পিরিয়ড খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়

>

ধবধবে সাদা টপ আর কালো রঙের ট্রাউজারে এলেন বলিউডের ‘ফ্যাশন কুইন’ অভিনেত্রী সোনম কাপুর। আর বালকি পরিচালিত, টুইঙ্কেল খান্না প্রযোজিত বহু প্রতীক্ষিত ছবি প্যাডম্যান-এ দেখা যাবে অনিল কাপুর তনয়াকে। আরও অভিনয় করেছেন অক্ষয় কুমার ও রাধিকা আপ্তে। ছবিটি ভারতে মুক্তি পাবে আগামীকাল। এর আগে এক শীতের দুপুরে বলিউড অভিনেত্রী সোনম কাপুরের মুখোমুখি হন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য।

সোনম কাপুর
সোনম কাপুর

‘প্যাডম্যান’ ছবির কোন দিক আপনাকে আকৃষ্ট করল?

চার-পাঁচ বছর আগে ‘টেড টক’-এ আমি অরুণাচালম মুরুগানানথমের জীবনের কাহিনি শুনি। তাঁর গল্প আমাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। তাঁর ভালোবাসার কাহিনি আমাকে দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ করে। একজন সাধারণ মানুষ তাঁর ভালোবাসার মানুষের জন্য উদ্ভাবক হয়ে উঠলেন। বালকি যখন আমাকে প্যাডম্যান-এর কথা বলেন, আমি লাফিয়ে উঠি। একজন সফল ব্যক্তির পেছনে নারী বা পুরুষ থাকে। আমি এই ছবিতে সে রকমই একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। এমন একটা চরিত্র না করে থাকা যায়?

শুনেছি, ‘নিরজা’ ছবিতে কাজ করার সময় আপনি এয়ার হোস্টেস হওয়ার প্রশিক্ষণ নেন। এই ছবিতে ‘রিয়া’ হয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?

হ্যাঁ, ‘নিরজা’ হয়ে ওঠার জন্য আমি রীতিমতো প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। শুধু সার্টিফিকেট পাওয়াটাই বাকি ছিল। প্যাডম্যান ছবির জন্য আমি প্রায় ছয় মাস তবলা শিখেছি। ছবিতে আমি একজন তবলাবাদক। দু-তিনটি দৃশ্যে আমাকে তবলা বাজাতে দেখা যাবে। ভীষণই কঠিন কাজ ছিল। তবলা শেখার জন্য হাতের নখ সব কেটে ফেলতে হয়েছিল। আমি কত্থক শিখেছিলাম। তাই তাল, বোল সম্পর্কে আগে থেকে জ্ঞান ছিল। তবে পা দিয়ে তো আর তবলা বাজানো যায় না। তাই রীতিমতো তালিম নিতে হয়েছিল। এখনো একটু-আধটু তবলা বাজাতে পারি।

এই অঞ্চলে িপরিয়ড নিয়ে এখনো অনেক ট্যাবু আছে। শুটিং করতে করতে এ রকম কোনো ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন?

দিল্লি, মুম্বাইয়ের মতো শহরে এখনো অনেক কুসংস্কার আছে। অথচ মুম্বাইকে আমরা আধুনিক শহর হিসেবে জানি। ভারতের সেরা শহরেরই এই হাল। প্যাডম্যান ছবির শুটিংয়ের সময় অনেকে এই প্রজেক্টে কাজ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। মেয়েদের িপরিয়ড নিয়ে ছবিতে তাঁরা কোনোভাবেই কাজ করতে চান না। ভাবুন, আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি! সেই জায়গায় গ্রামগঞ্জে এটা নিয়ে ট্যাবু থাকা তো স্বাভাবিক। ভারতের মাত্র ১২ শতাংশ মেয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে। সত্যি আমরা এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছি।

আর্থিক সংগতি বড় সমস্যা?

না, সচেতনতা এ ক্ষেত্রে সমস্যা বলে আমি মনে করি। যারা স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার জানে না, তারা এখনো ছাই, মাটি, নোংরা কাপড়, তুলা, পাতা, ঘাস—পিরিয়ডের সময় এসব ব্যবহার করে। এ সময় ব্যবহৃত কাপড় নোংরা জলে ধুয়ে আবার তারা সেই কাপড় ব্যবহার করে। চরম অস্বাস্থ্যকর। এ কারণে তাদের নানা রোগের শিকার হতে হয়।

একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন, আপনার প্রথম দিনের পিরিয়ডের কথা যদি বলেন। রাধিকা আপ্তে বলেছেন, তাঁর বাড়িতে প্রথম দিন সেলিব্রেশন হয়েছিল।

(সশব্দে হেসে) না, না, ব্যক্তিগত কেন? িপরিয়ড খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। আমার িপরিয়ড আর পাঁচজনের চাইতে একটু দেরিতে হয়েছে। আমার বান্ধবীদের আগেই হয়ে যায়। এ কারণে খুব আপসেট থাকতাম। বন্ধুরা যখন এক হয়ে নিজেদের িপরিয়ড নিয়ে কথা বলত, তখন খুব খারাপ লাগত। মাকে খুব বিরক্ত করতাম। বারবার জিজ্ঞেস করতাম, আমার সব বান্ধবীর িপরিয়ড হয়ে গেছে, আমার কেন হয়নি? মা আমাকে বুঝিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘চিন্তা কোরো না। কারও কারও একটু দেরিতে হয়। তোমারও হবে।’ সত্যি তা-ই হলো। ১৫ বছর বয়সে আমার প্রথম িপরিয়ড হয়। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ভীষণই খুশি হয়েছিলাম আমি।

এ সময় আপনার বাড়ির পরিবেশ কেমন থাকত? বাবা অনিল কাপুরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতেন?

খাবারের টেবিলে বসে আমরা সব বিষয় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করি। তবে হ্যাঁ, িপরিয়ড নিয়ে খাবারের টেবিলে বসে আলোচনা করিনি। (হেসে) তবে বাবার সঙ্গে িপরিয়ড নিয়ে কথা হতো। কিন্তু তিনি নিজের শুটিংয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতেন। এমনকি ভাই হর্ষের সামনেও এ নিয়ে কথা হতো। আমাদের বাড়িতে িপরিয়ড নিয়ে কোনো কুসংস্কার ছিল না। স্কুলে িপরিয়ড সম্পর্কে শিক্ষকেরা আগেভাগে সব বোঝাতেন।

একটি অনুষ্ঠানে আপনি বলেছিলেন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এসে দেখলেন ছেলেমেয়ের মধ্যে ভেদাভেদ আছে...

একদমই তাই। আমি একটা সুস্থ পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছি। বাড়িতে ছেলেমেয়ে আলাদা করে দেখা হয় না। আমি বাড়ির বড় মেয়ে। তারপর বোন রিয়া আসে। রিয়ার পর হর্ষবর্ধন। এমনকি আমার বাবা তৃতীয় সন্তানও মেয়ে চেয়েছিলেন। হর্ষর থেকে আমাদের দুই বোনকে কখনো আলাদা করে দেখা হয়নি। আমরা ৫০০ টাকা করে হাতখরচ পেলে হর্ষও তা-ই পেত। বাড়ির বড় মেয়ে বলে আমার আলাদা ঘরের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এসে আমি রীতিমতো অবাক হই। এখানে ছেলেমেয়ের মধ্যে ভেদাভেদ করা হয়। নায়ক মানে হোটেলের বড় রুম পাবে আর নায়িকা মানে ছোট রুম বরাদ্দ। নায়ককে বেশি পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। নায়িকা কখনোই বেশি পারিশ্রমিক পেতে পারে না। আমার বাবা-মা আমার সব সিদ্ধান্তকে সব সময় সম্মান দিয়েছেন। আমি বিয়ে করি, না করি, কাকে করি—এ-সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্তে তাঁরা আমার পাশে আছেন।

বিয়ের প্রসঙ্গ যখন উঠল, তখন জিজ্ঞেস করেই ফেলি। আপনার বিয়ে নিয়ে বলিউডে নানান গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আপনি নাকি বিয়ে করতে চলেছেন এ বছর?

(মিষ্টি হেসে) এ সম্পর্কে আমি এখন কিছু বলতে চাই না। অনেকে এই প্রশ্ন করছেন। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বিষয়ে এখন কথা বলব না।

টুইঙ্কেল খান্নার কলামে এই বিষয় প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এ নিয়ে গল্পও লেখেন পরে। এই ছবির প্রযোজকও টুইঙ্কেল। তাঁর থেকে ছবিসংক্রান্ত কিছু পরামর্শ কি পেয়েছেন?

টুইঙ্কেল মানে টিনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক বহু পুরোনো। প্রথমে টিনাই আমাকে এই ছবিটার কথা বলে। প্যাডম্যান-এর আইডিয়া টিনারই। ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন বালকি। আর পরিচালকও তিনি। তাঁরা দুজনেই এ বিষয়ের ওপর অনেক গবেষণা করেছেন। আমি, বালকি, অক্ষয় ছবি নিয়ে অনেক কথা বলতাম। সেখানে টিনা থেকে একটা কথাও বলত না। কারণ সে জানে প্রযোজকের সীমা কতখানি। পরিচালকই ছবির শেষ কথা।

অক্ষয় ও টুইঙ্কেলকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাঁদের দাম্পত্য বিষয়ে কিছু বলবেন?

হ্যাঁ হ্যাঁ। একটা কথাই বলতে পারি, অক্ষয় টিনাকে খুব ভয় পায়।

অক্ষয় আমাকে বলেছেন, আপনি তাঁর কাছে প্যারিসফেরত নায়িকা।

জাস্ট মজা করে বলেছে। আমি একদম মুম্বাইবাসী। প্যারিসের কখনোই নই। হিন্দি, ইংরেজি জানি। ফরাসি ভাষা জানি না।

রণবীর কাপুরের সঙ্গে ফিল্মি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। দশ বছর পর আবার রণবীরের সঙ্গে ‘দত্ত’ ছবিতে কাজ করছেন। কেমন লাগছে?

বিধু বিনোদ চোপড়ার প্রযোজনা সংস্থায় দুটি ছবিতে কাজ করছি, দত্ত আর এক লেড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা। তবে আমি তাঁদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ যে ছবির বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারব না। আমি খুব দুঃখিত।

মনে হচ্ছে, এ বছর আপনি আপনার লক্ষ্যের কাছাকাছি যাবেন।

আমি নিজেও জানি না আমার লক্ষ্য কী? আমি কেবল সফরটা উপভোগ করতে চাই। শেষে কী ফল পাব, সেটা না ভাবাই উচিত। ফলের আশা করলেই জীবনটা দমবন্ধকর হয়ে ওঠে। নিজের এই যাত্রা নিয়ে কখনো বেশি উদ্বিগ্ন হই না।

দশ বছরের ফিল্মি সফরে সফলতা ও ব্যর্থতাকে কীভাবে দেখেন? আর খ্যাতি?

আমার কাছে দুটিই অবাস্তব। দুটির কোনো স্থায়িত্ব নেই জীবনে। আর কী যেন বললেন, খ্যাতি? খ্যাতি তো আরও বেশি অবাস্তব। অনেকটা পদ্মপাতায় জলের মতো।