তাঁরাও 'সুপারস্টার'

দীপিকা পাড়ুকোন
দীপিকা পাড়ুকোন

‘সুপারস্টার’ কথাটার প্রচলন শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। অভিধানে এই শব্দের মানে হলো, যে ব্যক্তি তাঁর পেশার মাধ্যমে অসাধারণ অবদানের জন্য ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। বাংলায় এককথায় বলা যায় ‘মহাতারকা’। তারকা হতে যতটা না কসরত করতে হয়, মহাতারকা হতে করতে হয় তার চেয়েও বেশি। থাকতে হয় অনন্য প্রতিভা। যেমনটা ছিল সদ্য প্রয়াত শ্রীদেবীর। ভারত তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছিল বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টার হিসেবে। শ্রী কার বিপরীতে অভিনয় করবেন সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়নি পরিচালকদের। বরং কাকে শ্রীয়ের সঙ্গে মানাবে সেটা নিয়ে ভাবতে হতো। অনেক পুরুষ অভিনেতার চেয়ে এই এক নারী শিল্পীর ‘সম্মানী’ ছিল অনেক বেশি। তাঁকে টেক্কা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না সে সময়। তবে নব্বইয়ের দশকে এসে অনেক চলচ্চিত্র সমালোচক মনে করেছিলেন জয়াপ্রদা কিংবা মাধুরী হয়তো শ্রীদেবীর উজ্জ্বলতাকে ম্লান করে দেবেন। তাঁরাও যাঁর যাঁর মতো সফল হয়েছেন, কিন্তু কয়লা পুড়ে হীরা হয়ে ওঠা শ্রীয়ের জ্যোতিকে কমাতে পারেননি একটুও, আজও না। ৩০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রী আজ কোটি মানুষের হৃদয়ের মহাতারকা।

শ্রীদেবী কাপুর আয়াপ্পানের পথে হেঁটে চলা এই সময়ের সুপারস্টার ডাকা হয় দীপিকা পাড়ুকোন ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে। দুজনেই আজ শুধু বলিউডে না, হলিউড আর বাস্তব জীবনেও সুপারস্টার হয়ে উঠেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে তাঁরা শুধু বলিউডের না, তাঁরা ‘গ্লোবাল সুপারস্টার’।

দীপিকার জয়যাত্রা
জাতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলেও দীপিকার মন ভরছিল না। পা রাখলেন মডেলিংয়ের জগতে। ধীরে ধীরে ওপরে ওঠা। চলচ্চিত্রে আসা। কবছর হলো? মাত্র ১০। প্রথম ছবিতেই তাঁর উপস্থিতি জানিয়ে দেয় কী করতে পারেন তিনি। পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘খান’-দের সঙ্গে জুটি বাঁধার দৌড়ে নেই দীপিকা পাড়ুকোন। তারপরও সফল। তাঁর অভিনীত শেষ পাঁচ-ছয়টি ছবির কথাই চিন্তা করুন। কিংবা শুধু শেষ ছবিটার কথা। পদ্মাবত-এ পুরো ছবিজুড়ে ‘খিলজি খিলজি’ রব থাকলেও রেশ রয়ে গেছে দীপিকার, প্রচারণা থেকে ছবির শেষ দৃশ্য পর্যন্ত। তাঁর ছবি যে ২০০ কোটির ক্লাবে ঢুকে যায়, এ নিয়ে বিতর্ক চলে না কোনো। কিছু অসফল ছবি যে তাঁর ঝুলিতে নেই, তা নয়। কিন্তু এরপরও তাঁর দক্ষতা মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছে। ছড়িয়েছে হলিউড পর্যন্ত। নিজ দেশের ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হলিউডের ব্যবসা সফল ছবি ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস-এর সপ্তম কিস্তি। পরে অবশ্য ট্রিপল এক্স: জেন্ডার কেজ দিয়ে হলিউডবাসীকেও নিজ প্রতিভার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কিছু ছবি সফল না হলেও হতাশ হয়ে যাননি। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত খেলোয়াড় ছিলাম বলে আমি সহজে হার মানি না। আমি একজন যোদ্ধা।’ এ জন্যই হয়তো পুরুষশাসিত বলিউডেও দীপিকা পাড়ুকোনের মতো অভিনেত্রী সুপারস্টার। তবে নিজেকে মোটেও তারকা মনে করেন না তিনি। তাঁর মতে, ‘আমি মনে করি না আমি একজন তারকা। আমিও আমার বয়সী অন্য মেয়েদের মতো। অন্যরা হয়তো অফিসে কাজ করছে অথবা অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত। আমি মনে করি না আমি ভিন্ন কিছু করছি। আমিও কাজই করছি।’

