রাজ্জাক-শাবানার 'আগুন' মধুমিতায়

হলের সামনে দিয়ে মতিঝিলের রাস্তা ধরে আসা-যাওয়া পথচারীদের অনেকেই একটু সময় নিয়ে দাঁড়ান। দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখা গেল কাউকে কাউকে। ষাটোর্ধ্ব এক ভদ্রলোক ছবির দিকে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করলেন, ‘যে যা-ই বলেন না কেন, বাংলাদেশে মহানায়ক ওই একজনই, রাজ্জাক।’

গতকাল ছবি প্রদর্শনী বন্ধ রাখার পাশাপাশি মধুমিতা হল কর্তৃপক্ষ আরেকটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ জানান, আগামী শুক্রবার থেকে মধুমিতা মুভিজের ব্যানারে নির্মিত রাজ্জাক-শাবানা অভিনীত আগুন ছবিটি প্রদর্শিত হবে। সুপারহিট ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৬ সালে। এর আগে ছবিটি কোনো চ্যানেলে দেখা যায়নি, সিডি আকারেও বাজারে নেই।

ছবির পরিচালক মোহসিন, যিনি বাঁদী থেকে বেগম ছবিটি পরিচালনা করেছেন। মধুমিতায় আগামী সপ্তাহজুড়ে ছবিটি চলবে দুপুর ১২টা, বেলা ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৯টার শোতে। নওশাদ বলেন, ‘রাজ্জাক আমার বাবার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। সর্বশেষ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে দেখা হয়। সেন্সর বোর্ডে তাঁর সঙ্গে নিয়মিত আলাপ হতো।’

মধুমিতার মতো ঢাকাসহ সারা দেশের বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী শোয়েব রশীদ বলেন, ‘আমার মালিকানাধীন চন্দ্রিমা প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রেখেছি। যারা অগ্রিম টিকিট কেটেছিল, টাকা ফেরত দিতে বলে দিয়েছি। শুনেছি, নারায়ণগঞ্জের আশা প্রেক্ষাগৃহটিও বন্ধ ছিল। আমার মনে হয়, এমন কিংবদন্তি একজন নায়কের মৃত্যুর পর প্রদর্শনী বন্ধ রেখে সম্মান দেখানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কেননা, এই যে আজকের চলচ্চিত্র শিল্প প্রতিষ্ঠায় রাজ্জাকের অবদান অনেক বেশি।’

গতকাল রাজধানীবাসীর আগ্রহ-আলোচনার বিষয় ছিল নায়করাজের প্রয়াণ। পাড়া-মহল্লায়, অলিগলিতে, দোকানে, সেলুনে, ফার্মেসিতে রাজ্জাক ছিলেন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। খবরের কাগজে আগ্রহ নিয়ে রাজ্জাকের চলে যাওয়ার সংবাদ পড়েছেন লোকজন। সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির বেশ কয়েকটি স্থানে বিশাল ব্যানারে দেখা গেছে সেই চিরচেনা হাসির রাজ্জাকের সাদা-কালো প্রতিকৃতি। ছবির সামনে নানান রকমের ফুল। শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের লবিতে সুবিশাল শোকবার্তা, পাশাপাশি দুটি ছবিতে তরুণ এবং সাম্প্রতিক রাজ্জাক। আরেকটি পর্দায় নানা সময়ে ধারণকৃত রাজ্জাকের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার। জাদুঘর দেখতে আসা দর্শনার্থীরা সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রাজ্জাক–নস্টালজিয়ায় ভোগেন।

১৯৬৪ সালে কলকাতা থেকে রাজ্জাক ঢাকায় এসেছিলেন একজন শরণার্থী হিসেবে। প্রথম জীবনে চলচ্চিত্রে এক্সট্রা হিসেবে অভিনয় করেছেন। সেই রাজ্জাক একসময় পরিণত হন বাংলা চলচ্চিত্রের রাজা, বলা হতো তিনিই ঢাকাই ছবির মহানায়ক।