শীতের সন্ধ্যায় শিল্পকলায়

শীতের সঙ্গে উৎসব, আড্ডার একটা যে দোস্তি আছে, সেটা রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গেলে বেশ বোঝা যায়। দক্ষিণ দিকের ফটকের সামনের ব্যানারগুলোই বলে দেয় গোটা শীতে এখানে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম লেগে থাকবে।

সংগীত, নৃত্যকলা ও আবৃত্তি মিলনায়তনের মহড়াকক্ষগুলো সরগরম। থেকে থেকে নূপুরের রিনিঝিনি আওয়াজ আসছে। মহড়াকক্ষের সামনেই দেখা হলো নৃত্যশিল্পী সোহেলের সঙ্গে। তিনি বললেন, ইপিজেডে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান আছে। সেখানেই তাঁদের দল নৃত্যাঞ্চল একটি পরিবেশনা করবে। সে জন্য এই মহড়া।

পাশের কক্ষ থেকে আসছে দোতারা বুলি। হারমোনিয়ামের সুরে আর খোলের তালে গান গেয়ে গেয়ে নাচছেন একজন। লালনের গান গাইছেন। তিনি সরদার হীরক রাজা। শিল্পকলা একাডেমির সংগীতশিল্পী। একাডেমি চত্বরে চলছে পিঠা উত্সব। উৎসবের সঙ্গে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। তারই মহড়া চলছে।

একটু সামনে যেতেই চিত্রশালা ভবনের কাছে দেখা গেল বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশাল ফটক। জিজ্ঞেস করতেই একজন বললেন, ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে ঢাকা আর্ট সামিট। সেখানে ঢোকার জন্য তৈরি হচ্ছে মনোরম এই প্রবেশদ্বার। চিত্রশালার ভেতরে গ্যালারিগুলোতে চলছে ধোয়ামোছা ও রং করার কাজ। ঢাকা আর্ট সামিট চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

একাডেমির মাঠজুড়ে সাদা কাপড়ে মোড়া ছোট ছোট স্টল। পিঠাবাড়ি ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ স্বাদ পিঠাঘর, সজীব মৌ খামার, রাজবাড়ী পিঠাঘর, টাঙ্গাইল শিরিন পিঠাঘরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার নানা স্বাদের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে সেখানে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এই উত্সব।

জাতীয় নাট্যশালার দিকটায় অনেকেই চায়ের কাপে মুখ দিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। টিকিট কাউন্টারেও দেখা গেল টিকিট বিক্রি করতে। দুটি নাটক চলছিল সেদিন। নাট্যশালার বাইরে দেয়ালের গায়ে সাঁটানো বিভিন্ন ব্যানার দেখে বোঝা গেল, এখন নাট্যকর্মী সংগ্রহের মৌসুম চলছে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করতে পারেন। নাট্যশালার মহড়াকক্ষগুলো ঘুরে পাওয়া গেল একটি দলকে। সংস্কার নাট্যদল বশীকরণ নাটকের মহড়া করছে। দলপ্রধান এন ডি চঞ্চল বলেন, নাটকের প্রদর্শনী আছে সামনে। এখন দলে নতুন নাটকের জন্য নাট্যকর্মী নিচ্ছেন। পাণ্ডুলিপি ও নির্দেশক চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এরপরই নতুন নাটকের কাজে নেমে যাবেন।

নাট্যশালার লবিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসা ছিলেন কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে একজন বেশ মনোযোগ দিয়ে একটি পাণ্ডুলিপি পড়ছেন। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুদুল্লাহ আল মামুন। বন্ধুদের নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে একটি আবৃত্তি প্রযোজনা নির্মাণ করছেন। তারই মহড়া করবেন এখানে। তিনি এসে পড়েছেন, এখন অন্যদের জন্য অপেক্ষা।

প্রতিদিনের যাপিত জীবন থেকে বেরিয়ে একটু সময়ের জন্য আত্মার খোরাক মেটাতে এভাবে অনেকেই আসেন শিল্পকলা একাডেমিতে। নানা কাজের ভিড়ে চুপসে যাওয়া জীবনটাকে একটু ফুরফুরে করতে কোনো এক সন্ধ্যায় আপনিও ঘুরে আসতে পারেন শিল্পকলা চত্বরে।