হুমায়ূন আহমেদ আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন: তিশা

নুসরাত ইমরোজ তিশা
নুসরাত ইমরোজ তিশা
বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র ‘ডুব’ মুক্তি পাচ্ছে কাল। যৌথ প্রযোজনার এ ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হচ্ছে আজ সন্ধ্যায় কলকাতার কোয়েস্ট মল আইনস্কে। ২২ অক্টোবর সকালে বনানীর নিজের বাসায় প্রথম আলোর সঙ্গে এ চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন ‘ডুব’ ছবির অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাসেল মাহমুদ

ইরফান খানের সঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগল?

শুরুতে যখন শুনলাম যে এই ছবিতে ইরফান খান কাজ করবেন, তখন একটু নার্ভাস ও এক্সাইটেড লাগছিল। বুঝতে পারছিলাম না যে কী হবে। তিনি কীভাবে কমফোর্টেবল হবেন, কতটা অ্যাডজাস্ট করতে পারব। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে আসার পর যখন শুটিং শুরু করলাম, তখন দেখি ভিন্ন চিত্র। তিনি আমাদের কোনোভাবেই অনুভব করতে দেননি যে তিনি একজন বড় সেলিব্রিটি, একজন বড় অভিনেতা। এত বড় সেলিব্রিটি হয়েও যে এত সিম্পল থাকা যায়, সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে কাজ করা যায়, এটা শেখার মতো একটা ব্যাপার। আরও শিখলাম, একটা মানুষ যত বড় হয়, তত সিম্পল হয়।

স্বামী যখন পরিচালক...শুটিংয়ে বকা খেয়েছেন?
সরয়ারের সঙ্গে বহু কাজ করেছি। সেটে আমরা খুবই পেশাদার। আমি শিল্পী, তিনি পরিচালক। সেটে শিল্পীদের সঙ্গে তিনি পোলাইট ও কমফোর্টেবল। সুন্দর করে সবাইকে সিঙ্ক করিয়ে নেন। এতে সহজেই ক্যারেক্টারে ঢুকে যাওয়া সম্ভব হয়। তাঁর প্রথম কাজই হচ্ছে, শিল্পীদের সেট, গল্প ও নিজের সঙ্গে কথা ও কাজের মাধ্যমে মিশিয়ে নেওয়া। এটুকু নিশ্চিত করছি, স্ত্রী হিসেবে কোনো বাড়তি সুবিধা তো পাইইনি, বরং বকা দু-চারটি বেশি খেয়েছি।

ঈদে তো অনেক কাজ করলেন?
কো-থা-য়, কম করেছি। এ জন্য অনেকে মেইল, এসএমএস করেছে। বহু কাজের অফার পাই, পাচ্ছি। আমি সংখ্যায় নয়, মানে বিশ্বাসী। সামনে কোয়ালিটি কাজই বেশি করব। ভালো চিত্রনাট্যের কাজ।

আর সিনেমায়, মানে কোন ধরনের সিনেমায় কাজ করবেন?
অফার আসছে। আমি আসলে ফিল্মে বিশ্বাসী—কমার্শিয়াল, নন–কমার্শিয়ালে নয়। চলচ্চিত্র আমার কাছে দুই রকম। ভালো ছবি ও খারাপ ছবি। বাণিজ্যিক, শৈল্পিক—এসব আমি বুঝিও না, মানিও না।

ডুব ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও অন্যতম অভিনেত্রী তিশা। ছবি: খালেদ সরকার
ডুব ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও অন্যতম অভিনেত্রী তিশা। ছবি: খালেদ সরকার

স্ক্রিপ্ট ছাড়া আর কী পড়েন?
সময় পাই না। স্ক্রিপ্ট পড়ে হ্যাংওভারে অনেক সময় চলে যায়। এর বাইরে বেশি সময় দিই সংসারে। আমি খুবই সাংসারিক। পড়লে বিষয়ভিত্তিক কিছু পড়ি, সেটা হতে পারে খাবার নিয়ে, প্রাণী নিয়ে। ধরা যাক, কোনো প্রোডাকশন দেখলাম, সেটার ব্যাকগ্রাউন্ড পড়লাম। ধরেন, একটা সিনেমা দেখলাম, সেটার শুটিং সেটে কী হয়েছিল, ছবির গল্প নিয়ে, কিসের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমি খুব ডিসকভারি চ্যানেল দেখি। কোনো নতুন প্রাণী দেখলে সেটা নিয়ে ইন্টারনেটে পড়াশোনা করি।