চলচ্চিত্রের বাইরেও দীপিকা সুপারস্টার। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার জন্য নিজে মঞ্চে পরিবেশনা করে উপার্জিত অর্থ দান করেছেন। ম্যারাথন দৌড়ে আয় করা অর্থ দান করেছেন এনজিওতে। মহারাষ্ট্রের এক গ্রামে ক্যাম্পেইন করেছেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য। তিনি একজন উদ্যোক্তাও। নারীবাদী এই নায়িকা নারীদের জন্য শুরু করেছেন নিজের ফ্যাশন লাইন। তিনি ভারতীয় এনজিও ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির শুভেচ্ছাদূত।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

প্রিয়াঙ্কার বেড়ে ওঠা
নিজেকে সব সময় ‘ড্যাডি’স লিটল গার্ল’ ভাবেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। কিন্তু বাবার আদুরে ছোট্ট মেয়েটি তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে করতে অনেক বড় হয়ে গেছে। পরলোক থেকে হয়তো আরও আরও আশীর্বাদ করে দিচ্ছেন প্রিয়াঙ্কার বাবা, যেন আরও বড় হন তিনি। হয়েছেন, সুপারস্টার। কিছুটা তো তাঁর বাবাও দেখে যেতে পেরেছেন। এখন পুরো দুনিয়া দেখছে। ছোটখাটো মডেলিং দিয়ে শুরু। এরপর মিস ইন্ডিয়া, মিস ওয়ার্ল্ড, বলিউড, সংগীত জগৎ আর হলিউড। এত অভিযানের পর আজ প্রিয়াঙ্কা সুপারস্টার। তাঁর জন্যও পরিচালকদের ভাবতে হয় না কোন ‘খান’-এর সঙ্গে অভিনয় করবেন। সিএনএন-আইবিএন তাঁকে বলছে ‘এই সময়ে সবচেয়ে ক্ষমতাধর অভিনেত্রী যিনি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে যেকোনো চরিত্র নিয়ে পরীক্ষা দিতে লজ্জা পান না’। টাইমস অব ইন্ডিয়া তাঁকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলে আখ্যা দিয়েছে। ২০১২ সালে চলচ্চিত্র সমালোচক সুভাষ কে. ঝা তাঁকে শ্রীদেবীর পরের সময়কার সেরা অভিনেত্রী বলেছেন আর বরফি ছবিতে তাঁর চরিত্রকে বলিউডের সেরা চরিত্র হিসেবে প্রশংসা করেছেন। যুক্তরাজ্যের ম্যাগাজিন ইস্টার্ন আই প্রিয়াঙ্কাকে চারবার পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় নারীর খেতাব দিয়েছে। ২০১১ সালে পিপল ম্যাগাজিন তাঁকে দিয়েছে বর্ষসেরা পোশাকের নারীর খেতাব। ২০১৬ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে রেখেছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায়। ইউনিসেফের সঙ্গে কাজের ফলস্বরূপ গত বছর ভ্যারাইটি তাঁকে দিয়েছে ‘পাওয়ার অব উইমেন’ পুরস্কার। সবচেয়ে সুন্দর নারীর তালিকায় পিপল রেখেছে প্রিয়াঙ্কার নাম। গত বছর ফোর্বস ম্যাগাজিনও তাঁকে ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় স্থান দিয়েছে। হাফিংটন পোস্ট বলেছে ২০১৫ সালে টুইটারে সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।

বলিউডের পাশাপাশি হলিউডের চলচ্চিত্র ও নাটকে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন সাবেক এই বিশ্ব সুন্দরী। কোয়ান্টিকো সিরিজ দিয়ে পশ্চিমের ঘরে ঘরে চেনা নাম এখন প্রিয়াঙ্কা। সঙ্গে থেমে নেই তাঁর সংগীতচর্চা। তবে এসবের বাইরেও সুপারস্টার এই নারী। কাজ করছেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে। ভারতের উত্তর প্রদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের সাহায্যে কাজ করছেন। বয়স্ক শিক্ষার জন্যও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন তিনি। পোলিও দূর করতে ভারত সরকারের স্বেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করছেন। তাঁর পদচারণ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস পর্যন্ত। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নৈশভোজে যোগ দিয়েছেন।

ভারতীয় এই নারীর প্রভাব এখন সারা বিশ্বে। একেই কি বলে ‘বিউটি উইথ দ্য ব্রেইন’?

সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
আইএমডিবি, হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আল-জাজিরা অবলম্বনে