দেশের সবাইকে জাগাতে চান মোশাররফ

নারী নির্যাতন, শিশু ধর্ষণ, অটিজম, বাল্যবিবাহ, সড়ক দুর্ঘটনা, মেয়েদের ঋতুকালীন সমস্যা, যানজট, বৃহন্নলা, পরিবেশদূষণসহ নানা সমস্যা নিয়ে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে কাল রাত সাড়ে আটটায় শুরু হচ্ছে ‘বিএসআরএম-জাগো বাংলাদেশ’। ১৩ পর্বের এ অনুষ্ঠানের পরিচালক আরিফ এ আহনাফ। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। অনুষ্ঠানটির প্রচার উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিকেলে চ্যানেলটির তেজগাঁওয়ের নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এর আগে পরে অনুষ্ঠানটি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন মোশাররফ করিম।

‘জাগো বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হলেন কীভাবে?
কিরণ চন্দ্র রায়ের গান শুনলে মনে হয়, এ রকম যদি আমি গাইতে পারতাম, এটা আমার স্বপ্ন। আমি জানি যে এটা সম্ভব নয়। তেমনি উপস্থাপনা বা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হওয়ার একটা ভাবনা আমার মধ্যেও ছিল। সমাজের নানা বিষয় নিয়ে যদি কাজ করা যায় আর কি। একই সময়ে এ-ও ভাবলাম যে এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আহনাফ গেল, আমিও ভাবছিলাম, এ রকম যদি কিছু করা যায় যায়, মানুষকে বলা, যেমন অনুষ্ঠানের কথা আমার মনের মধ্যে বাজছিল, তেমনি একটা প্রস্তাব। আমার মনে হলো যে আমি করি। মনের দাবি, কিছুই করার নেই। আমরা আমাদের রাস্তাঘাট ও জীবনযাপনে এত অসংগতি দেখি, সেসব অসংগতি নিয়ে ভাবতে গিয়ে দেখলাম, কিছু ঠিক করতে গেলে টাকা লাগবে, আর কিছু ঠিক করতে গেলে কোনো টাকাই লাগবে না। আমার মনের মধ্যে একটা বিশ্বাস সব সময় আছে, এ দেশের মানুষ এ দেশকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু তারা শুধু একটা অদ্ভুত অভ্যস্ততার মধ্যে আটকে গেছে। একটি রাস্তা বহুদিন ধরে ভেঙে পড়ে আছে, তা দিয়ে আমরা চলছি-ফিরছি—কিছুই বলছি না। মশার চাষ হচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে—সবকিছুতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। এই অভ্যস্ততা থেকে জেগে ওঠা। আর এই অভ্যাসগুলো আমাদের অবশ করে ফেলেছে। এই জায়গা থেকে একটু সরে দাঁড়ানো। আচরণগত পরিবর্তন হলেই হয়। সবকিছু মিলিয়ে যদি একটু জেগে উঠতে পারি।

এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কাদের জাগাতে চেয়েছেন?
আমিসহ দেশের সবাইকে জাগাতে চাই।

কোন বিষয়গুলোতে জাগাতে চান?
আমরা এরই মধ্যে যেসব বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠান ধারণ করেছি, তাতে মনে হয়েছে, অনেক কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। বৃহন্নলাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করলাম। আমরা আমাদের অ্যাটিচুড দিয়ে মনে করার চেষ্টা করছি, তারা আমাদের সমাজের অংশ নয়। কিন্তু তাঁরাও তো মানুষ। আমাদের সমাজেরই মানুষ। একজন মানুষ মানেই তার মধ্যে সম্ভাবনা আছে, তাকে কাজে লাগানো যায়। সে-ও দেশের কাজে লাগতে পারে। সবার ভাবনা যেন তার প্রতি ইতিবাচক হয়। আমরা অ্যাসিড নিক্ষেপকারীকেও জাগাতে চাই। তাকে বলতে চাই, অ্যাসিড নিক্ষেপ করে কী লাভ হচ্ছে তার? আমরা সবাই মিলে এই দেশটা ভালো রাখলে যে সবার ভালো লাগবে, এটাই বোঝাতে চাই। এর চেয়ে বেশি করে বোঝাতে চাই, আমরা যে অভ্যস্ততার মধ্যে ডুবে যাই, তা থেকে জাগাতে চাই। আমরা প্রায়ই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলি, তা যে ঠিক নয়, তা থেকে জাগাতে চাই। যেখানে-সেখানে থুতু ফেলতে থাকি।

এ অনুষ্ঠানে শুধুই উপস্থাপনা করেছেন?
একটু বড় করে দেখলেই আসলে ভালো হয়। এটা আসলে দায়বোধ থেকে করা। তা না হলে করতাম না। উপস্থাপনা করার জন্য অনেকে অনেক সময় বলেছে, আমার মনে হয়েছে ঠিকঠাকমতো তা করতে পারব না। এটার ক্ষেত্রে মনে হয়েছে যে আমি যদি ঠিকঠাকমতো করতে না-ও পারি, আমি যদি ঠিকঠাকমতো কথা বলতে না-ও পারি, যেসব যোগ্যতা লাগে, তা যদি না-ও থাকে, আমি শুধু কথাগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারি, তাহলে কাজ হবে। আমার একটা দায়িত্ব পালন।

অনেক ধরনের মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে।
এত কাছাকাছি মেশার সুযোগ আগে হয়নি। লোকজন আমাকে যেভাবে পছন্দ করে, তাতে মানুষের সঙ্গে এভাবে মেশা আসলে হয়ে ওঠে না। ভিড় হয়ে যায়, বের হতে পারি না। এই যে মানুষগুলোর কষ্ট, দুঃখ দিয়ে থাকি—না বুঝে। মানুষকে এই জায়গাটায় নাড়া দিতে চাই। আমার কাছে মানুষকে কারণ ছাড়া কষ্ট দেওয়াটা বোকামি।