কান সাধাও জরুরি

বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃন্দ সরোদবাদন
বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃন্দ সরোদবাদন

সেতার, সরোদ, বীণা, সারেঙ্গি-এসব একটি বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে! হ্যাঁ, ষাটের দশকে ১৬ বছরের এক কিশোর এমনটাই ভেবেছিল। সেটা তৈরি হলোও, নিজের নামে ওই কিশোর যন্ত্রের নাম রাখল মোহনবীণা। পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভাটের আবিষ্কৃত এই যন্ত্র গতকাল শনিবার প্রথম শুনল রাজধানীর মানুষ, ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে।

বিশ্বমোহন আরও একটি যন্ত্র বানিয়েছিলেন, নাম দিয়েছিলেন বিশ্ববীণা। তখন বয়স কম ছিল বলে জানতেন না মোহনবীণা নামে একটি যন্ত্র তখনই ছিল। পণ্ডিত রাধিকা মোহন মৈত্রের সেই বীণা ছিল সরোদের ঘরানার। তবে বিশ্বমোহন চেয়েছিলেন এমন একটি যন্ত্র বানাতে, যা সুরকে ধরে রাখবে। তিনি বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম এমন একটি যন্ত্র বানাতে, যাতে সুর ভাঙবে না। অনেকটা গানের মতোই সুরটি বয়ে চলবে, যেটা অন্য যন্ত্রগুলোতে সম্ভব ছিল না। মোহনবীণাতে লম্বা মীড় ও গমকের কাজও সম্ভব।’

মণিপুরি, ভরতনাট্যম ও কত্থক পরিবেশন করেন বাংলাদেশের ছয় নৃত্যশিল্পী, খেয়ালসম্রাট ওস্তাদ রশিদ খান গাইলেন রাগ পুরিয়া, পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও ড. মাইসোর মঞ্জুনাথের সরোদ-বেহালার যুগলবন্দীতে রাগ সিমহেন্দ্রমধ্যমম
মণিপুরি, ভরতনাট্যম ও কত্থক পরিবেশন করেন বাংলাদেশের ছয় নৃত্যশিল্পী, খেয়ালসম্রাট ওস্তাদ রশিদ খান গাইলেন রাগ পুরিয়া, পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও ড. মাইসোর মঞ্জুনাথের সরোদ-বেহালার যুগলবন্দীতে রাগ সিমহেন্দ্রমধ্যমম

এভাবেই জীবন্ত কিংবদন্তি বিশ্বমোহন ভাট বললেন মোহনবীণার শুরুর কথা। গতকাল সকালে তাঁর সঙ্গে আরও ছিলেন খেয়াল গায়ক পণ্ডিত কৈবল্য কুমার, ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায় ও তবলাশিল্পী শুভেন চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা সবাই নিজেদের পরিবেশনা দিয়েছেন গতকাল।

ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায় এ উৎসবে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এলেন। উৎসবে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত বাঙালি এই শিল্পী। আরেক বাঙালি পণ্ডিত শুভেন চট্টোপাধ্যায় প্রশংসা করলেন এই উদ্যোগের। শুধু উৎসব নয়, সারা বছর ধরে শাস্ত্রীয় সংগীত শিক্ষার যে কার্যক্রম বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের, তার প্রশংসা করলেন। বললেন, পৃথিবীর এখান থেকে শেখার আছে। শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসবের পাশাপাশি সে সংগীত শোনার কান তৈরির কাজটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। অর্থাৎ শুধু গলা নয়, কান সাধাও খুব জরুরি।

সংগীত মার্তণ্ড পণ্ডিত যশরাজ গাইলেন রাগ যোগ , সাসকিয়া রাও দু-হাসের চেলোতে বাজল রাগ নন্দকোষ , পণ্ডিত বুধাদিত্য মুখোপাধ্যায় পরিবেশন করেন রাগ ললিত
সংগীত মার্তণ্ড পণ্ডিত যশরাজ গাইলেন রাগ যোগ , সাসকিয়া রাও দু-হাসের চেলোতে বাজল রাগ নন্দকোষ , পণ্ডিত বুধাদিত্য মুখোপাধ্যায় পরিবেশন করেন রাগ ললিত

এ ব্যাপারে নিজেদের ঐকমত্য দেখান সবাই। বিশ্বমোহন বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম খুবই প্রতিভাবান। কত অল্প বয়সে কৌশিকী চক্রবর্তী, নীলাদ্রি কুমারের মতো শিল্পীরা সংগীতের ক্ষেত্রে অনেক কিছু অর্জন করেছেন। তাই বয়স কোনো বাধা নয়, একাগ্রচিত্তে সাধনা করাই গুরুত্বপূর্ণ।

বলছেন পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভাট। সঙ্গে ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায়, পণ্ডিত কৈবল্য কুমার ও পণ্ডিত শুভেন চট্টোপাধ্যায়
বলছেন পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভাট। সঙ্গে ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায়, পণ্ডিত কৈবল্য কুমার ও পণ্ডিত শুভেন চট্টোপাধ্যায়

কৈবল্য কুমারের বিশেষত্ব সংগীত শিক্ষার নতুন উপায় আবিষ্কারে। তিনি বলেন, আগেকার দিনে যেভাবে সংগীতে দীর্ঘ রেয়াজ করতে হতো, এখন আর সেটা সম্ভব নয়। জীবন অনেকটাই পাল্টে গেছে। তিনি এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যাতে বৈজ্ঞানিক উপায়েই কম সময়ে সংগীতের ওপর বেশি দখল পাওয়া যেতে পারে। সে জন্য প্রতিদিন ওমকারা, প্রাণায়াম, যোগাভ্যাস করতে হবে। আরও কিছু চর্চার কথাও বলেন কিরানা ঘরানার এই পণ্ডিত।