মন্ত্রী যেখানে নাটকের মানুষ

শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে গতকাল ‘অন্তরঙ্গ আলাপ’ অনুষ্ঠানে নিজের কথা বলছেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট নাট্যজন, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু l ছবি: প্রথম আলো
শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে গতকাল ‘অন্তরঙ্গ আলাপ’ অনুষ্ঠানে নিজের কথা বলছেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট নাট্যজন, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু l ছবি: প্রথম আলো

অন্তরঙ্গ আলাপ হবে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে। ব্রাত্য বসুর সঙ্গে এলেন লিয়াকত আলী। সেমিনার কক্ষে নাটকের মানুষদের জমায়েত দেখে নিশ্চয় অবাকই হয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাট্যজন ও রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আড্ডা দিতে এত মানুষ!
ব্রাত্য বসু এসেছিলেন রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে। একদিন থাকবেন ঢাকাতে। মন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই তিনি নাটকের মানুষ, তাই ঢাকার নাট্যকর্মীরাও তাঁর সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সুযোগটা কাজে লাগালেন—যেখানে মধ্যমণি ব্রাত্য বসু।
ব্রাত্য বসু শুনলেন, অভিজ্ঞতা বিনিময় হলো। শিল্পকলা একাডেমি ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এ আড্ডার আয়োজন করা হয়।

দুই মন্ত্রী বসেছিলেন পাশাপাশি। পশ্চিমবঙ্গের ব্রাত্য বসু এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আরও ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, মামুনুর রশীদ, ইনামুল হকসহ বিভিন্ন নাট্যসংগঠনের কর্মীরা।

আড্ডার শুরুতে ব্রাত্য বসু বলেন, ‘থিয়েটার হচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকার মাধ্যম। আমাদের কাজ দিয়েই আমাদের পরিচয়। থিয়েটারের সঙ্গে “ক্ষণ যোগ” রয়েছে। যা হওয়ার মঞ্চে উপস্থাপনের সময়ই হয়, খানিক পরেই তা মরে যায়। তাই তাৎক্ষণিক উপলব্ধিটা থিয়েটারে খুব বড় বিষয়। প্রকৃতপক্ষে একজন শিল্পীর প্রকৃত জন্মদিন তাঁর মৃত্যুর পর। সমকালে তাঁকে নিয়ে যে মূল্যায়ন চলে তাতে অনেক রং মিশে থাকে।’
কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নয়, ‘অন্তরঙ্গ আলাপ’টি আড্ডার মতো করেই চলল।

ফ্রেমে ফ্রেমে সাঁওতাল-কথা
রাজধানীর লালমাটিয়ার নতুন প্রদর্শনকক্ষ বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ চিত্রশালায় ঝুলছিল ছবিগুলো। শিল্পকর্মগুলোয় সাঁওতাল জীবনের প্রতিবাদ ফুটে উঠেছিল প্রতিটি ফ্রেমে। ২০১৬ সালের এই দিনে (গতকাল) নিজেদের জমিজমা ও বসতভিটা রক্ষা করতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছিলেন সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর লোকেরা। সে হামলায় নিহত হয়েছিলেন শ্যামল হেমব্রম, মংল মাড্ডি, রমেশ টুডু নামের তিনজন সাঁওতাল। গতকাল পেরোল এই ঘটনার এক বছর। তাই শিল্পই হয়ে উঠল প্রতিবাদের ভাষা।

প্রদর্শনীর শিল্পী প্রদীপ ঘোষ বললেন, ‘সাঁওতাল হচ্ছে এই ভূমির প্রাচীন জনগোষ্ঠী। এই অঞ্চলে সাঁওতালরাই জঙ্গল সাফ করে আবাদ করেছে। এই অঞ্চলে নানা সময় তাদের জমি দখল হয়েছে। এই প্রকৃতির সন্তানদের যে নিশ্চিহ্ন করার প্রবণতা একটা রাষ্ট্রের, এই প্রবণতার বিরুদ্ধে আমাদের জাগরণ প্রয়োজন। এই প্রদর্শনী তার একটি অংশ।’
‘সাঁওতালনামা’ নামের এ প্রদর্শনীটি শিল্পীর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী। চলবে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রদর্শনকক্ষের দরজা খোলা থাকবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
প্রদর্শনী উপলক্ষে সন্ধ্যায় চিত্রশালা আঙিনায় ছিল ছোট আলোচনাপর্ব। প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী। তিনি বলেন, ‘চারুশিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবাদের ভূমিকা পালন করে আসছে। গোবিন্দগঞ্জে যে ঘটনাটি ঘটেছিল, আজ তার এক বছর পূর্তি হচ্ছে। প্রদীপ ঘোষের এটা প্রথম প্রদর্শনী। যে বিচার চেয়ে এই ছবি এঁকেছেন আজ থেকে তার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।’
আরও বক্তৃতা দেন শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য, চলচ্চিত্রকার মসিহউদ্দীন শাকের, জয়নুল আবেদিনের পুত্র প্রকৌশলী মইনুল আবেদিন ও শিল্পী মনিরুজ্জামান। আবৃত্তি করা হয় কবিতা। প্রদর্শিত হয় শিল্পীর তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্রও।

‘ইতিহাসের মহানায়কেরা’ নাট্যোৎসবে ‘সূর্যসেন’ মঞ্চস্থ
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে ইউনিভার্সেল থিয়েটার আয়োজিত ‘ইতিহাসের মহানায়কেরা’ নাট্যোৎসবের তৃতীয় দিনে গতকাল সোমবার উপস্থাপন করা হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মাস্টারদা সূর্যসেনকে। সূর্যসেন শীর্ষক নাটকটি মঞ্চস্থ করে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি রেপার্টরি। নাটকটি রচনা করেছেন শোভনময় ভট্টাচার্য ও নির্দেশনা দিয়েছেন মোসলেম উদ্দিন সিকদার।