'ল্যাম্পপোস্টে'র সেই স্মৃতি কখনো ভোলেননি রাজ্জাক

দুই ছেলের সঙ্গের রাজ্জাক। ফাইল ছবি
দুই ছেলের সঙ্গের রাজ্জাক। ফাইল ছবি

উত্তরার রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মূল ভবনের বিশাল সাইনবোর্ডের লোগো কখনো খেয়াল করেছেন? ল্যাম্পপোস্টের নিচে একজন মানুষ বসে আছে, পাশেই একটা ডাস্টবিন—লোগোটা এমন। নায়করাজ রাজ্জাকের সব প্রতিষ্ঠানের লোগো।

একজন চিত্রনায়কের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের লোগো এমন কেন? অনেকের মনে এমন ভাবনা তৈরি হয়ে নিশ্চয়।

নায়করাজের কাছে এর ব্যাখ্যা জানা যায়নি। এখন তো তিনি সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ঊর্ধ্বে। সুযোগ পেয়ে জানতে চাইলাম তাঁর ছেলে, অভিনেতা বাপ্পারাজের কাছে। প্রথম আলোর কাছে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি জানালেন, ‘এটা প্রতীকী। ১৯৬৪ সালে বাবা শূন্য থেকে জীবন শুরু করেছিলেন। তখন আমার বয়স আট মাস মাত্র। আমার নিজের মনে নেই প্রথম দিকের কথা। বাবার কাছে শুনেছি। ৬৪ সালের আগে বাবা কখনো ঢাকায় আসেননি। কারও বাসায় উঠবেন এমন পরিচিতজনও ছিল না। কপর্দকহীন হয়ে ঢাকা এসে আমাদের নিয়ে স্টেডিয়াম এলাকার একটি ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসেছিলেন। সেখান থেকে শুরু। এই ল্যাম্পপোস্টের নিচ থেকেই ঢাকায়, বাংলাদেশে বাবার নতুন জীবন শুরু। আমাদের নতুন শুরু। এ বিষয়টিকে প্রতীকী অর্থে বোঝানো হয়েছে লোগোটিতে।’

বাপ্পারাজ বলেন, ‘আব্বা যখন প্রথম রাজ-লক্ষ্মী প্রোডাকশনের যাত্রা করেন, তখন এই লোগোটা করা হয়। বাবার পরিকল্পনামতো এটার নকশা করেছিলেন সুভাষ দত্ত। প্রথম জীবনে যিনি একজন পেশাগত কমার্শিয়াল আর্টিস্টও ছিলেন। আমাদের সব কটি প্রতিষ্ঠানে, সাইনবোর্ডে, প্যাডে এই লোগো ব্যবহার করা হয়েছে।’

রাজ্জাকের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় এই লোগো। ফাইল ছবি
রাজ্জাকের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় এই লোগো। ফাইল ছবি

১৯৮২ সালে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘আমার জীবনটাই একটা উপন্যাস...।’ সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, একটা সময় ফার্মগেট এলাকায় থিতু হয়েছিলেন দুই বাচ্চা আর স্ত্রী লক্ষ্মীকে নিয়ে। তখন জীবিকা নির্বাহের জন্য টিভিনাটকে অভিনয় করতেন। নাটকে অভিনয় করে সপ্তায় পেতেন ৬০-৬৫ টাকা। মাসের খরচ ৬০০ টাকা। রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘অল্প আয়ে সংসারের খরচ চলে না। বাচ্চাদের দুধ জোগাড় করতেই সব টাকা ব্যয় হয়ে যেত। ওই সময় স্বামী-স্ত্রী দুজন মাঝেমধ্যে উপোসও করতাম। পয়সার অভাবে ফার্মগেট থেকে ডিআইটি টিভি কেন্দ্রে হেঁটে যাতায়াত করতাম।’
অনুপম হায়াত বলেন, ‘রাজ্জাক জন্মেছিলেন সোনার চামচ মুখে নিয়ে। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে ফেলে দেয় চরম আর্থিক সংকটে। একদিকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসারের খরচ জোগানো, আরেক দিকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ঢাকায় রাজ্জাকের প্রাথমিক জীবনটাকে বড় দুঃখের আর কষ্টের করে তোলে। সে দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে রাজ্জাককে আপ্লুত হতে দেখেছি। কিন্তু তিনি কখনো ভোলেননি তাঁর এ সময় কষ্টের দিনগুলোর কথা। বরং অকপটে বলেছেন নানা সময়ে।’