নাটকে পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে ঘাপলা রয়েছে

গোয়েন্দা ঘটক নাটকের দৃশ্য
গোয়েন্দা ঘটক নাটকের দৃশ্য

এ সপ্তাহেই আমরা পালন করলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৬তম প্রয়াণবার্ষিকী। এ উপলক্ষে টিভি চ্যানেলগুলো আয়োজন করেছিল নানা অনুষ্ঠান। ৪ আগস্ট রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে রবীন্দ্রপ্রয়াণ স্মরণে দেশ টিভিতে প্রচারিত হলো নাটক ক্যামেলিয়া। রবীন্দ্রনাথের ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতার নাট্যরূপ। নাট্যরূপ দিয়েছেন ও পরিচালনা করেছেন আশুতোষ সুজন।

কবিতায় গল্প যেমন থাকে, ক্যামেলিয়াতেও তেমনই একটি গল্প বা গল্পের আভাস আছে বলা যায়। সেটিকে কেন্দ্র করে গল্পটি সাজানো হয়েছে এভাবে—ফুটবল খেলোয়াড় তরুণ সাব্বিরের সঙ্গে বাসের মধ্যে দেখা হয় এক অচেনা তরুণীর। তারপর সেই তরুণীর প্রতি মুগ্ধতা, ভালো লাগা ও ভালোবাসার স্রোতে ভেসে যেতে থাকে সাব্বির। নিজের দায়-দায়িত্ব ও রুটিন ভুলে সে প্রতিনিয়ত অনুসরণ করতে থাকে মেয়েটিকে। বাসে তাকে সুরক্ষা দেওয়া এবং সুযোগ বুঝে সঙ্গ দেওয়া থেকে শুরু করে তাদের পারিবারিক রুটিনকেও অনুসরণ করতে থাকে সাব্বির। মেয়েটি বান্দরবান বেড়াতে যাবে শুনে সে বান্দরবান চলে যায়। খাগড়াছড়ি গেলে সে–ও খাগড়াছড়ি যায়। সেখানে তরুণীর সঙ্গে দেখতে পায় একজন তরুণকে। তারপর মেয়েটিকে আর তার সযত্নে ফোটানো ক্যামেলিয়ার কলি উপহার দেওয়া হয় না। ক্যামেলিয়ার কলিটি শেষ পর্যন্ত শোভা পায় তার সাহায্যকারী অচেনা উপজাতীয় তরুণীর খোঁপায়।

এককথায় বলা যায়, কবিতার নাট্যরূপে ও নির্মাণে কাব্যিক আবহ বজায় রাখতে পেরেছেন নির্মাতা। কবিতার নাট্যরূপে যেমন স্বাধীনতা থাকে, তেমনি সীমাবদ্ধতাও থাকে। রবীন্দ্রনাথের কবিতার নাট্যরূপে সুবিধা হলো, তাঁর গানের ব্যবহার। নির্মাতা সে সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেছেন। মনে হয়েছে সংলাপের চেয়ে তিনি আবহসংগীতে গানের ব্যবহারই করেছেন বেশি এবং সেটি উপভোগ্যও হয়েছে। দু-একটি সীমাবদ্ধতার মধ্যে বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ কমলের সঙ্গে তরুণের সাক্ষাৎ দেখিয়েছিলেন ট্রামে, আর নির্মাতা দেখিয়েছেন বাসে। এ ছাড়া বান্দরবান বা খাগড়াছড়ির লোকেশন দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যও মনে হয়নি, আকর্ষণীয়ও মনে হয়নি। তবে চিত্রগ্রহণ ভালো ছিল।

এবার একটি গানের অনুষ্ঠানের কথা বলি। ৩ আগস্ট রাত ১১টায় কথার উপস্থাপনায় এশিয়ান টিভিতে প্রচারিত হলো সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘এশিয়ান মিউজিক’। এ দিন শিল্পী ছিলেন সংগীতা ও শাহীন।

দুজনই মূলত আধুনিক গান করেন, কিন্তু এ অনুষ্ঠানে তাঁরা বিভিন্ন আঙ্গিক ও বিভিন্ন মেজাজের গান পরিবেশনের চেষ্টা করেছেন। এমনকি রবীন্দ্রসংগীতও গেয়েছেন—‘তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম’। আধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছেন। সেটা সমস্যা নয়, সমস্যা হলো সুরে ও পরিবেশনায় কোনো দিক থেকেই রবীন্দ্র আবহ ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। সুদীর্ঘ অনুষ্ঠান। দুজনই গলা খুলে গেয়েছেন, দুজনের কণ্ঠও মিষ্টি, কিন্তু দুজনের একটি কমন সমস্যা মনে হয়েছে, তা হলো মাঝেমধ্যেই কণ্ঠ সুরের পর্দায় থাকেনি। হতে পারে এটা অনুশীলনেরই অভাব। শিল্পী শাহীনের কথায় এর কিছুটা প্রমাণও পাওয়া গেছে। আমরা শিল্পী সংগীতা ও শাহীনের উত্তরোত্তর উন্নতি ও সাফল্য কামনা করি।

