই থাকছে না। এ দুটি এক হয়ে গেলে ব্যাপারটি দারুণ হয়।

ইতিমধ্যে ভয়ংকর সুন্দর ছবির গান এবং ট্রেলার বের হয়েছে। গান আছে চারটি। এর মধ্যে সংগীতশিল্পী মমতাজের গাওয়া ‘ফিরব না আর ঘরে’ গানটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ইউটিউবে গানটি বেশ শুনছেন মানুষ।

কথা হলো এর গীতিকার আসিফ ইকবালের সঙ্গে। শিরোনাম গানসহ তিনটি গানই তাঁর লেখা। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিকড়ের সঙ্গে গল্পটা মিলে যায়। মধ্যবিত্তের জন্য যে গল্পটা বলা দরকার, সেটাই বলেছেন অনিমেষ আইচ। এই সময়ে এ ধরনের চলচ্চিত্র দরকার ছিল। আমি তো মনে করি, অনিমেষ আইচদের পাশে আমাদের দাঁড়ানো দরকার। এরাই আসলে সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখছে।’

ঢাকার ভাবনা ও কলকাতার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ছাড়া অন্য চরিত্রগুলোতে অভিনয় করে গল্পকে এগিয়ে নিয়েছেন সৈয়দ হাসান ইমাম, খায়রুল আলম সবুজ, ফারুক আহমেদ, লুৎফর রহমান জর্জ, ফারহানা মিঠু, শিল্পী সরকার প্রমুখ। সিনেমাটির সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন সাহা।

আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। আজ বিকেলে আমন্ত্রিত দর্শকের জন্য ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। কাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ২৮টি প্রেক্ষাগৃহে দেখা যাবে ভয়ংকর সুন্দর। ভয়ংকর শুভকামনা রইল এ ছবির জন্য।