বইপত্র পড়া হয় না তাহলে? নিজের পড়া দুই-একটা বইয়ের নাম বলবেন?
বই বলতে গল্প-উপন্যাস কম পড়ি। মূলত আমার কাজের জন্য অনেক কিছু পড়তে হয়, সেগুলো পড়ি। সময় পাই না তো। তবে মাঝেমধ্যে পুরোনো প্রিয় উপন্যাস পড়ি। যেমন আনিসুল হকের মা পড়লে এখনো গায়ে কাঁটা দেয়। হুমায়ূন আহমেদের প্রিয়তমেষু বইয়ের ক্ষেত্রেও তাই।

হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল কখনো?
একটি সিঙ্গেল নাটকে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। শাওন আপার পরিচালনায়ও আমার একটা কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। সেটার শুটিংয়ের সময় হুমায়ূন আহমেদকে জানার সুযোগ হয়। সেখানে দেখেছি, সব সময় ম্যাচিং পোশাক পরে ছেলেকে নিয়ে আসতেন তিনি। গল্প করতেন, খেতেন। খুব রসিক মানুষ ছিলেন, রসিয়ে রসিয়ে গল্প করতেন। খুব সুন্দর করে কথা বলতেন। শুটিং শেষে একদিন আমাকে ডেকে কিছুক্ষণ কথা বলেন। বলেছিলেন, তোমার অভিনয় আমি পছন্দ করি। তোমাকে খুব পছন্দ করি। কারণ, তোমাকে দেখলে আমার শিলার কথা মনে পড়ে। তিনি আমাকে একটা বই উপহার দেন। বইটাতে লিখে দিয়েছিলেন—‘শিলার মতো দেখতে যে মেয়ে সুন্দর অভিনয়’। বইটার নাম রাক্ষস খোক্কস এবং ভোক্কস।

‘সাবেরী’ চরিত্রটা থেকে বের হতে পেরেছেন?
পুরোপুরি না। এ অনেকটা জেট ল্যাগের মতো। শুধু ফিল্মেই নয়, নাটকেও এমন হয়। তবে ফিল্মের চরিত্র থেকে বের হতে সময় লাগে। খুব প্রেশার ফিল করি। কারণ আমার বাসাতেই এডিটিং হয়। সারাক্ষণ আলোচনা হতেই থাকে। তাতে কী! অভিনেতা মাত্রই অন্যের চরিত্রের মধ্যে থাকতে হয়।

ইরফান খান মানুষ কেমন?
বড় একটা শিশু। তাঁর অনেক প্রশ্ন। যে কয়দিন ছিলেন, বহু প্রশ্ন করতেন। এটা কী? এটা এমন কেন? এটা এখানে কেন? তিনি অনেক ফ্রেন্ডলি। আর শুধু যে আর্টিস্ট বা ডিরেক্টরদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন, তা নয়। প্রোডাকশনের লোক, এডি—সবার সঙ্গে এমনভাবে মিশে গিয়েছিলেন যে, বলে বোঝানো যাবে না। আর তিনি খুব প্রকৃতি পছন্দ করেন। বান্দরবানে গাছ, পাহাড় দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এত দূরের পথ ভ্রমণ করেছি, তিনি মাইক্রোবাসের দরজা লাগাতে দেননি। বলছিলেন, ‘এসি ছাড়ার দরকার নাই, আমি ন্যাচারকে ফিল করতে চাই। তোমাদের এ জায়গাটা এত সুন্দর...।’ আর একটা ব্যাপার, সহশিল্পীদের তিনি খুব সাপোর্ট করেন। আমি যদি সহশিল্পীকে যথাযথ সাপোর্ট করি, তখন দুজনের কাজই সুন্দর হয়। সেটা ইম্প্রোভাইস হোক বা স্ক্রিপ্টওয়াইজ হোক। এই জায়গাটায় আমাদের সিঙ্কটা ভালো হয়েছিল। তাঁর ইম্প্রোভাইজে আমি যথাযথ রিঅ্যাকশন দিতাম। তবে তিনি একটা কঠিন কাজ করেছেন, আমাদের ভাষা শিখেছেন।