এশিয়ান টিভি বরাবরই গানের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে, এ জন্য তাদের সাধুবাদও জানাই। কিন্তু অনুষ্ঠানটি দেখতে ও শুনতে গিয়ে খুব খারাপ লেগেছে তাদের শব্দ সংযোজনের মান দেখে। দীর্ঘ অনুষ্ঠানে দর্শকদের সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয়েছে রিমোটের ভলিয়ম কমানো আর বাড়ানো নিয়ে। গানের সময় শব্দ এক রকম আবার কথা বলার সময় আরেক রকম। উপস্থাপিকার কথা তো কখনো ভলিয়ম না বাড়িয়ে শোনাই যায়নি। এটি কি তাদের সম্প্রচার টিমের কাছে একবারও ধরা পড়েনি! আশাকরি এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে তারা আরও সজাগ ও যত্নবান হবে।

৪ আগস্ট বেলা ২টা ৩০ মিনিটে বাংলাভিশনে পুনঃপ্রচারিত হলো বিশেষ নাটক গোয়েন্দা ঘটক। রচনা মেজবাহ উদ্দিন ও পরিচালনা সৈয়দ শাকিল। অভিনয়ে ছিলেন জাহিদ হাসান, আরফান, মৌসুমী হামিদ প্রমুখ।

নাটকের গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম—জাহিদ হাসান পেশাদার গোয়েন্দা। আরফান ভালোবাসে মৌসুমীকে কিন্তু মৌসুমী সেটা গ্রহণ করে না। মৌসুমী কেন তাকে গ্রহণ করে না, তার বিস্তারিত তথ্যের জন্য সে জাহিদের শরণাপন্ন হয়। জাহিদ টাকার বিনিময়ে গোয়েন্দা সেজে মৌসুমীর পিছু নেয়। জাহিদ তাকে ফলো করছে বুঝতে পেরে একদিন মৌসুমী জাহিদের মুখোমুখি হয়ে পরিচয় দেয়, সে তার ছোট বোনের বান্ধবী। তারপর ঘটনা ভিন্ন খাতে মোড় নেয়। মৌসুমীর সঙ্গে নিজেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে জাহিদ। আরফান বিষয়টি জেনে তার বন্ধুসহ এসে জাহিদকে হাতেনাতে ধরে যখন মারতে যায়, তখন সব খুলে বলে জাহিদ। জাহিদ শেষে বিয়ের দাওয়াতও দেয়, কিন্তু আশাহত ও পরাজিত আরফান ভগ্নদেহে ও মনে বিদায় নেয়। এই হলো নাটকের গল্প।

নাট্যকার ও নির্মাতা যদি এটিকে হাসির নাটক বা কমেডি হিসেবেই তুলে ধরতে চাইতেন, তাহলে কোনো কথা ছিল না। কিন্তু যেভাবে ঘটনাটি তুলে ধরা হয়েছে, তা আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে শুধু অবাস্তবই নয়, অস্বাভাবিকও। জাহিদ হাসানকে যেভাবে গোয়েন্দা সাজানো হয়েছে, তা অত্যন্ত অপরিপক্ব। দেখে হাসি তো পায়ইনি, বরং হাস্যকর মনে হয়েছে। ঠিক একইভাবে নাটকের শেষে আরফান যখন গভীর হতাশা নিয়ে ভগ্নহৃদয়ে কেঁদেছে, তখন দর্শকের বিন্দুমাত্র করুণা বা সমবেদনা জাগেনি, বরং হাসি পেয়েছে।

আর অভিনয়ের কথা বললে, আরফান ও জাহিদের তো তবু অভিনয়টি উপভোগ্য। পাশাপাশি মৌসুমী হামিদের অভিনয় একেবারেই অপরিপক্ব ও আনাড়ি মনে হয়েছে। এ ছাড়া নাটকে তার চরিত্রটি ছিল একজন আকর্ষণীয় ও অবিবাহিতা তরুণী, যা তার আকৃতি ও অভিব্যক্তিতে মনে হয়েছে একেবারেই বেমানান। প্রযোজক ও নির্মাতারা কিসের ভিত্তিতে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করেন, আমরা জানি না। তবে জানলে দুকথা বলা যেত।