বাম্বলফুট বাজালেন, উৎসর্গ জাহিনের নামে

বাম্বলফুট শহরে—দুদিন ধরে এ খবর আলোড়ন তুলেছে দেশের হার্ডরকপ্রেমীদের মনে। এই আলোড়ন কতটা তুঙ্গে পৌঁছেছে তার প্রমাণ মিলল গতকালের ‘ঢাকা রকফেস্ট-২০১৭’-এ গিয়ে। সেখানে বাংলাদেশি শিল্পীদের সঙ্গে বাজিয়েছেন খ্যাতিমান মার্কিন গিটারিস্ট রন ‘বাম্বলফুট’ থাল। হার্ডরক মার্কিন ব্যান্ড গানস এন রোজেসের সাবেক এই সদস্যের গিটার জাদু দেখতে এদিন রোদ-বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরমকে হার মানিয়ে রাজধানীর রাশিয়ান বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকেন্দ্রে ছুটে এসেছিলেন রক গানের শ্রোতারা। তারুণ্যের রোমাঞ্চে ভরপুর এই কনসার্টটি উৎসর্গ করা হয়েছিল সদ্য প্রয়াত তরুণ সংগীতশিল্পী জাহিন আহমেদকে।

গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শুরু হয় ‘ঢাকা রকফেস্ট-২০১৭’। এবিসি রেডিও এফএম ৮৯.২ ও ‘দ্য রক প্রজেক্ট’-এর উদ্যোগে এই কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হয়। কনসার্টের অন্যতম আকর্ষণই ছিল রন ‘বাম্বলফুট’ থালের গিটার পরিবেশনা। বাম্বলফুট ২০০৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত গিটার বাজিয়েছেন গানস এন রোজেসের সঙ্গে। ব্যান্ডটির হয়ে অসংখ্য কনসার্টে অংশ নিয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালে প্রকাশিত ব্যান্ডটির ষষ্ঠ স্টুডিও অ্যালবাম চায়নিজ ডেমোক্রেসিতেও তিনি বাজিয়েছেন। বর্তমানে তিনি আর্ট অব এনার্কি ও সন্স অব অ্যাপোলো ব্যান্ডের সঙ্গে আছেন। গতকাল তিনি কনসার্টের শেষভাগে বাজান।

কনসার্টের শুরুতে ছিল ওউন্ড, কার্নিভাল, মেকানিক্স ব্যান্ডের পরিবেশনা। জাহিন আহমেদ এই মেকানিক্স ব্যান্ডেরই সদস্য ছিলেন। কনসার্টের প্রথমার্ধে মেকানিক্সের সদস্যরা মঞ্চে উঠেই স্মরণ করেন তাঁদের প্রয়াত বন্ধুকে। তাঁরা জানান, এমন সময়, এমন আয়োজনে জাহিনকে ছাড়া মঞ্চে গান পরিবেশন করা খুব কঠিন তাঁদের জন্য। কিন্তু কনসার্টটি যেহেতু জাহিনের উদ্দেশে করা, তাই কিছুতেই নিজেদের এই আয়োজন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেননি তাঁরা। জাহিন আহমেদ গত ২২ জুলাই মাত্র ২৬ বছর বয়সে মারা যান। সেদিন বিকেলে জাহিনের ঝুলন্ত লাশ তাঁর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। সংগীত পরিচালক, সুরকার ও মাইলস ব্যান্ডের সদস্য মানাম আহমেদের ছেলে জাহিন। কনসার্টে উপস্থিত ছিলেন জাহিনের মা, তাঁর ছোট ভাই জারিফ ও বোন রায়া।

কনসার্টের দ্বিতীয় ভাগে মঞ্চে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা গিটারিস্ট রন ‘বাম্বলফুট’ থাল। তরুণেরা বাম্বলফুটের গিটার শোনার উত্তেজনায় আসনে বসতেই ভুলে যান। সবাই অধীর, যতটা কাছ থেকে শোনা যায় বাম্বলফুটের ডাবলনেক গিটার ততই যেন বেশি পাওয়া যায় তাঁকে। সবার চেষ্টা তা-ই। বাম্বলফুটও হতাশ করলেন না। তারুণ্যকে কীভাবে গানে আর সুরে বাঁধতে হয়, তা ভালো করেই জানা এই ৪৭ বছর বয়সী গিটার কিংবদন্তির। মঞ্চে উঠতেই বাংলাদেশি হার্ডরক শিল্পীদের মঞ্চে তুলে আনেন তিনি। রাফা, সাদি, সামির, মার্ক ডন, শোভন, রাশিক, মিশা, রাজ, আবির—একে একে সবাই পারফর্ম করেন বাম্বলফুটের সঙ্গে। তাঁদের নিয়ে ‘নকিং অন হ্যাভেনস ডোর’, ‘ডোন্ট ইউ ক্রাই টুনাইট’, ‘নভেম্বর রেইন’, ‘সুইট চাইল্ড ও মাইন’-এর মতো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে বুঁদ করে রাখা আলোচিত গানগুলো করেন। বাম্বলফুটের গিটার আর দেশের তরুণ শিল্পীদের যুগলবন্দী চলতে থাকে। একসময় বাম্বলফুট বলতে বাধ্য হন, ‘এই দেশের শিল্পীরা তো হিংসা করার মতো!’ কিন্তু হার্ডরক গানের চর্চা আর এই ঘরানার শিল্পীদের মেধা তো এ দেশে খুব একটা ছড়ায় না। থেকে যায় বদ্ধ মিলনায়তন আর স্টুডিওর চার দেয়ালের ভেতরেই।

কনসার্টে এবিসি রেডিও এফএম ৮৯.২ ও দ্য রক প্রজেক্টের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে গেট এম্পড, মিউজিক অ্যাপ ‘গান’ ও বাংলাদেশ ব্যান্ড মিউজিক ফ্যান কমিউনিটি।

কনসার্ট শেষ হয় গানস এন রোজেসের ‘সুইট চাইল্ড অব মাইন’ গানটি দিয়ে। দল ছেড়েও যে বাম্বলফুট বিচ্ছিন্ন হতে পারেননি স্মৃতি থেকে, তা স্পষ্ট ছিল এ পরিবেশনায়। মুগ্ধ শ্রোতারা বিদায় বলার পরও বাম্বলফুটকে ‘ওয়ান মোর’ চিৎকারে আটকে রাখতে চান। কিন্তু বিদায় তো অবধারিত, তাই আবারও ফিরে আসার কথা দিয়ে ঢাকার মঞ্চ থেকে এবারের মতো ছুটি নেন বাম্বলফুট।