রাজ্জাক বেশ খেয়ালি ছিলেন

সুভাষ দত্তের কাগজের নৌকা  সিনেমার অভিনয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য গিয়েছিলেন রাজ্জাক। তখনই দেখা তাঁর সঙ্গে। সুভাষ দত্ত আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘ইনি রাজ্জাক, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছেন।’ তখন থেকেই পরিচয় ও সখ্য।

তারপর আমি প্রযোজনায় নামি। তখন রাজ্জাক ও কবরীকে নিয়ে আমি যোগাযোগ নামে প্রথম ছবি করার উদ্যোগ নিই। কিন্তু পরে আর ছবিটি আমার করা হয়নি। এই নাম নিয়ে আরেকজন ছবিটি করেন। তাই পরের ছবি সমাধি নির্মাণের উদ্যোগ নিই। নায়ক চরিত্রের জন্য প্রস্তাব দিলাম রাজ্জাককে। তিনি বললেন, ‘আপনার ছবিটি এক টানে শেষ করে দেব।’ কথা রেখেছিলেন রাজ্জাক। টানা ২৮ দিন শুটিং করে শেষ করেছিলাম সমাধি

তারপর থেকে রাজ্জাকের সঙ্গে কখনো বিচ্ছিন্নতা হয়নি। আমরা বন্ধু হয়ে যাই। আর সুসম্পর্কটা এমন ছিল যে আমার প্রথম ছবিতে কোনো সম্মানী নেননি। জোর করেও দিতে পারিনি। আমার পরের ছবি অনুরোধ-এর জন্য আবার তাঁকে নিলাম। এবার তাঁকে প্রায় দ্বিগুণ সম্মানী দিলাম। রাজ্জাক ওই সময় ১৮-২০ হাজার টাকা সম্মানী নিতেন। আমি দিলাম ৩০ হাজার। অনুরোধ সিনেমার জন্য মোটামুটি অনুরোধ করেই টাকা দিতে হয়েছে রাজ্জাককে।

তারপর আমার প্রযোজিত ১৮টি সিনেমার প্রতিটিতেই প্রধান অভিনেতা ছিলেন রাজ্জাক। ছবি নির্মাণ ও প্রযোজনা করতে গিয়েই তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

তাঁর সঙ্গে শুধু চলচ্চিত্রের সম্পর্কই নয়, একটা পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল আমার। সামনাসামনি আমরা বলতাম ‘আপনি’ করে, কিন্তু আচরণ করতাম ‘তুই’-এর মতো। সম্পর্কটা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে আমার শুটিং আসার আগে রাজ্জাক আমার বাসায় ফোন করে আমার স্ত্রীকে জানিয়ে দিতেন দুপুরে তিনি কী খাবেন। শুটিং স্পটে এত খাবার দেখে তো আমি অবাক। জিজ্ঞেস করতেই মজা করে বলতেন, আমার বাসা থেকে এসেছে।

বেশ খেয়ালি ছিলেন রাজ্জাক। মন যখন যা চাইত, তা-ই করার চেষ্টা করতেন। যেমন একবার সিলেটে গিয়েছি শুটিং করতে। সঙ্গে রাজ্জাকসহ পুরো দল। হঠাৎ বললেন, ‘আজ শুটিং করব না, আজ পাখি মারব।’ তারপর সিলেটের একটা বিলে পাখি মারলেন পুরো বিকেল। আমরা পুরো ইউনিট বসা। কিন্তু পরের দিন খুব ভোরে উঠে আমার রুমের দরজায় নক করছেন আর বলছেন, ‘চা গরম, এই চা গরম।’ দরজা খুলে দেখি রাজ্জাক। তারপর বললেন, ‘চা খাইতে হবে না! শুটিং আছে তো।’ তারপর বললেন, ‘কালকের বাকি শুটিংটা করব বলেই তো এত ভোরে উঠলাম।’ এই হলেন রাজ্জাক।

এমনও হয়েছে, হঠাৎ শুটিং বন্ধ করে দিতেন রাজ্জাক। প্রডাকশন ম্যানেজারকে দিয়ে হাঁস কিনে নিয়ে এসে বলছেন, ‘এখন হাঁস রান্না হবে। আমরা সবাই মিলে আজ হাঁস খাব।’

তাঁর সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। মৃত্যুর কয় দিন আগেও কথা হয়েছে। কয়েক দিন দেখা না হলেও ফোন করতেন এবং ডেকে নিয়ে যেতেন। নানা ধরনের আলাপ হতো আমার মধ্যে। এমন বন্ধুকে হারানো সত্যিই কষ্টের।

লেখক: গীতিকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক