'সালমান খানের পথ চেয়ে বসে থাকতাম'

‘বিগ বস ১১’ অনুষ্ঠানে সালমান খানের সঙ্গে শিল্পা শিন্দে
‘বিগ বস ১১’ অনুষ্ঠানে সালমান খানের সঙ্গে শিল্পা শিন্দে
‘বিগ বস ১১’ জয়ী হয়েছেন শিল্পা শিন্দে। ১০৫ দিন ‘বিগ বস’ বাড়িতে থেকে বাকি ১৮ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল ‘ভাবি জি ঘর পে হ্যায়’-এর এই ‘ভাবিজি’। শিল্পা শিন্দের হাতে ট্রফি তুলে দেন এই প্রতিযোগিতার সঞ্চালক বলিউড তারকা সালমান খান। পুরস্কার হিসেবে শিল্পা পেয়েছেন ৪৪ লাখ রুপি। গত ১৪ জানুয়ারি ‘বিগ বস ১১’ প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন শিল্পা শিন্দে


সিরিয়ালের ‘ভাবি’ থেকে ‘শিল্পা’। এই সফর কেমন উপভোগ করছেন? 

দারুণ লাগছে। এত দিন সবাই আমাকে টিভি সিরিয়াল ‘ভাবি জি ঘর পে হ্যায়’-এর ভাবি হিসেবে জেনেছে। এখন আমার নিজের নামে চেনে। ‘বিগ বস ১১’ চলার সময় একবার আমাদের মলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে সবাই ‘শিল্পা’ ‘শিল্পা’ বলে চিৎকার করেছে। দারুণ লেগেছিল। আমি ফিরে এসে আনন্দে কেঁদেছি। এত দিন যেন আমি সিরিয়ালের চরিত্রের মাঝে বন্দী ছিলাম। আমার নামে কেউ আমাকে জানত না। ‘বিগ বস’ হাউসে এসে যেন আমার পুনর্জন্ম হয়েছে।

এমনটা কেন মনে হয়েছে?
আসলে ডেইলি সোপ করলে নিজেদের পরিচিতি তৈরি হয় না। সিরিয়ালগুলোতে আমাদের নাম দেখানো হয় না। তাই ঠিক করেছি, টিভি সিরিয়ালে আর ফিরব না। আমি নিজেকে আর চরিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। সবাই এখন আমাকে নামে চেনে, সেটাই ধরে রাখতে চাই। গত কয়েক দিনে অনেক অফার এসেছে, আমি তা ফিরিয়ে দিয়েছি। তবে এটা ঠিক, আমি আজ যা, তার পেছনে অবশ্যই ধারাবাহিকের অবদান আছে।

আগামী দিনে কী করতে চান?
আমি কপিল শর্মা, ভারতী, আন্নু কাপুর, শেখর সুমনের মতো স্ট্যান্ডআপ কমেডি শো করতে চাই। ‘টক শো’ সঞ্চালনা করার ইচ্ছে আছে। সিনেমা করতে চাই। এমনকি কয়েকজন মিলে একটা ওয়েব সিরিজ করার কথা ভাবছি।

শিল্পা শিন্দে
শিল্পা শিন্দে

‘ঝলক দিখলা যা’, ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’-এর মতো রিয়্যালিটি শোতে অংশ নিতে চান?
রিয়্যালিটি শোতে আমি বিশ্বাসী নই। অনেকে বলেছে, এ ধরনের রিয়্যালিটি শোতে নিজের নামে পরিচিত হওয়া যায়। আসলে আমি এমন একটা রিয়্যালিটি শোতে অংশ নিতে চেয়েছি, যার মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি হয়। তা-ই হয়েছে। ‘ঝলক দিখলা যা’ থেকে আগেও অফার এসেছিল। তবে অক্ষয় কুমার যখন ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’ সঞ্চালনা করতেন, তখন ভালো লাগত। ‘বিগ বস’-এর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমি এমন কিছু করতে চাই, যা আমার আগের ইতিহাসকে ছাপিয়ে যাবে।

‘বিগ বস’ হাউসে আপনাকে রান্নাঘরে বেশি সময় দেখা যেত। ‘কুকরি শো’ সঞ্চালনা করতে চান?
এখনো তেমন কোনো প্রস্তাব পাইনি। এ ধরনের প্রস্তাব পেলে অবশ্যই করব। আমি রান্না করতে আর সবাইকে খাওয়াতে ভালোবাসি। নিজেও খেতে ভালোবাসি।

‘বিগ বস’ প্রতিযোগিতায় হাতিয়ার হিসাবে হাতা-খুন্তি বেছে নিয়েছিলেন?
‘বিগ বস’-এর বাড়িতে আমাকে তা নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। আমি নাকি সবাইকে ভালো ভালো খাবার খাইয়ে মন জয় করছি। দর্শকদের ভালোবাসা পাচ্ছি। কিন্তু ‘বিগ বস’-এর আগের পর্বগুলোতে অনেক ভালো রাঁধুনি ছিলেন। তাহলে তাঁরা কেন বিজয়ী হননি?

আপনার রান্নার জাদুতে কে কে বেশি ঘায়েল হয়েছে?
সবাই আমার রান্না করা খাবার খেতে পছন্দ করত। তবে পুনিশ শর্মা আমার রান্নার বেশি ভক্ত ছিল। এমনকি ‘বিগ বস’ হাউসের বাইরে আসার পরও পুনিশ আমার রান্না করা খাবার খাওয়ার জন্য আবদার করেছে। তবে ওই হাউসের মজা ছিল, আমার রান্নার প্রশংসা সবাই একসঙ্গে করেছে। আবার আমার নিন্দাও সবাই একসঙ্গে করেছে। তবে ‘বিগ বস’ হাউসে আমি ছাড়া অনেকেই ভালো রান্না করত।

‘বিগ বস’ হাউসে যে শিল্পাকে সবাই দেখেছে, বাস্তবে আপনি তা-ই?
একদম তাই। আমার হাসি, কান্না, অভিমান, ঝগড়া, মাস্তি সবকিছুই আসল। কারণ, ‘বিগ বস’ হাউসে অভিনয়ের কোনো সুযোগ নেই। ‘বিগ বস’-এর কাস্টিং ডিরেক্টর আনন্দ আমার বাসায় প্রথম এসেই এ কথা বলে দেন। তিনি ‘বিগ বস’-এর প্রথম পর্ব থেকে আছেন। এই হাউসে প্রায় দুই শ ক্যামেরা আমাদের প্রতিনিয়ত ফলো করেছে। তাই মিথ্যার কোনো স্থান ছিল না। আর আমি ভেবে নিয়েছিলাম, আমি যা, তাই থাকব ‘বিগ বস’-এর বাড়িতে। আর আনন্দ এটাও বলেছিলেন, সালমান নিজে প্রতিটা পর্ব দেখেন। পর্দায় তিনি যা যা বলেন, তা তাঁর নিজের কথা। কিছুই চিত্রনাট্য অনুযায়ী নয়। ‘বিগ বস’ থেকে সালমানকে কখনোই বলে দেওয়া হয় না যে অমুকের সম্পর্কে ভালো বলুন, আর অমুকের সম্পর্কে খারাপ বলুন।

‘বিগ বস’ হাউসের সবচেয়ে বেশি কী মিস করছেন?
অনেক কিছু। সেদিন আমার ভাইকে বলেছিলাম, ‘বিগ বস’-এর সেই বাড়িটা তো আর নেই। ওটা একটা সেট ছিল। এত দিনে নিশ্চয় ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। ভেবে চোখে জল চলে আসে। খুব যেতে ইচ্ছে করে সেই বাড়িতে। সেই সোফা, সেই বিছানা, রান্নাঘর, সালমানের বাড়ির খাবারসহ ‘বিগ বস’-এর বাড়ির প্রতিটি কোনা মিস করি। আর সবচেয়ে বেশি মিস করি ‘বিগ বস’-এর সেই কণ্ঠস্বরকে। অদ্ভুত জাদু সেই কণ্ঠে!

আর কাকে বেশি মিস করেন?
অবশ্যই সালমান খানকে! প্রতি শনিবার ‘বিগ বস’ হাউসে সালমানের পথ চেয়ে বসে থাকতাম।

শিল্পা শিন্দে
শিল্পা শিন্দে

সালমানের সঙ্গে এত দিনের কাজ কেমন ছিল?
দুর্দান্ত। স্বপ্নেও ভাবিনি সালমানের সঙ্গে একই পর্দায় থাকব। তিনি বড় মনের মানুষ। সালমানের বাড়ি থেকে প্রতি শনিবার নিয়ম করে প্রচুর খাবার আসত আমাদের জন্য। সে এক রাজকীয় আয়োজন। কিন্তু আমি অনুভব করতাম, সালমানের বাড়ির ‘ডাব্বা’য় যেন ভালোবাসা ভরা থাকত। ‘ডাব্বা’য় ভরা খাবারের সঙ্গে যেন তাঁর পরিবারের ভালোবাসা মিলেমিশে এক হয়ে যেত।

‘বিগ বস’ হাউসের বাইরে এসে প্রথম কী করেছেন?
তখন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। কী হচ্ছে, কী ঘটছে—কিছুই যেন বুঝতে পারছি না। অনেকে সাক্ষাৎকার দিয়েছি। মনে হচ্ছিল, সবকিছু যেন ভুলে গেছি। এমনকি নিজের মোবাইল ফোনটা কীভাবে চালাতে হয়, সেটাও। আসলে সাড়ে তিন মাস সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘরবন্দী হয়ে থাকার অদ্ভুত এক যন্ত্রণার ভার বয়ে বেড়াচ্ছিলাম।

এই যন্ত্রণা থেকে বের হওয়ার কী করেছেন?
কিছু করিনি। তবে আমার ফ্যানরা খুব সহযোগিতা করেছে। তাদের অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে আমাকে ভরিয়ে দিয়েছে। ফ্যানদের কাছ থেকে প্রচুর উপহার পেয়েছি। এখনো তাদের ভালোবাসাভরা চিঠি পাই।

কোন উপহার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে?
সব উপহার আমার কাছে মূল্যবান। তবে আমার এক অনুরাগীর কথা বলতেই হয়। টুইটারে আমার যত ফ্যান আছে, তাদের ছবি ও সংগ্রহ করে। এরপর আমার ট্রফি হাতে ছবির সঙ্গে সেসব ফ্যানের ছবি কোলাজ করে একই ফ্রেমে এনে আমাকে উপহার দেয়। বড় বড় তারকাকে এ ধরনের উপহার দেওয়া হয়। তাদের ভালোবাসাভরা চিঠি পড়ে চোখে জল চলে আসে। এসব চিঠি পড়ে এত কেঁদেছিলাম, ‘বিগ বস’ হাউসেও আমি এত কাঁদিনি।

বিয়ের খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছেন। একাকিত্বে ভোগেন?
আমি খুব ভালো আছি। সুখে আছি। আমি দেখেছি লিভ ইন রিলেশনশিপে থাকার সময় সম্পর্ক ঠিকঠাক আছে। কিন্তু যেই বিয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়ে, তখনই যেন গন্ডগোল শুরু হয়। অনেক সময় দেখেছি, একজনই সব ত্যাগ করছে। সমঝোতা করছে। সম্পর্ক যেন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, বিয়ে শুধু দুটি মানুষের মধ্যে হয় না, দুটো পরিবারের মধ্যে হয়। একটা বিয়ে ভাঙা মানে অনেক সম্পর্ক ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া। আমি এ রকম অনেক বিয়ে ভাঙতে দেখেছি। তাই এই প্রথা থেকে কোথাও ভরসা উঠে গেছে। তবে বিয়ে নিশ্চয় জীবনের খুব সুন্দর একটা অধ্যায়। অনেকে আবার সুখেও আছেন।

শিল্পা শিন্দে
শিল্পা শিন্দে

আপনার বাবা নাকি চাননি আপনি অভিনয়ে করুন।
একদমই তাই। বাবা চেয়েছিলেন আমি পড়াশোনা নিয়ে থাকি। আমার বাবা হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন। তাই স্বাভাবিকভাবে বাবার পক্ষে এটা মানা সম্ভব ছিল না যে তাঁর মেয়ে অভিনেত্রী। বাবাকে মিথ্যে বলেছিলাম যে আমি গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি। ‘বিগ বস’-এর বাড়িতে ‘কনফেশন’-এর সময় আমি তা স্বীকার করি। তবে এই নয় যে আমার বাবা আমাকে কখনো সাপোর্ট করেননি।

আপনার স্বপ্ন কী?
ভালো অভিনেত্রী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। আর জাতীয় পুরস্কার জেতা। আমি স্মিতা পাতিল, সোনালি কুলকার্নির বড় ভক্ত।

নতুন কী শিখতে চান?
আমি মনে করি শেখার কোনো বয়স নেই। তাই আমার ইচ্ছে ছবি পরিচালনার কাজ শেখা। আর সংগীত আমার খুব প্রিয়। তাই গান শেখার ইচ্ছা আছে।